মনে আনন্দ নেই পাটকল শ্রমিকদের সন্তানদের

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: বছরের প্রথমদিনই বই মিলেছে স্কুলে স্কুলে। তারপরও মনে আনন্দ নেই পাটকল শ্রমিকদের সন্তানদের মনে। নতুন বই পেলেও এখনো স্কুলে ভর্তিসহ আরও অনেক খরচ বাকি রয়েছে। এছাড়া বই ছাড়াও আরও অনেক শিক্ষা উপকরণও কিনতে পারেনি তারা। কিন্তু এত টাকা কোথায়? তাদের বাবার অনেকেই বছরে ঠিক মতো বেতন পান না। আবার অনেকের বেতন বকেয়াও পড়ে আছে। তাই বৃহস্পতিবার নতুন বই হাতে নিয়েই আন্দোলনস্থলে জড়ো হয়েছে পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা।

মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে চলছে পাটকলশ্রমিকদের আমরণ অনশন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সন্তানেরা। রাজশাহী জুট মিলসের সামনে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে বাবাদের সাথে নতুন বই নিয়ে যোগ দিয়েছে সন্তানেরা।

তাদের কোমলমতি হাতে লিখা প্লেকার্ডে লিখা আছে ‘লেখাপড়ার নিশ্চয়তা চাই, মানুষের মতো মানুষ হতে চাই’, ‘প্রধানমন্ত্রী বই দেন কাপড় দেন আমার পিতার মুজুরি কমিশন দিন এমন লেখা কাগজ নিয়ে রাজশাহী জুট মিলের প্যান্ডেলের মধ্যে বসে ছিল পাঠকল শ্রমীকদের কমলমতি শিশুরা। তাদের পরনে ছিল স্কুল ড্রেস। এক হাতে প্লেকার্ড আরেক হাতে নতুন বই। স্কুলে বকেয়া পরিষদে না হওয়ায় এভাবেই বছরের প্রথমদিনই বই নিয়ে পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা।

তারা বলছে, নতুন বই পেলেও এখনো স্কুলে ভর্তিসহ আরও অনেক খরচ বাকি রয়েছে। এছাড়া বই ছাড়াও আরও অনেক শিক্ষা উপকরণ কিনতে হবে। কিন্তু এত টাকা কোথায়? তাদের বাবার অনেকেই বছরে ঠিক মতো বেতন পান না। আবার অনেকের বেতন বকেয়াও পড়ে আছে।

এ অবস্থায় সন্তানদের শিক্ষার খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন পাটকল শ্রমিকরা। অনেকের পক্ষেই শিক্ষাব্যয় বহন করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। তাই ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন বই নিয়ে বাবাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে কোমলমতি শিশুরাও।

রাজশাহীর পাটকলের শ্রমিক নান্নু মিয়া বলেন, বাবা বাসায় নেই চারদিন। মায়ের কাছে বারবার জিজ্ঞাসা ‘বাবা কোথায়, বাবা কোথায়’? বাবা কাজে গিয়ে আর ফিললোনা কেনো? এমন অনেক প্রশ্ন করে ছেলে। তার প্রশ্নবাণের কারণেই জানিয়ে দিতে বাধ্য হয় তার মা। ছেলেকে জানিয়ে দেন তার বাবা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে গিয়ে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বেতনের দাবিতে তিনি এখন আমরণ অনশনে। মায়ের কথা শুনে স্কুল ছুটির পর বাবাকে দেখতে ছেলে চলে আসেন রাজশাহীর পাটকলে।

নান্নু মিয়া বলেন, শুধু আমার ছেলে মেয়েই নয়, যারা অনশন করছেন তাদের প্রায় সবার ছেলে মেয়েই বৃহস্পতিবার এসেছিলেন অনশনরত বাবা মাকে দেখতে। পরে তারা একাত্মতা ঘোষণা করে শ্লোগান দিয়েছে। তবে শুধু শ্রমিকদের ছেলে মেয়েরাই রাজশাহীর পাটকলে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু দাবি মানা না হলে শুক্রবার শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও আমরণ অনশনে যোগ দিবে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে।

আব্দুল মজিদ, শাহীন শেখ ও জাবেদ আলী নামে কয়েকজন শ্রমিক জানান, তারা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। তারপরও সরকার তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নিচ্ছে না। এমন অবস্থায় তারা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেলেও তাদের শিশু সন্তানদের মুখে হাসি ফোটেনি। এখন তাদের স্কুলে ভর্তি ও অন্য খরচ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্রায় কমবেশি সব পাটকল শ্রমিকের একই অবস্থা।

এদিকে, শীতকে উপেক্ষা করে গত ৫দিন ধরে সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীর জুটমিলের শ্রমিকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা আন্দোলনের ব্যাপারে শ্রমিকদের আশ্বাস দিলেও সরকারের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। যার ফলে শ্রমিকরা দিন ও রাতে পাটকলেই অবস্থান করে কর্মসূচি পালন করছেন।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে লাগাতার আমরণ অনশনে রাজশাহীতে ৭জন পাটকল শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে চারজন ও বিকেলে আরো ৩জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের রামেক হাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ শ্রমিকরা হলেন, মুক্তিযোদ্ধা নওশাদ আলী, এমরান আলী, নজরুল ইসলাম ও ইসলাম, আব্দুল মজিদ, নকিব আলী ও নান্নু মিয়া।

রাজশাহী পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, শীতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তার পরও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার থেকে শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনও আন্দোলনে যোগ দেবে।

বিকেলে অনেক শ্রমিকের ছেলে মেয়রাও তাদের বাবা মায়েদের সাথে দেখা করতে যান পাটকল শ্রমিকদের সাথে। সেখানে গিয়ে তারা বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে। শুক্রবার থেকে তারা বাবা মায়েদের সাথে আন্দোলনে অংশ নেবে বলেও জানিয়েছে।

১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। গত রোববার দুপুর থেকে শ্রমিকরা রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালী এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই পাটকলের প্রধান ফটকের সামনে কর্মসূচি শুরু করেন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *