সীমান্ত আইন লংঘন করে যত্রতত্র বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে বিএসএফ: আতঙ্কে কৃষক ও জেলে

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের সীমানায় হুটহাট ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ)। বিশেষ করে পদ্মা নদী ও চর এলাকায় তারা প্রবেশ করছে। এক্ষেত্রে তার মানছেন না সীমান্ত আইন। ফলে আতঙ্কে থাকেন সীমান্ত এলাকার কৃষক ও পদ্মার নদীর জেলেরা। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাও দেখা দিচ্ছে।

সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খরচাকা সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে বিএসএফ। একটি স্প্রীটবোড নিয়ে পাঁচজন বিএসএফ সদস্য এসে বাংলাদেশী চার জেলেকে ধরে। খবর পেয়ে দ্রুত বিজিবি সদস্যরা গিয়ে চার জেলেকে ছাড়িয়ে নেয়। এ সময় বিএসএফ ওই স্থানটি তাদের দাবি করলে বিজিবির সঙ্গে বাকবিতন্ড হয় উভয়ের।

এ ঘটনার মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিএসএফ সদস্যরা চার জেলেকে ধরে। এ সময় ইঞ্চিন চালিত একটি নৌকা নিয়ে খরচাকা বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়। এর ঘন্টা খানেক আগে পাশের চর থেকে পাঁচ রাখালকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।

রাজশাহী পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, হুটহাট করে বিএসএফ বাংলাদেশে সীমানায় চলে আসে। এ নিয়ে পদ্মার চরে চাষাবাদ ও পদ্মায় মাছ ধরতে নিয়োজিত জেলেরা আতঙ্কে তাকেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

বিজিবির রাজশাহী ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পাঁচ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যাওয়াসহ অনুপ্রবেশের বিষয় নিয়ে শনিবার কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। নির্মল চরের ৫০/৪এস সীমান্ত পিলারের কাছে এ পতাকা বৈঠক আয়োজন করা হয়। পতাকা বৈঠকে অনুপ্রবেশের বিষয় নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিএসএফ ওই জায়গাটি নিজের বলে দাবি করেছে।

ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেখান থেকে পাঁচ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পদ্মার যেখান থেকে চার জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল সেটি বাংলাদেশের সীমানা। বিএসএফের এই অনুপ্রবেশের বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হবে বলেও জানান এই বিজিবি কর্মকর্তা।

শুক্রবার গোদাগাড়ী উপজেলার খরচাকা সীমান্ত থেকে পাঁচ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে নিয়ম ভেঙে বিজিবিকে না জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে থানায় দেয়া হয়। বিএসএফের হাতে আটককৃতরা হলেন- রাজন হোসেন (২৫), সোহেল রানা (২৭), কাবিল হোসেন (২৫), শাহীন আলী (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৩০)। পবা উপজেলার গহমাবোনা গ্রামে তাদের বাড়ি। পদ্মার চরে তারা গরু চরাতে গিয়েছিলেন।

এর আগে ভারতীয় এক জেলেকে আটকের জের ধরে গত বছরের ১৭ অক্টোবর অনুমতি ছাড়াও প্রায় এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ)। তারা এসেই সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছ থেকে ভারতীয় জেলেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিতে গেলে বিএসএফ গুলি চালায়।

পাল্টা জবাব দিতে বিজিবি গুলি চালালে বিএসএফের এক সদস্য নিহত ও একজন আহত হন। এ নিয়ে দুইদিন পর সেক্টর পর্যায়ে দুই বাহিনীর পতাকা বৈঠক হয়। ওই পতাকা বৈঠকে অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আনছে না ভারতীয় এই বাহিনী।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *