রাজশাজীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরো ২ লাশ উদ্ধার মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৬, এখনো নিখোঁজ ৩

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার:

রাজশাহীর পদ্মায় বিয়ের অনুষ্ঠানের নৌকা ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতরা হলো- রতন আলী (৩০), রতনের মেয়ে মরিয়ম (৫), একলাস আলী (২২),শামিম হোসেন (৩৫) ও তার মেয়ে রশ্নি খাতুন (৭) ও মনি খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ দিকে ঘটেছিলো এ নৌকা ডুবির ঘটনা। আর সেই দূর্ঘটনায় বর প্রাণে বেঁচে আসলেও কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা সহ এখোনও নিখোঁজ রয়েছে ৩ জন বলে তাদের পরিবারের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে। নিখোঁজরা হলেন- কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (১৬), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১৩) এবং খালা আখি খাতুন (২৫)। এতে বিয়ে বাড়ি সব আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নিয়েছে বিষাদে। বর্ণিল উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই দুই পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম! আর এতে বর-কনের নতুন জীবনের মানেটাও হারাতে বসেছে শুরুর আগেই।

এদিকে নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দলকল বাহিনী, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডাবøæটিএ’র একটি ডুবুরি দল যৌথভাবে এখন পর্যন্ত উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। সর্বশেষ দুপুরে একলাস আলী ও পরে রতন আলী নামের দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শামিম হোসেন (৩৫) ও তার মেয়ে রশ্নি খাতুন (৭) এর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে  সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সর্বশেষ রিপোর্ট লিখা পর্যন্তÍ মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ছয়জনে। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, গতকাল শনিবার তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে একলাস আলী (২২) ও আড়াইটার দিকে রতন আলী (৩০) নামের দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের লাশ ভেসে উঠে। আর বিকেল ৪টার দিকে ডুবুরিরা পানির নিচ থেকে শামিম হোসেন (৩৫) ও তার মেয়ে রশ্নি খাতুন (৭) লাশ উদ্ধার করে। এর আগে সকালে চারঘাট এলাকা থেকে মনি খাতুন নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছে তাদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে। এছাড়াও ডুবে যাওয়া নৌকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান নৌ পুলিশের ওসি।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌ-পুলিশ রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান চালায়। সকালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিআইডাবøæটিএ’র একটি ডুবুরি দল। এই নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়াও পদ্মাপাড়ে নিখোঁজ ও হতাহতের অনুসন্ধান উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিহতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এছাড়াও আহতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।

এদিকে শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম. খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় তিনি নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। নৌকাডুবিতে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া পদ্মানদীতে নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

এছাড়া রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে যান। তিনি তার নিজ এলাকার লোকজনকে ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আহŸান জানান। রাতের অনেকটা সময় অবস্থান করে উদ্ধার কাজের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়া নিহত শিশু ও নিখোঁজদের পরিবারের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য: গত শুক্রবার রাজশাহীর চরখিদিপুর এলাকায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে পদ্মা নদীতে ৩৬ জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৭ জন নারী ও ৬ জন শিশু ছিলো। সেই ঘটনায় রাতেই এক শিশু মারা যায়। সৌভাগ্যক্রমে নদীতে সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে গেছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। কিন্তু এখনও সন্ধান মেলেনি তার নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০)। তিনি বেঁচে আছেন না স্রোতস্বিনী পদ্মাতেই তার সলিল সমাধি হয়েছে সে কথা জানা নেই কারও। তাইতো নদীর পাড়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন সবাই।

 

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *