বাঘা প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়ে গ্রামে ছুটে এসেছেন অনেক মানুষ। যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও বিকল্প পথে শতশত মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। গ্রামে ফিরে আসার এই দৃশ্য অনেকটা ঈদের ছুটিতে ফেরার মতো দেখা গেছে। অভিযোগ আসছে,বিদেশ ফেরতদের কেউ কেউ সামাজিক দূরত্ব না মেনে ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করছেন। এতে তারা গ্রামকেও অনিরাপদ করে তুলেছেন।
সুতরাং এখন গ্রামে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, যেভাবে গ্রামে মানুষ ফিরেছে, সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হলো, সেখানে গাদাগাদি করে বিভিন্ন পরিবহনে মানুষ গ্রামে ফিরেছেন, সেটিতে আরও ঝুঁকি তৈরি হলো। তাদের (বিশেষজ্ঞ) মতে টানা ১০ দিন ছুটি ঘোষণার পর মানুষ ইচ্ছামতো গ্রামে ফিরেছেন। আসা-যাওয়ার পথে এসব মানুষ অন্যদের সঙ্গে মিশেছেন, আবার গ্রামে ফিরেও পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সংস্পর্শে থাকছেন। সেদিক চিন্তা করেই এখন গ্রামেও ঝুঁকি তৈরি হলো।
তবে জেলা প্রশাসক,পৌরসভা ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে গ্রামে ফেরা এসব মানুষের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিদেশ ফেরতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন প্রশাসন। অন্যদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তা কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে,আগে থেকে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেক ব্যক্তিই তা মানছেন না। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়। শর্ত না মানার দায়ে ২-১জনকে জরিমানা করা হয়েছে। অন্যত্র থাকার কারণে বিদেশফেরতদের ঠিকানায় গিয়েও অনেককে পাওয়া যাচ্ছে না।
অপরদিকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে ‘নিজে নিরাপদ থাকি, সবাইকে নিরাপদ রাখি’ এই আহŸান জানিয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা ও পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে’ সকাল-সন্ধ্যা মাইকিং করে বলা হচ্ছে, পৃথক কক্ষে অবস্থান করুন। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রাখুন। অন্তত ১৪ দিন বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। এসব বিষয় না মানলে নিজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ প্রতিবেশী সবার জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে। সর্বোপরি দেশের সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.আকতারুজ্জামান বলেন, দেশের বাইরে থেকে গ্রামে ফিরে আসার ঘটনা নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। যেহেতু সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাবে না, সুতরাং তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলোর যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ, যারা বাড়িতে ফিরেছেন,তাদের নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে দূরত্বে রাখতে হবে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহিন রেজা বলেন, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সবকিছু সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যদি এসব নির্দেশনা মেনে না চলেন, তাহলে ঝুঁকি তৈরি হবে। সেটি সবাইকে বুঝতে হবে। তিনি বলেন, সরকার সবাইকে রক্ষা করতে চায়। যেমন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হলো, কিন্তু অনেকে তা মানলেন না।
এর মধ্য দিয়ে নিজের পাশাপাশি পরিবার, প্রতিবেশী ও দেশের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেললেন। এরপর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠিয়ে খুঁজে বের করতে হচ্ছে। জরিমানা করাটা সত্যিই দুঃখজনক। রোগটি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে,সেজন্য দেশের বাইরে থেকে ফিরে আসা মানুষদের, হোম কোয়ারেন্টাইনে শর্ত মেনে ঘরের মধ্যে পৃথকভাবে অবস্থান করে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী সবার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে আমরা এই রোগটি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো। সুতরাং সবাইকে এই নির্দেশনাটি মেনে চলতে হবে।
সকলের সচেতনতার জন্য মাইকিং,লিফলেট বিতরন ছাড়াও বাইরে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা,পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্ব.বা/বা