নওদাপাড়ার ট্রাক টার্মিনালে রাখা হয়না ট্রাক, রাখা হয় রাস্তায়

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে ১৯৯৮ সালে ট্রাক টার্মিনাল তৈরীর উদ্যোগ নেয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও এখনও তা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। শুধুমাত্র মেরামত ও গাড়ি তৈরির কাজ ছাড়া আর কোন কাজে আসেনা কোটি টাকার এই টার্মিনালটি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকটাই বেদখল হতে শুরু করেছে এটি।

এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এখনও রাস্তাই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে চালকদের কাছে। তবে কর্তৃপক্ষ একে অন্যের উপরে দায়িত্বের কথা বলে কেই কোন বক্তব্য দেয়নি।

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীতে ছোট-বড় মিলে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ট্রাক চলাচল করে। রাজশাহী মহানগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে ১৯৯৮ সালে ট্রাক টার্মিনাল তৈরীর উদ্যোগ নেয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)।

শহরের শেষ প্রান্তে সিটি বাইপাস এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমিতে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল তৈরি করা হয়। টার্মিনালটি তৈরী শেষে উদ্বোধন করেই আরডিএ তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গরুপে চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কখনই নেয়নি আরডিএ কর্তৃপক্ষ। যার কারণে ট্রাক চালকরা এটি ব্যবহার করছেনা। তারা রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখছে। পুরো নগরীজুড়েই যেন তৈরী হয়েছে ট্রাক স্ট্যান্ড।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৫শ’ ট্রাক ধারণ ক্ষমতার এই টার্মিনালটি দিন রাত ফাঁকা পড়ে থাকছে, অথচ শহর জুড়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক। এই ফাকা পড়ে থাকার সুযোগে নিয়ে অনেকেই এটি দখল করে নিচ্ছেন। সেখানে গড়ে উঠেছে ১০/১২টি ট্রাক গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে মেরামত ও বডি তৈরীতে ব্যস্ত এখানকার গ্রারেজ মেকানিকরা।

সেখানে কথা হয় তুহিন ওয়ার্কসপের মালিক মোহাম্মদ তুহিনের সাথে। তিনি বলেন, এখানে নেতারা তাদের বসিয়ে দিয়েছে। এখানে তো গাড়ি থাকে না। তাই এটি মেরামত করার জন্য এখানে রাখা হয়েছে। আমরা মাসিক টাকা দিয়ে থাকি। প্রতি মাসে গড়ে প্রতি দোকানে ১০ থেকে ২০টি গাড়ি সার্ভিসিং করা হয়।

আবার রাত হলেই এখানে নেমে আসে অন্য রকম দৃশ্য। স্থানীয়রা বলছে এখানে ট্রাক মালিক সমিতির নেতারাই এসব দোকান বসিয়েছে। তাদের কাছে থেকে মাসিক ভাড়াও আদায় করছে তারা। তবে এর থেকেও বেশি কিছু হয় রাতে আঁধার নামলে। রাত হলেই সেখানে বসে ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতাদের জুয়ার আসর। সেখানে প্রতিদিনই খেলা হয় জুয়া। এছাড়াও ফাঁকা হওয়ায় সেখানে সেবন করা হয় মাদক।

এদিকে অবহেলা আর অব্যবহৃত হবার কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হতে চলেছে ভবন ও অবকাঠামো। এসব ভবনের বিভিন্ন দিকে দেখা গেছে সেগুলোর করুন দশা। কোনটির আবার পলেস্তার খুলে পড়েছে। আবার কোনটির নেই দরজার ছিটকানি। নেই প্রধান গেটও। কোন কোন জায়গায় নেই পানির লাইন। আবার কিছু অংশ দেখা মিললো ভাঙ্গা দেয়ালেরও।

এবিষয়ে রাজশাহী ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাদরুল ইসলাম বলেন, আমরা তো রাস্তায় গাড়ি রাখতে চায় না। তবে এখন বাধ্যই হচ্ছি। আমাদের সেখানে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। গত ১০ বছর ধরে আমরা মিটিং এ তুলেছি। আরডিএ তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এজন্য সম্পর্ণ ভাবে আরডিএ দায়ি। তারা এই সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করলে তবেই আমার সেখানেই ফিরে যাবে।

এবিষয়ে রাজশাহী আরডিএ এর অথরাইজড অফিসার মুহাঃ আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বিষটি নিয়ে এস্টেট অফিসার মোঃ বদরুজ্জামানের সাতে কথা বলতে বলেন। বদরুজ্জামানেরর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। এটি নিয়ে চেয়ারম্যান বা প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন বিষটি আমাদের বলার কথা না এটি স্টেট অফিসারে বলার কথা। তিনি আপনাকে মিস গাইড করেছেন। এবিষয়ে আরডিএর চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে রাজশাহী মহানগর ট্রাফিকের সহকারি পুলিশ কমিশনার সালমা সুলতানা আলম বলছেন, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আমাদের মিটিং এ উঠেছে। আমরাও আরডিএ কর্তৃপক্ষকে বলেছি। তবে তারা এটি সংস্কার না করলেও সড়কে কোন গাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *