বেপরোয়া রাজশাহীর ছিনতাইকারী চক্র

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীতে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও পাড়া-মহল্লার গলিতে গলিতে ওঁত পেতে থাকছে ছিনতাইকারীর দল। সুযোগ বুঝে তারা অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পথচারীদের ওপর। বাদ পড়ছেন না রিকশার যাত্রীরাও। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাইকারীরা কেড়ে নিচ্ছে নগদ টাকা, মুঠোফোন এবং স্বর্ণালঙ্কার।

কখনও কখনও ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে আহত হচ্ছেন মানুষ। শান্তির এ শহরে হচ্ছে রক্তপাত। প্রাণও হারাচ্ছেন কেউ কেউ। ফলে রাত-বিরাতে শহরে এখন বের হতেই ভয় পাচ্ছেন নগরবাসী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিনতাইকারীদের নাগাল পাচ্ছে না বললেই চলে। উদ্ধারও হচ্ছে না ছিনতাই হওয়া মালামাল। তবে পুলিশের দাবি, নগরীতে টহল বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাতেও ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) তিন ছাত্র। নগর ভবন সংলগ্ন রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। তিনজনের মধ্যে ছুরিকাহত দুইজনকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মিরু আহমেদ (২৩) ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম (২৩)। তাদের দুজনেরই বাম পায়ের হাঁটুর ওপরে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।

মিরুর পায়ে ছয়টি এবং আতিকুলের ১২টি সেলাই লেগেছে। আরেক ছাত্র হলেন আপন হোসেন (২৩)। তিনি আহত হননি। আপন রামেকের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। এই তিন ছাত্র রিকশায় চড়ে রামেকের হোস্টেলে ফিরছিলেন। পথে ধারালো অস্ত্রধারী দুই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা মিরুর একটি স্মার্টফোন ও মানিব্যাগসহ ১ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে গেছে। আতিকুলেরও মানিব্যাগ এবং স্মার্টফোন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মানিব্যাগে প্রায় ৭০০ টাকা ছিলো। আপনের শুধু মানিব্যাগ নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা।

আহত মিরু জানান, মাঝে মাঝেই তারা রাজশাহী বাস টার্মিনাল এলাকায় হোটেলে খেতে যান। রোববার দিবাগত রাতেও তিনজন কলেজের হোস্টেল থেকে খেতে যান। রাত আড়াইটার দিকে তারা তিনজন হোটেল থেকে খেয়ে রিকশায় চড়ে হোস্টেলে ফিরছিলেন। পথে নগর ভবনের সামনের সড়কে দুই ছিনতাইকারী রিকশার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় একজনের হাতে রামদা এবং অপরজনের কাছে ছুরি ছিল। যার কাছে ছুরি ছিল সে আঘাত করা শুরু করে। আরেকজন তাদের তিনজনের কাছ থেকেই মানিব্যাগ ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়। পরে ওই রিকশাটি তাদের হাসপাতালে আনে।

এর আগে বিকালেই নগরীর দোসর মণ্ডলের মোড়ে আবদুর রউফ (১৮) নামে এক চালকের অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় রউফকেও রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়ি জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাংলাকান্দর গ্রামে।

সম্প্রতি নগরীর উপশহর এলাকায় সকালে হাঁটতে বের হয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন জিন্নাতুন নেসা নামে (৬০) এক বৃদ্ধা। তার বাড়ি উপশহরেই। দুই যুবক মোটরসাইকেলে এসে অস্ত্রের মুখে ওই বৃদ্ধার গলা থেকে দুটি সোনার চেইন এবং একটি কানের দুল খুলে নিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগেই ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

গত বছরের ৬ আগস্ট ভোরে এক ছিনতাইকারীর রামদার আঘাতে প্রাণ হারান ফারদিন ইসনা আশারিয়া রাব্বি (১৮) নামে এক কলেজছাত্র। ঈদুল আজহার ছুটিতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় বাড়ি যাবার পথে খুন হন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাস থেকে বের হওয়ার পরই নগরীর বর্ণালী মোড় সংলগ্ন একটি গলির রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।

একই মাসে নগরীর উপকণ্ঠ কুখণ্ডী বাইপাস এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাইকারী চক্র জরিপ মৃধা (৩৬) নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ছুরিকাঘাতে জরিপও নিহত হন। এছাড়া গত ২১ আগস্ট রাজশাহী রেল স্টেশনে মার্কিন প্রবাসী এক নারীর ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারী তার পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন ওই নারী।

এভাবে নগরীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা লেগেই আছে। রাত এবং কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে বর্ণালী মোড়, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, দড়িখড়বোনা, কাদিরগঞ্জ, কোর্ট স্টেশন, সাহেববাজার, ভদ্রা আবাসিক, উপশহর, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ পাঁচ নারী ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামে। অটোরিকশার ভেতর রায়হানা আক্তার জাহান নামে এক নারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করার সময় ধরা পড়েন তারা।

আর গত ২৯ আগস্ট সন্দেহবশত তল্লাশির সময় টহল পুলিশের ওপরই ধারালো ছুরি নিয়ে হামলা চালায় তিন ছিনতাইকারী। এ সময় পুলিশ তাদের আটক করে। দিনদুপুরে নগর ভবনের পাশেই কাদিরগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছুরির আঘাতে মাইনুল ইসলাম নামে পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শক আহত হন। তবে নগরবাসী বলছেন, নগরীতে পুলিশের টহল কমে যাবার কারণেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। তারা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নগরীতে টহল জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, পাঁচ-ছয় মাস আগে শহরে ছিনতাইকারী একটু বেড়েছিল। মাঝে কমে। ইদানিং আবার ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে আমিও অভিযোগ পাচ্ছি। তবে ছিনতাই ঠেকাতে নগরীতে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। থাকে। তারপরেও দু’একটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *