এমপি বাদশার হুমকিদাতা গ্রেফতার না হলে রাজশাহী অচলের হুমকি

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার:  রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার প্রাণনাশের হুমকিদাতাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ৫০টিরও বেশি সংগঠন। আর তা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাজশাহী অচল করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছে সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আয়োজিত এক মানববন্ধন-সমাবেশ থেকে সংগঠনের নেতারা এই হুমকি দেন। হুমকিদাতাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে রাজশাহীর ৫০টিরও বেশি সামাজিক সংগঠন অংশ নেয়।

হুমকিদাতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে হুমকিদাতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা রাজশাহীবাসীর জন্য লজ্জার। কারণ, একজন সংসদ সদস্যকে প্রাণনাশের হুমকিদাতাই যদি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাই হুমকিদাতা গ্রেপ্তার না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী বলেন, হুমকিদাতা কয়েকদিন আগে শত শত পুলিশের মাঝে সিটি করপোরেশনের একটা অনুষ্ঠানে ছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার ছবি প্রকাশ হয়েছে। অথচ পুলিশ নাকি তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। এটা মেনে নেয়া যায় না। তাহলে হুমকিদাতা কী প্রশাসনের চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সমাবেশে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন করছেন। তার সাথে শরিক হয়ে ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহীর উন্নয়ন করছেন। অথচ একটি কুচক্রিমহল রাজশাহীর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। সেই চক্র রাজশাহীর উন্নয়নের কারিগর এমপি বাদশাকে সরিয়ে দিতে চায়। তাই হুমকি দেয়া হয়েছে। অবিলম্বে হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। সেইসঙ্গে তাকে যারা আশ্রয় দিচ্ছে তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় এমপিকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। ডিসি সাহেব, আপনি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পান। মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তারে কেন আলোচনা হয়নি তার জবাব আপনাকে দিতে হবে। জামাত খান আরও বলেন, মাসুদ রানা একজন টেন্ডারবাজ। এদের গডফাদারকেও চিহ্নিত করার সময় এসেছে। প্রশাসন সবই জানে। প্রশাসনের এখন মাথায় ঘোমটা দিয়ে লাভ নেই। ঘোমটা এবার খুলুন, অপরাধীকে ধরুন।

সেক্টর কমান্ডার ফোরামের রাজশাহী জেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান খন্দকার বলেন, আমরা কোন স্বাধীন দেশে বাস করছি? একজন সংসদ সদস্যকে হুমকিদাতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে! অথচ প্রশাসন তাকে এখনও ধরছে না। ২৪ ঘণ্টা নয়, এক ঘণ্টার মধ্যে ধরতে হবে। যতক্ষণ সে গ্রেপ্তার না হচ্ছে, ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ব না। আন্দোলন চলবে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার সরকার বলেন, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহীর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করেছেন। তিনি কখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেন না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে যে কোনো বিষয়ের সমাধান হয়ে যায়। প্রশাসন যদি বৃহত্তর আন্দোলন না দেখতে চান তাহলে এখনই হুমকিদাতা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনুন।

সরকারের প্রাক্তন উপসচিব মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা শুধু একজন এমপিই নন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও। দেশের জন্য প্রাণ হাতে লড়াই করেছেন। আজ স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধাকেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়! এই জন্যই কী আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? হুমকিদাতাকে যদি প্রশাসন গ্রেপ্তার করতে না পারে তাহলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারাই তাকে খুঁজে বের করব। যথাযথ শাস্তি দেব। অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার সাহস আমাদের আছে।

দিগন্ত প্রসারি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা সব সময় জামায়াত, জঙ্গিবাদ, অপশক্তির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। হুমকিদাতাকে অবশ্যই দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।

কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা ১৪ দলের অন্যতম একজন শীর্ষ নেতা। তাকে হুমকি দেয়ায় ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এরপরেও কীভাবে হুমকিদাতা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে!

রাজশাহীর মানুষ ফজলে হোসেন বাদশাকে ভালোবাসে। তারা তাকে তিন তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে। তারা হুমকিদাতাকে ছেড়ে দেবে না। তিনি বলেন, আমাদের মনে এখন ভয় দেখা দিয়েছে। আমরা আতঙ্কিত। যে ব্যক্তি এমপিকেই হুমকি দিতে পারে, সে যে কোনো সমাজের জন্যই বিপজ্জনক। প্রশাসনকে এটা বুঝতে হবে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী মহানগর সভাপতি সুজিত সরকার বলেন, রাজাকার-আলবদররা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সব সময়ই হুমকি দেয়। কিন্তু এটা গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। হুমকিদাতা হুমকি দিয়ে বিশেষ রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থাকবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আর প্রশাসন তাকে ধরবে না এটাও নিন্দনীয়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

সমাবেশে রাজশাহীর বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মালেক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমানসহ আরও অনেকেই বক্তব্য দেন। জিরোপয়েন্টে সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায়। পরিচালনায় ছিলেন সমাজসেবক মঞ্জুর মোর্শেদ চুন্না।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর নগরীর গাঙপাড়া খালের পাড়ের বস্তি উচ্ছেদ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু মানবিক কারণে শীতের মধ্যে উচ্ছেদ না করার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উচ্ছেদকারীদের অনুরোধ করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এ সময় তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

একপর্যায়ে সাম্যবাদী দলের বহিষ্কৃত নেতা মাসুদ রানা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধাররণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে ফোন করেন। তিনি ঘটনাস্থল থেকে সংসদ সদস্যকে সরে যেতে বলেন। তা না হলে ‘প্রাণ থাকবে না’ বলে হুমকি দেন।

এ ঘটনায় পর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ১৪ দলের এক সভায় এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হুমকিদাতাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও সংবাদ সম্মেলন করে একই দাবি জানান।

কিন্তু অভিযুক্ত মাসুদ রানা গ্রেপ্তার হননি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে গত শুক্রবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনে একটি অনুষ্ঠানে তাকে প্রকাশ্যেই দেখা যায়। এ নিয়েই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীজুড়ে। আর তাই একসাথে কর্মসূচি পালন শুরু করেছে রাজশাহীর ৫০টিরও বেশি সংগঠন।

সংগঠনগুলো হলো- রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, মুক্তিযুুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেড, রাজশাহী উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ, জনউন্নয়ন পরিষদ, দিগন্ত প্রসারি ক্লাব, শহীদ জামিল আকতার রতন ফাউন্ডেশন, গণমৈত্রী সাংষ্কৃতিক সংগঠন, চেতনা বাস্তবায়ন, রংধনু সাংষ্কৃতিক অ্যাকাডেমি, অভিযাত্রী ক্লাব, আগমনী ক্লাব, তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা, আকুপ্রেশার সোসাইটি, রবিদাস উন্নয়ন পরিষদ, সোনালী অতীত ফুটবল ক্লাব, শহীদ জামিল আকতার রতন স্মৃতি সংসদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সুগার মিল শ্রমিক ফেডারেশন, বারওয়েল, পাটকল শ্রমিক ফেডারেশন, রেশম বোর্ড শ্রমিক ফেডারেশন, ইলামিত্র সাংষ্কৃতিক সংঘ, বেকার-দুস্থ নারী সংস্থা, রাজশাহী সাংষ্কৃতিক সংঘ, গণশিল্পী সংস্থা, গণ সাংষ্কৃতিক মৈত্রী, দিগন্ত সংঘ, বাপ্পী একাদশ, রাজশাহী বেতার শিল্পী সংস্থা, রাজশাহী থিয়েটার, দিশারী সংঘ, কেডি ক্লাব, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, ভাষানী সংঘ, ছোটবনগ্রাম যুব উন্নয়ন সংস্থা, যুবকল্যাণ সংঘ, আস্থা নেটওয়ার্ক, মজনু স্মৃতি সংসদ, উত্তরাঞ্চল প্রদেশ বাস্তবায়ন কমিটি, দিগন্ত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, সামাজিক কল্যাণ সংস্থা, ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাব, জন্মভূমি সমাজকল্যাণ সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ ও শহীদ রিমু স্মৃতি সংসদ।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *