আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত ইউনিটের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন হয়নি সেগুলো আগামী মার্চের ৬ তারিখের মধ্যেই করার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনেরও প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু হয়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। শেষ বারেরমতো সম্মেলন হয়েছে পাঁচ বছর আগে। নতুন সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করতে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে ডাকা হয়েছিল কেন্দ্রে। রোববার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শীর্ষ নেতারা তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে চেয়েছিলেন। সভাপতি ঢাকায় পৌঁছেও গিয়েছিলেন। তবে সভাটি পরে স্থগিত করা হয়েছে।

নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের আগে সম্মেলন নিয়ে আর বৈঠকে বসতে চাননি কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের পরেই কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহী আসবেন। রাজশাহীতেই নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করার বিষয়ে আলোচনা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত যে কোনো দিন সম্মেলন হবে।

এদিকে সম্মেলনকে সামনে রেখে পদপ্রত্যাশী নেতারা এখনই লবিং-গ্রুপিং শুরু করেছেন। যোগাযোগ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও। সূূত্রমতে, রাজশাহীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটের সভাপতি পদে সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প নেই। এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক এমন কারও নাম এখনো শোনা যায়নি। খায়রুজ্জামান লিটন এবারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তবে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। এ পদের দিকে চোখ আছে প্রায় আফডজন নেতার।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ছাড়াও এবার এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাঈমুল হুদা রানা, মোস্তাক আহমেদ, সদস্য সরিফুল ইসলাম বাবু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু এবং নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীসহ আরও কয়েকজন। তবে দলে নতুন হিসেবে পিছিয়ে পড়তে পারেন সরিফুল ইসলাম বাবু। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী ও নাঈমুল হুদা রানার ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। আবার দলে নিজের অবদানের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে আসতে পারেন ডাবলু সরকারই।

কেননা, ডাবলু সরকার সব সময় বিপদে-আপদে কর্মীদের পাশে থাকেন। কেউ অসুস্থ হলেই ছুটে যান হাসপাতালে। পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে নগরীতে তারও গড়ে উঠেছে বিপুলসংখ্যক সমর্থক। তার অনুসারিরা বলছেন, ডাবলু সরকার নগর ভবনে যান না। এ কারণে দলের একটি অংশের নেতারা প্রচার চালান যে সভাপতি-সম্পাদকের সম্পর্ক ভালো নয়। কিন্তু দলীয় কর্মসূচি তারা একসঙ্গেই পালন করেন। তাদের মধ্যে কোনো দূরত্বও নেই। যারা সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চান তারাই এ বিষয়ে প্রচারণা চালান। এ কারণে কর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়। তারপরেও দলের বড় অংশের নেতাকর্মীরাই চান সাধারণ সম্পাদক পদে ডাবলুই থাকুক।

জানতে চাইলে আগামী সম্মেলনে নিজের প্রার্থীতার কথা স্বীকার করে ডাবলু সরকার বলেন, সভাপতির সঙ্গে আমার কোনো বিভেদ নেই। তিনি আমার বড় ভাই। তার সান্নিধ্য নিয়েই রাজনীতি করেছি। দলীয় কোনো সিদ্ধান্তও আমরা কেউই একা নিই না। ডাবলু বলেন, সিটি করপোরেশন দলীয় কোনো সংগঠন নয়। সেখানে মেয়র আছেন। তিনিই সব চালাবেন। দল আর সিটি করপোরেশন আলাদা। সে জন্যই নগর ভবনে তেমন একটা যাই না। এটা কোনো দূরত্ব নয়।

তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে পাঁচ বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতাকে উপস্থাপন করেছি সাধ্যমতো। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেছি মানুষের মাঝে। জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে এগিয়ে নিয়েছি। আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসন ও সিটি নির্বাচনে নৌকার বিজয় হয়েছে। ফলে এবারও আমি প্রার্থী হচ্ছি। তবে সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত। তিনি আমাকে দায়িত্ব দিলে পালন করব, না দিলেও দলের জন্য কাজ করব।

সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী নাঈমুল হুদা রানা বলেন, নগর ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছি। বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব। তাদের চাওয়া অনুযায়ী এবার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আশা করছি নেতাকর্মীরা আমাকে বেছে নিবেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাধারণ সম্পাদক হন ডাবলু সরকার। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা মহানগর আওয়ামী লীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর। অনুমোদিত পুর্নাঙ্গ কমিটি নগরে পাঠানো হয় ৭ ডিসেম্বর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *