সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চারঘাটে কৃষি জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর চারঘাটে কৃষি জমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন। সরকারি অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ চললেও দেখার কেউ নেই। ফলে অনেকটা বাধাহীন ভাবেই চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। এতে করে শুধু কৃষি জমিই নষ্ট হচ্ছে না পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়ক-মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এর অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি পুকুর খনন বন্ধে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া, চারঘাট সদর, শলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলছে পুকুর খনন। তবে অধিকাংশ পুকুর খননকারীরা বিভিন্ন জমির মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লীজ নিয়ে এসব পুকুর খনন করছেন। আর সাবাড় করা হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান। ধ্বংস করা হচ্ছে ধানসহ তিন ফসলীর জমির। এতে সাময়িক ভাবে জমির মালিকরা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছেন পুকুর খননকারী জমির আশে পাশে থাকা বাগান মালিক ও ফসলী জমির মালিকরা। তাদের দাবি, এভাবে যত্রতত্র ভাবে পুকুর খননের ফলে জলাবদ্ধতাসহ জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমছে কৃষি জমির পরিমান।

গত শনিবার উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কামিনী ফকিরপাড়া গ্রামে গেলে সেখানে দেখা যায় জমির মালিক মহব্বত আলী দিনের বেলায় আম বাগান কেটে সাবার করে ফেলছেন। বাগান কেটে সেখানে কাটা হচ্ছে পুকুর। এ সময় মহব্বত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি আমার জমি উপজেলার ফতেপুর গ্রামের জরিপকে লীজ দিয়েছি। তিনি এখানে পুকুর খনন করছেন। বাগান কেটে পুকুর খনন অবৈধ কিনা জানতে চাইলে মহব্বত আলী বলেন, জরিপ ভাই ভালো বলতেন পারবেন।

এ বিষয়ে পুকুর খননকারী জরিপ বলেন, আমরা মাটি কেটে নিচ্ছ। এ মাটি ভাটায় দেয়া হচ্ছে। এভাবে আগের বাগান কেটে পুকুর খনন চলছে পুরো উপজেলা জুরেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিমপাড়া ইউনিয়নের নন্দনগাছী বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, শুধু ফকিরপাড়া মাঠে নয়, ভাটপাড়া মাঠ জুড়ে আগে যেখানে দেখা গেছে ধানের শীষ। এখন সেখানে তাকালেই দেখা যাবে পুকুর আর পুকুর। এভাবে পুরো ইউনিয়নের বেশীর ভাগ মাঠ জুরেই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাক্তি দীর্ঘদিন ধরেই পুকুর খনন করে চলেছেন।

শুধু নিমপাড়া ইউনিয়নেই পুকুর খনন স্বীমাবদ্ধ নয়। উপজেলার শলুয়া ও চারঘাট সদর ইউনিয়নেরও বেশীর ভাগ মাঠ জুরেই এখণ চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। দেখার যেন কেউ নেই। এতে করে পুকুর খননকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দ্রুত এসব অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের কৃষক সমাজ।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনজুর রহমান বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন সম্পুর্ণরুপে অবৈধ। তার পরেও যেসব স্থানে পুকুর খননের খবরপাওয়া যাচ্ছে সেখনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা অভিযান চালাচ্ছেন। তবে পুকুর খনন বন্ধে জনগনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা মনজুর রহমান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, পুকুর খনন সম্পুর্ণ ভাবেই অবৈধ। উপজেলার যে প্রান্তেই পুকুর খননের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। গোপনে কোন জায়গায় পুকুর খনন করা হলেও দ্রুত উপজেলা প্রশাসনকে সংবাদ জানানোর জন্য ইতিমধ্যে জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনগনকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *