নাটোরে টেলিভিশন চুরি, পিয়ন চাচাতো ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে বিপাকে প্রধান শিক্ষক

রাজশাহী

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: নাটোরের গুরুদাস উপজেলার গোয়াল শুড়া পাটপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের টেলিভিশন চুরিকে কেন্দ্র করে স্কুলপাড়া সহ এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনা সুত্রে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল স্কুলের নৈশ প্রহরী আবু তালেব (৫৫) তার দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ী চলে যান । ২১ তারিখ দুপুর তিন টার দিকে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম নৈশ প্রহরী আবু তালেবকে জরুরী ভিত্তিতে ডেকে পাঠান। আবু তালেব স্কুলে আসলে প্রধান শিক্ষক স্কুলের একটি রুমের ভাঙ্গা জানালা দেখিয়ে বলেন, স্কুলের টেলিভিশন চুরি হয়েছে এখন যদি থানা পুলিশ করি তুমি ফেঁসে যাবে। যদি বাঁচতে চাও তাড়াতাড়ি টেলিভিশনের ক্ষতি পূরণ দাও, নৈশ প্রহরী তালেব ঘটনার আকস্মিকতায় উপায়ান্তর না পেয়ে তড়িঘড়ি করে আতিœয়-স্বজনদের কাছে থেকে দশ হাজার টাকা ধার করে এনে ক্ষতি পূরণ বাবদ প্রধান শিক্ষকের হাতে দেন।

এই ঘটনার তিন থেকে চার দিন পর তালেব লোক মুখে জানতে পারেন চুরি যাওয়া টেলিভিশন টি স্কুলের পিয়ন সুলতানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিঠুর বাবার বাড়িতে দেখা গেছে। তালেব বিষয়টি জানার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীমকে জানালে তিনি টেলিভিশনটি উদ্ধারে কোন তৎপরতা দেখাননি। পরদিন সকালে যাবেন বলে তালেব কে জানান, এদিকে তালেব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের খোঁজ করতে থাকেন। পরদিন তালেব চুরির ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন এমন দুই জনের খোঁজ পান। তাদের কাছে গিয়ে তালেব চুরির বিবরণ শুনে আবারো প্রধান শিক্ষকের নিকট যান এবং স্কুল পিয়ন সুলতানের জড়িত থাকার কথা বিস্তারিত জানান। স্কুল পিয়ন সুলতান সম্পর্কে প্রধান শিক্ষকের চাচাতো ভাই হওয়ায় তিনি বিপাকে পড়ে যান। তিনি তার চাচাতো ভাইকে বাঁচানোর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেন।

এদিকে চুরির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক মেম্বার বিউটি বেগম সাপ্তাহিক নবজাগরণকে জানান, ঘটনার দিন আমি বাড়ির বাইরে গাছের ছায়ায় বসে ছিলাম, এমন সময় মিঠুকে স্কুলের দিক থেকে একটি টিভি মনিটর হাতে করে নিয়ে আসতে দেখি। এর পাঁচ মিনিট পর স্কুলের পিয়ন সুলতান তার কাছে আসে, তারা দু জনে কিছুক্ষণ কথা বলে এক সাথে চলে যায়। আমার কাছে স্কুলের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, থানা থেকে পুলিশ সহ আরো অনেক জন এসেছিল তাদের সবাই কে আমি বলেছি। এরপর সুলতান তার আন্তীয়-স্বজন সহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিয়ে এসে আমাকে তার নাম না বলার জন্য হুমকি ধামকি দেয়। আমার সাথে আরো দু-জন চুরির ঘটনা দেখেছে কিন্তু তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখানোর জন্যে এখন তারা মুখ খুলছেনা। কিন্তু আমি একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি হওয়ায় আমি তো আর দুই রকম কথা বলতে পারিনা।

এদিকে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে ১৬ মার্চ স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। নয় এপ্রিল শিক্ষকরা একদিনের বেতন করোনা ভাইরাসের জন্য দান করতে এসে দেখে স্কুলে টিভি নাই। প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করা হয় আপনি নৈশ প্রহরী কে টিভি চুরির বিষয়টি ২১ তারিখে জানালেন এবং নয় এপ্রিল থেকে একুশে এপ্রিল এই দীর্ঘ সময়ে আপনি নিকটস্থ থানাকে জানাননি কেন ? এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি। নৈশ প্রহরীর নিকট থেকে ক্ষতি পূরণ বাবদ দশ হাজার টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন , আমি কোন নগদ টাকা গ্রহণ করিনি, নৈশ প্রহরী আবু তালেবের অনুরোধে এবং তার সাথে আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভালো সম্পর্ক থাকার দরুণ টেলিভিশনের বদলে একটি টেলিভিশন নেওয়া হয়েছে ।

তাকে আরও প্রশ্ন করা হয় যে, পরর্বীতে যখন জানলেন আপনার চাচাত ভাই আপনার স্কুলের পিয়ন সুলতান টেলিভিশন চুরির সাথে জড়িত রয়েছে তখন কি আপনি সুলতানের বিরূদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং নৈশ প্রহরীর টেলিভিশন কিংবা টাকাটা ফেরত দিয়েছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান আসলে তারা কেউই চুরির সাথে জড়িত নই আমার মনে হয় তৃতীয় কোন পক্ষ এই চুরিটি করে থাকতে পারে। আর নৈশ প্রহরী তালেব যদি দরখাস্ত করে টাকা বা টেলিভিশন ফেরত চায় তাহলে স্কুল কমিটির সাথে আলোচনা করে টাকা বা টেলিভিশন ফেরত দেয়া হবে।

এদিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ধারা বাড়িশা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, ঘটনাটি আমরা জানি। প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করেছি , একজন সাবেক মহিলা মেম্বার সহ দুই জন স্কুল পিয়ন সুলতান ও তার বন্ধু মিঠুকে টিভি নিয়ে যেতে দেখেছে এবং কয়েক জন ঘটনাটি অস্বীকার করেছে। এই বিষয়টি নিয়ে গুরুদাস পুর পৌরমেয়র শাহনেওয়াজ মহোদয় কে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়েছিল তিনি নৈশ প্রহরী আবু তালেবকে দশ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেছেন।

স্কুল পিয়ন সুলতানের বিরূদ্ধে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আরো অধিক তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে গুরুদাসপুর টিএনও তমাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমি জানি, জেলা শিক্ষা অফিসারকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভুক্ত-ভোগী নৈশ প্রহরী আবু তালেব জানান ,আমি ন্যায় বিচার চেয়ে গুরুদাসপুর সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছি, আশা করছি এখন আমি ন্যায় বিচার পাব।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *