দর্শনার্থীশূন্যে বাঘার অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র

রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা: হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরপে শাহ দৌলার পূণ্যভুমি রাজশাহীর ঐতিহাসিক খ্যাত বাঘা। দীর্ঘ বছর ধরে অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বাঘার ঐতিহাসিক স্থাপনা, শাহী মসজিদ, হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরপে শাহ দৌলার মাজার এবং দিঘী প্রাঙ্গন এলাকা। নতুনভাবে যোগ হয়েছে দিঘীর পশ্চিম পাড়ে নির্মিত যাদুঘর। নিরিবিলি ও যানজটমুক্ত এলাকা হিসাবে এসব স্থানসহ পদ্মার পাড়কে বেছে নেয় দর্শনার্থীরা। ছুটি পেলেই ভ্রমণপ্রিয়সু অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসেন এসব এলাকা। বর্তমানে করোনার প্রভাবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো একেবারেই সুনশান। উৎসব পার্ক,প্রগতি পার্ক এলাকাগুলো এখন একেবারেই নীরব। বাজারে আসা মানুষগুলো তাড়াহুড়ো করে পাড়ি জমাচ্ছে নিজ নিজ বাড়িতে।

জানা গেছে,করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে উপজেলা প্রাসনের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের বাঘায় আসতে নিরুৎসাহিত করেছেন। এর পর থেকেই যেন পাল্টে গেছে অঘোষিত পর্যটনকেন্দ্র বাঘার চেহারা। বিশেষ করে শুক্রবার বিভিন্ন যানবাহনে মানত নিয়ে আসা হাজারো মানুষের সেই কোলাহলও আর নেই। এদিন বাদেও বিকেল হলেই দিঘীর চারপাশ জুড়ে বসতো সারাদিনে দেখা না হওয়া বন্ধুদের নিয়ে একটু আড্ডা। কেউ মাজারে আসতো মনবাসনা পূরণের আশায়। আবার কেউ আসতো নামাজ আদায় করতে।

এখন দর্শনার্থী শূন্য যাদুঘর। এসব স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রতিটি দর্শনার্থীর আবেগঘন স্মৃতি আর বুক ভরা ভালোবাসা। করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে যেন থমকে গেছে সবকিছুই। তবে দিঘীর ছলাৎ ছলাৎ পানির আওয়াজন বেশ জোরেই শোনা যাচ্ছে এখন। কান ঝাঁঝালো বিতর্ক হয় না এখন। প্রতিটি বিকেলে নিয়ম করে ফুটবল খেলা আর সন্ধ্যা হলেই আশপাশের চায়ের দোকানে চা আর লাড্ডু খাওয়ার সেই দৃশ্য আর নেই। তালা ঝুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি রুমে রুমে। শহীদ মিনারটা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।

দর্শনার্থীদের অনুপস্থিতিতে প্রকৃতির সরব উপস্থিতি এখন বর্ণনা করার মতো। অন্যান্য সময়ে যেখানে থাকতো লোকারণ্য, এখন সেসব জায়গায় সুনশান নীরবতা। সকাল থেকে সন্ধ্যা কেটে যাচ্ছে একই নিয়মে। ভরদুপুরে ডাকছে ডাহুক আর সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁ পোকা। এমন চিত্র এখন বাঘা ও এর আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর। মনভোলানো দৃশ্যপট যেন আবার নতুন করে সাজিয়েছে প্রকৃৃতি। বাঘা শাহী মসজিদের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান ও ওয়াকফ্ এষ্টেটের মোতয়ালীø খন্দকার মুসুরুল ইসলাম জানান, শুধু পর্যটন নয়, সকল ব্যবসায় করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, লোক শূণ্য মাঠে, দিঘীর চারপাশের পাতাবিহীন প্রতিটি গাছ ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। এইতো কদিন পরই নতুন পাতা গজাবে। সকালে মন মরা গাছের ডালে পাখিরা গলা বাজিয়ে গান করে। এমন সুনশান নীরব পরিবেশে কার না ইচ্ছে করে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে।

কেমন যাচ্ছে করোনার ছুটির দিনগুলো। জানতে চাওয়া হয়েছিলো শিক্ষার্থীদের কাছে। কলেজ পড়–য়া ডলার হোসেন বলেন, করোনা আমাদেরকে খুবই কঠোরভাবে নিয়মানুবর্তিতা শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। একটু ভিন্নভাবে ভাবলে দেখবেন কোয়ারেন্টাইনের এই অফুরন্ত অবসর সময়টা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো। কেউ এই সময়টাকে পুঁজি করে নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে, কেউবা হারিয়ে যাবে অন্ধকারে। নিজের লক্ষ্য ঠিক করে কাজগুলোকে গুছিয়ে নেয়ার এইতো সময়। এই অবসর সময়ে আমি বিভিন্ন বই পড়ছি। সবারই এই সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত এবং যেকোনো মূল্যে নিজেকে এবং আশেপাশের সবাইকে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত রাখা উচিৎ।

শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ বলেন, এমন অবসর কখনো চাই না, যেখানে থাকবে শুধুই আতঙ্ক-ভীতি, থাকবে প্রিয়জনদের থেকে দূরে সরে গিয়ে সময় যাপন। এই হোম কোয়ারেন্টাইনের সময়টাতে সবথেকে বেশি মিস করি ঐ সব মানুষদের, যাদের নিয়ে আমার প্রতিমুহূর্ত অতিবাহিত হত এবং প্রিয় কলেজকে।

কথা বলেছিলাম উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও শরীর চর্চা শিক্ষক জাফর ইকবালের সাথে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠকে খুব বেশি মিস করছি। ছেলেদের নিয়ে কবে যে মাঠে নামাবো, সেই প্রহর গুণছি। ক্রিকেটার আবু হেনা মোস্তফা জামান রানা বলেন,পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে খেলাধুলা মুখর হবে আশা করি।

 

মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন বলেন,অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে টিভি চ্যানেল কিংবা অন্যগনমাধ্যমে নেগেটিভ খবর শুনলেই মনের ভেতর বিষন্নতা কাজ করে। এর পরেও নিজে ও অপরকে বাঁচাতে সবাইকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা,ঘর থেকে বের না হওয়া এবং নিজে নিজে সচেতন হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু তবুও মনে হয় সকাল ৮টা থেকে রাত অবধি ক্লান্তিময় রুটিনটিও বর্তমান অবস্থা থেকে ঢের ভালো ছিলো।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *