নাটোরের ইউপি মেম্বার “শাহিন শাহ” জিরো থেকে হিরো

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী
আল-আফতাব খান সুইট, নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের  ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহিন শাহ জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। সম্প্রতি চাল চুরির ঘটনায় তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক সাসপেন্ড হয়েছেন অপরদিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক পদ থেকেও বহিস্কার করেছে দলটি।
জানা যায়, বোয়ালিয়া বাজারের পাশে বিলাশ বহুল দোতালা বাড়ি করেছেন।  এসি লাগানো বাড়িতে তাঁর রাজকীয় বসবাস। রয়েছে দুটি ট্রাক। বোয়ালিয়া বাজারে নিজস্ব অফিস থেকে পরিচালনা করা হতো তার যতো অপকর্ম।
গরীবের চাল চুরি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা,  কার্ড করে দেবার জন্য ৫ হাজার টাকা দিতে হতো তাঁকে। টাকা না দিল কার্ড হতো না কারো।  প্রতিবন্ধীদের কার্ড এবং ভিজিএফ কার্ডের জন্য ও গুনতে হতো টাকা। সম্প্রতি চাল চুরির পরে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে এসব তথ্য।
স্থানীয় হায়দার আলী জানান, বাড়িতে কারেন্ট নেয়ার কথা বলে তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। আলহাজ্ব মো: হেলাল উদ্দিন জানান, আমার দোকান তাঁর নেতৃত্বে ভাংচুর করা হয়। আমার জায়গা দখল করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, গরীবের হাতে অর্ধেক কার্ড নাই। মেম্বার আর কিছু পাতি নেতাদের হাতে কার্ড। জনসম্মুখে নতুন করে কার্ড করে দেয়া হোক। আর লুকোচুরি নয়। চোরদের সুযোগ দিলে সচ্ছতার সাথে চুরি করবে।
বাগমারার মিজান জানায়, সে ৪০০ হাঁস কিনে নেয় ৩০ হাজার টাকা দেয়। পরে বাকি ৩০ হাজার টাকা হাস মালিক আব্দুল মালেক কে না দিয়ে টাকা নেয় শাহিন শাহ, এ টাকা আর দেয়নি শাহিনশাহ।
বোয়ালিয়া বাজার পাড়ার বাসিন্দা লাইলী ও পেয়ারা বেওয়া জানান, দুজনের কাছ থেকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেবার কথা বলে ৪ হাজার টাকা নেয়। ১০ টাকা কেজী চালের কার্ড ২০ বিঘা মালিক সুজিত, ধান ব্যবসায়ী পাকা বাড়ি, কোটিপতি লিটনকে করে দেয়। এছাড়া তার আত্নীয় স্বজনের নামে কার্ড করে দিয়েছে এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে ঐ ওয়ার্ডের প্রতিটা গ্রামে অপকর্ম আর দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। এলাকার উন্নয়ন না করে জনগনের টাকা আত্নসাৎ করে কোটিপতি বনে গেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, পাঁচপাকিয়া গ্রামের জালালের বউ কে কার্ড করার কথা বলে ৪ হাজার টাকা নেয়।
দুদু কে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেবার কথা বলে ৪ হাজার টাকা নেয়।
মাসিন্দার বাবলু নামে এক হিন্দুর ৭ শতক জমি বোয়ালিয়া বাজারে দখল করে রেখেছে।  কৃষক হেলালের জায়গার কিছু অংশ দখল করে বাড়ি করেছে সে। খরচগাড়ির নুর ইসলাম তার কাছ থেকে ও টাকা নিয়েছে। অথচ সে একজন প্রতিবন্ধী।
খরচগাড়ির আনিসুর রহমান তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের, তাঁর ২০ বিঘা  জমি আছে। তাকেও টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দেয়া হয়েছে। খরচগাড়ির ইয়াদুলকে সোলার দেয়া হয়। পরে তার নামে বরাদ্দকৃত সোলার তার জামাই মোফাকে দেয়া হয়। খরজগাড়ির আরিফুল কে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়ে ৫২০০ টাকা নেয়।
মাসিন্দার নরোত্তমের পুকুরে মাছ নিধনের ঘটনায় থানায় টাকা দেয়া লাগবে বলে ১২ হাজার টাকা নেয় সে।
এতিম মেয়ে তহমিনার কাছ থেকে জমি দখলের নামে শামসুলের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে জমি দখল করে নেয়। জমির পরিমান ১ বিঘা ১৫ কাঠা। মাসিন্দার নিতাই গারু চন্দ্র এর কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ৭ হাজার টাকা নেয়।
স্থানীয়রা জানায়, ১২ বছর আগে মানুষের দোকানে দর্জির কাজ করতো,এখন ২ টি ট্রাকের মালিক।  স্বপ্না ও তাজিম ইন্টার প্রাইজ নামে বোয়ালিয়া বাজারে রয়েছে তেল সারের দোকান। রয়েছে দোতালা বাড়ি, এসি রুম।ঐ গ্রামের মৃত শাহজাহান আলীর পুত্র শাহিন শাহ, তার পিতা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাইটগার্ড ছিলেন। রাতারাতি  কোটিপতি বনে যাওয়া শাহিনশাহের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকার মানুষ। তারা তার সুষ্ঠু বিচার চায়।
সিংড়া থানার ওসি নুর আলম সিদ্দীকি জানান, ইউপি মেম্বার শাহিনশাহ এর বিরুদ্ধে সরকারী চাল চুরির অপরাধে সিংড়া থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।  তদন্তকারী অফিসার মোজাম্মেল হক বিষয়টি তদন্ত করছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *