বাঘায় পয়লা ফালগুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের পসরা সাজিছেন ফুল ব্যবসায়ীরা

রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি:
বছর ধরে বুকে-বন্দী বাতাস উড়িয়ে দেওয়ার সময় উপস্থিত। এখন কথা হবে কানে কানে। মাঘ শেষের এ সময়ে প্রকৃতিতেই যেন ছড়িয়ে থাকে প্রেম। এ সময়ে কেউ যদি রবি ঠাকুরের সেই কবিতার মতো বলে, ‘গোলাপ ফুল ফুটিয়ে আছে, মধুপ, হোথা যাস নে-/ ফুলের মধু লুটিতে গিয়ে কাঁটার ঘা খাস নে॥’ভালোবাসার এ সময়ে দুর্বিনীত প্রেমিক-যুগল শুনবে কেন সে কথা? সেই ভ্রমরের মতোই হয়তো তারা বলবে, ‘মরমে যাহা গোপন আছে গোলাপে তাহা বলিব-/ বলিতে যদি জ্বলিতে হয় কাঁটারই ঘায়ে জ্বলিব।’
ভালোবাসা দিবস সামনে। ঘরে রাখা টবের গাছের গোলাপ কাঙ্খিত জনকে দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও প্রায় বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই সহায় চাষের ফুল। তাই পয়লা ফালগুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপসহ রংবেরঙের ফুলের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।

তাদের একজন উপজেলার বাঘা পৌর মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী তসিকুল ইসলাম। বিক্রির আশায় তার দোকানে গোলাপসহ রংবেরঙের ফুলের পসরা। জানালেন, এবার বিক্রির কথা। এই ভালোবাসা দিবসেই গোলাপের সর্বোচ্চ বিক্রি হয়। গতবার প্রায় দেড় হাজার গোলাপ সরবরাহ করেছিলেন দিবসের আগে। এবার তার চেয়ে বেশি বিক্রির আশা করলেও দিবসটি শুক্রবারের দিন হওয়ায় সন্দেহ রয়েছে সেই পরিমান গোলাপ বিক্রি হবে কি-না। কিন্তু চাহিদা তো কমেনি।

অর্থনীতির চিরাচরিত নিয়ম, সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে পণ্যের দাম বাড়বে। এ তত্ত¡ অভিজ্ঞ জনের। বিশেষ দিনে দামের দিকে তাকানোর মতো বেরসিক নিশ্চয়ই নন প্রেমিক-প্রেমিকা। তবে সাশ্রয়-ভাবনা থেকে অনেকেই আগে থেকে গোলাপ কিনে রেখেছেন প্রিয়জনের জন্য! কারণ পাতা পচা রোগসহ বিভিন্ন কারণে ফুলের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় এ বছর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা অনুযায়ী জোগান কম হতে পারে।

সততা ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম এন্ড ফুল ঘরের স্বত্বাধিকারি তসিকুল ইসলাম ইসলাম জানান, ‘এবার কম দামে গোলাপ পাওয়া হচ্ছে না। দাম বেশি দিতে হবি।’ তার কথায় ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। আর পয়লা ফালগুনে চাহিদা বেশি গাঁদা ও জারবেরার। মাঠ থেকে গোলাপপ্রতি দাম ধরেছেন ২০-২২ টাকা। আগের বছর এর কম পড়েছিল। ভালোবাসা দিবসে এবার প্রতিটি গোলাপ ৩০-৪০ টাকা,রজনীগন্থা ১০/১৫ টাকা,গেøাডোলাক্স ২০/২৫ টাকা,জারবেরা ২৫-৩০ টাকা,মাথার টাইরা প্রতিপিচ ১২০-১৫০ টাকা,মাথারখোপা প্রতিপিচ ১০০-১২০ টাকা হিসেবে বিক্রি করবেন। তিনি এবার ১হাজার ৫০০’শ গোলাপ,৫০০ পিচ রজনীগন্থা,২৫০গেøাডোলাক্স,৪০০ জারবেরা.৫০ পিচ মাথার টাইরা ও ৬০পিচ মাথার খোপা বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।

তার তথ্য মতে, গত বছর ভালোবাসা দিবস ও পয়লা বসন্তে পনের হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার বিশ হাজার টাকার ব্যবসা হবে। শাহিন নামের একজন এর সঙ্গে আরেক কারণ যোগ করে বললেন, প্লাস্টিকের কৃত্রিম ফুলের অবাধ আগমন। এতে ফুল ব্যবসায়ীরা উৎসাহ হারিয়েছেন। উপজেলায় ফুলের দোকান কম আছে, তবে ভালোবাসা দিবসের দিন পাড়া-গলিতে অনেকেই এ ব্যবসায় জড়ান।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহ হওয়ার প্রমাণ কিন্তু নেই। কারণ প্রতিবছর ফুলের চাষ বেড়ে যাচ্ছে। ফুলের ব্যবসা এখন ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের মধ্যম আয়ের মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, দারিদ্র্য যত কমবে, তত বেশি সামাজিক অনুষ্ঠানে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। আর সামাজিক অনুষ্ঠানের একটা অংশ ফুলের ওপর নির্ভরশীল। ফুল বিক্রি বেড়ে যাওয়া একটা পরোক্ষ নির্ণায়ক। যার মাধ্যমে বোঝা যায়, মানুষের দারিদ্র্য কমছে আর তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে আর ভালোবাসা দিবসে ভালো ফুলের ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *