রাজশাহীর গাঙপাড়া খালের ভিটেহারাদের মানবেতর জীবনযাপন,শীতে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

কামরুজ্জামান বাদশা: শীতের এই মৌসুমে রাজশাহীর গাঙপাড়া খালের বসতি উচ্ছেদের ঘটনায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে খালের পাশেই বসতি গড়া প্রায় ২শ’ ৩০টি পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর উচ্ছেদ অভিযানে মাথাগুঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়েছে তারা। এর ফলে সহায়-সম্বলহীন দিনমজুর শ্রেণীর এসব মানুষের শেষ আশ্রয়টুকুও আর নেই। গত ২২ ডিসেম্বর তাদের উচ্ছেদ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর পর থেকে এই শীতের ভেতর অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন রাজশাহী নগরীর গাঙপাড়া বসতির ২শ’ ৩০ টি পরিবারের প্রায় দুই হাজার মানুষ। এর ফলে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা জাচ্ছেন অনেকে। দিন দিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।

তীব্র শীতের মধ্যে বসতবাড়ি হারিয়ে গত একমাসের মধ্যেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আবদুস সালাম, সুফিয়া বেগম, সায়েরা বেগম ও আবদুর রাজ্জাক নামে চারজন নারী-পুরুষ। এরপর গত ২২ জানুয়ারি বুধবার মারা গেছেন আরেজন। সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেন (৬৫) নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। প্রচন্ড শীতে ভিটাহারা এ পরিবারগুলো থেকে ক্রমষয় বাড়তে আছে লাশের মিছিল।

বসতিবাসীর ঘর ভেঙে দেয়ার পর কেউ কেউ পাশের কারও জমিতে কিংবা কারও বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেক পরিবার ভেঙে দেয়া বাড়ির ভিটায় টিনের অস্থায়ী একটা ঘর তুলে বসবাসের চেষ্টা করছেন। খোলা আকাশের নিচে কেউ পলিথিন টাঙ্গিয়ে আবার কেউ খড়কুটো দিয়ে মাথা ঢেকে দিন পার করছেন।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে খোলা আকাশের নিচে মাথার উপর সামান্য কিছু দিয়ে বসবাস করছেন। আবার কোনো পরিবার একসাতে সবাই মিলে একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করছে। খালের দুই ধারে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দরিদ্র শ্রেনীর ২শ’র বেশি পরিবার তিন যুগেরো বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছে।

কথা হয় বসতির বাসিন্দা ফিরোজা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়ার পর ওই ভিটাতেই টিন দিয়ে ছোট্ট একটা ঘর বানিয়েছেন তিনি। ভাঙড়ি কুড়িয়ে সংসার চালান তিনি। ঋণ নিয়ে ইট দিয়ে তৈরি করা দুটি উচ্ছেদের পর এখন আবার পথে বসেছেন তিনি। সেই ঋণ পরিশোধের আগেই তাকে ঘর হারাতে হয়েছে। এখন শীতের মধ্যে খোলা আকাশই যেনো তার ঠিকানা।

বসতি উচ্ছেদের কবলে পড়া আরাফাত রহমান পেশায় একজন রিক্সাচালক, আশ্রয় নিয়েছেন পাশের এক আমবাগানে। সেখানে আরাফাত সহ পাঁচটি পরিবার রয়েছে। সবাই টিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে দু-একটি ঘর করেছেন। তৌফিক বলেন, একটা ঘরেই তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে হচ্ছে। জমিওয়ালা এখান থেকেও চলে যাওয়ার জন্য এক মাস সময় দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে এখন যাব কোথায়! এভাবে পুরো বসতির মানুষই ঘরবাড়ি হারিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কাজের জন্য অবৈধ দখলকারিদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা যদি কেও পুনর্বাসনের জন্য আবেন করে তাহলে পার্শবর্তী দূর্গাপূর বা মোহনপুর উপজেলাতে সরকারের ফাঁকা যায়গা থাকা সাপেক্ষে পুনর্বাসন করা হবে।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা গতকাল মুঠোফোনে বলেন, এই শীতের মধ্যে বসতি উচ্ছেদ না করার জন্য আমি অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা আমার কথা শোনেননি। এখন তারা যেহেতু সবাইকে উচ্ছেদ করেই ফেলেছে এখন তাদের পুনর্বাসনের জন্য ত্রাণ মন্ত্রনালয়কে আগামীকাল (আজ) চিঠি দেওয়া হবে। যেহেতু কাউকে পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা যাইনা তাই মন্ত্রনালয় যেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা নেন। তিনি বলেন, এই উচ্ছেদের কারনে প্রচন্ড শীতে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এর দ্বায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে। কারণ তাদের অমানবিক এবং দায়িত্বহীন কাজের কারনে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *