রাজশাহীতে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রকৌশলীকে ছেড়ে দিলো পুলিশ: অন্যদের মাদক মামলায় চালান

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: গত ১৮ মার্চ রাতে রাজশাহী নগরীর সুপার ওয়াসা ভবনের সামনে ৪ বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন প্রকৌশলী রেইন। বিসিক পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ধূমপান করতে দেখে গাড়ি থামায়।

পরে মাদক সেবনের অভিযোগে তাদের আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবদুল করিমের নেতৃত্বে পুলিশ টিম।

পরে প্রকৌশলী রেইনকে নিয়ে ডাচ্-বাংলা বুথে যান এসআই এবং রেইনকে ২৫ হাজার টাকা তুলতে বাধ্য করেন। ওই টাকা নিয়ে রেইনকে ছেড়ে দিলেও বাকি ৩ জন টাকা দিতে না পারায় তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রেইনকে দিয়ে বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে তাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যান এসআই। রেইনের অপর বন্ধুরা হচ্ছেন : সাঈদ, বকুল, নাঈম ও জয়নাল। এদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী সাঈদকে আরএমপি ধারায় চালান দেয়া হয়েছে। বাকি ৩ জনকে চালান দেয়া হয় ৩০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায়। বৃহস্পতিবারই আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেফতার জয়নাল নগরীর কয়েরদাঁড়া, প্রকৌশলী রেইন নগরীর লক্ষ্মীপুর ডিঙ্গাডোবার বাসিন্দা এবং রেইন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া সাঈদ, বকুল ও নাঈম নগরীর ওয়াসা সংলগ্ন ফিরোজাবাদ এলাকায় থাকেন। এদের সবার বয়স ৩০ বছরের মধ্যে। তারা প্রায়ই সেখানে আড্ডা দিতেন।

ভুক্তভোগীর স্বজনরা বলছেন, ফাঁড়িতে তুলে নেয়ার পর তাদের ফোন থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এসআই আবদুল করিম নিজে। তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করেন। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় তাদের ছাড়তে রাজি হননি ফাঁড়ির ইনচার্জ। তবে ৫ হাজার টাকা দেয়ায় মাদকের মামলা না দিয়ে আরএমপি ধারায় চালান দেয়া হয়েছে প্রতিবন্ধী সাঈদকে। সাঈদের পরিবারও টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে।

এদিকে ওই রাতেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকার খোদাবক্সের ছেলে নাসিমকে মাদকসহ গ্রেফতার করেন এসআই আবদুল করিম। পরে সমঝোতা করে তাকে চালান দেয়া হয় আরএমপি ধারায়। ফলে পরদিনই আদালত থেকে ছাড়া পান তিনি। জানা গেছে, তার কাছ থেকেও ৫০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আবদুল করিমের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আবদুল করিম বলেন, মাদকসেবনরত অবস্থায় যে চারজনকে আটক করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে সব মিলিয়ে ৩০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে।

তাদের মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে চালান দেয়া হয়। ওই দলে থাকা প্রকৌশলী রেইনকে কেন চালান দেয়া হয়নি সে বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দেননি। আটকের এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তুলে প্রকৌশলীকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন এসআই আবদুল করিম। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই দোষী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র এডিসি গোলাম রুহুল কুদ্দুস।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে চিহ্নিত সচ্ছল পরিবারের ছেলেদের কৌশলে তুলে নিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কে অর্থ আদায়ের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। একই কাজ করছে নগরীর বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী অনেক পরিবারই লিখিতভাবে পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলেও তা বন্ধ হয়নি। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *