নাটোরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে রাতে ঘুমন্ত বসতঘরে তালা, সকালে উদ্ধার করে পুলিশ

রাজশাহী লীড

নাটোর প্রতিনিধিঃ নাটোরের নলডাঙ্গায় জমি সংক্রান্ত আদালতে বিচারাধীন মামলা থাকা শর্তেও সালিশি বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে এক পরিবারের বসতঘরে রাতে তালা ঝুঁলিয়ে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে।

পরের দিন সকালে থানা পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙ্গে পরিবারটিকে উদ্ধার করেন।তবে পিপরুল ইউপি চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন এ অভিযোগ অস্থীকার করেছেন।

রোববার সকালে উপজেলার সেনভাগ গ্রামের কৃষক আবু জাফর আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের উত্তেজনা দেখা দিলে সোমবার নলডাঙ্গা থানা পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান দুই পক্ষের লোকজনদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

নলডাঙ্গা থানা পুলিশ ও ভুক্তভোগি পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পিপরুল ইউনিয়নের সেনভাগ গ্রামের আবু জাফর আলী পৈতিক সূত্রে পাওয়া ৯ শতক জমিতে বাড়িঘর করে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিল। কিন্ত প্রতিপক্ষ নাজিরের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওই ৯ শতক জমি নিজেদের দাবী করে ১৯৯৮ সালে আদালতে মামলা করেন।

মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকা শর্তেও প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেন পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করে। পরে গত শনিবার ইউপি চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন দুই পক্ষকে ডেকে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশি বৈঠকে বসে। পরে সালিশি বৈঠকে ভুক্তভোগি কৃষক আবু জাফর আলীর নামে দলিল ও খাজনা খারিজের কাগজপত্র থাকলেও বসতবাড়ির ৯ শতক জমির দখল ছাড়াতে বসতঘরে তালা লাগানোর সিন্ধান্ত দেন এবং দুই পক্ষকে ওই জমিতে না যাওয়ার রায় দেন।

কৃষক আবু জাফর চেয়ারম্যানের এ রায় প্রত্যাখান করেন।

গত শনিবার রাতে আবু জাফরের পরিবার রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বাড়ির চারটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার সকালে পরিবারটি ঘুম থেকে উঠে দেখে প্রতিটি ঘরে তালাবদ্ধ। পরে থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙ্গে পরিবারটিকে উদ্ধার করেন।

ভুক্তভোগি কৃষক আবু জাফর জানান,আমার বসতবাড়ির ৯ শতক জমি আমি পৈতিক সূত্রে পেয়ে খাজনা খারিজ করে বাড়িঘর নির্মাণ করে ভোগদখল করে আসছি। কিন্ত সালিশি বৈঠকে যে রায় দিয়েছে তা আমি মেনে নেয়নি। চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সুরুজ শনিবার রাতে আমার ঘুমন্ত পরিবারের ৪ ঘরে তালা লাগিয়েছে। রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরে ঘরে তালা লাগানো থাকায় আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনি। পরে পুলিশ এসে তালা ভেঙ্গে আমার পবিবার কে উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় পিপরুল ইউপি চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন ঘরে তালা লাগানোর অভিযোগ অস্থীকার করে জানান, গত শনিবার ইউনিয়ন পরিষদে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে সালিশি বৈঠক বসানো হয়। বৈঠকে সিন্ধান্ত অনুযায়ী দুই পক্ষের সম্মতিতে ওই জমিতে কেউ যেতে পারবে না সেহেতু বসতবাড়িতে তালা লাগানোর সিন্ধান্ত হয়।

চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন আরোও জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সুরুজ কে তালা লাগানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সুরুজ বাজার থেকে নতুন তালা কিনলেও পরে তালা লাগানো হয়নি। কে বা কাহারা আবু জাফরের বাড়িতে তালা লাগিয়েছে তা আমরা জানিনা।

নাটোর আদালতে বিচারাধীন মামলার ঘটনায় এমন রায় দেওয়ার এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিন বলেন, সালিশি বৈঠকের রায় মেনে না নেওয়ায় বাড়িতে তালা লাগানোর সিন্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, রোববার সকালে সেনভাগ গ্রামের আবু জাফরের বাড়িতে তালা লাগানোর খবর পেয়ে আমার থানার এক অফিসারসহ ফোর্স গিয়ে তালা ভেঙ্গে পরিবার টিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কে বা কাহারা তালা লাগিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে জানা না গেলেও তদন্ত করে তা বের করার চেষ্টা চলছে।

এ নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সোমবার সকালে সেনভাগ গ্রামে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে ডেকে থানায় বসে শান্তি স্থাপনের জন্য সিন্ধান্ত হয়। এসময় পিপরুল ইউপি চেয়ারম্যান কলিমউদ্দিনসহ গ্রামবাসি উপস্থিত ছিলেন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *