করোনায় আবাসন খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের নিকট প্রনোদনা প্রেরনা ও পলেসি সহায়তা চায় ‘রেডা’

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর কারনে থমকে গেছে। স্থবিরতা নেমে এসেছে জীবন যাত্রা সহ ব্যবসা বানিজ্যে। এর কারনে চলমান লকডাউনে রাজশাহীর আবাসন নিয়ে কাজ করা রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপার্স কোম্পানীগুলো আজ চরম সংকটের মুখে পড়েছে। রাজশাহীকে বদলে দিতে নিরলসভাবে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ থাকলেও চলমান সংকটে আজ তাদের চরম সংকটের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। প্রায় দুই লক্ষ কর্মরত জনবল যেখানে কর্মের সাথে জড়িত সেখানে এই সংকটে সেই পরিবারগুলোর মাঝে বিরাজ করছে চরম উৎকন্ঠা। তাই এই সংকট থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে ও রাজশাহীর আবাসন খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের নিকট প্রনোদনা প্রেরনা ও পলেসি সহায়তা চায় আবাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্যয়ে গঠিত সংগঠন রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপার্স এ্যাসোসিয়েশন (রেডা)। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে নগরীর অলোকার মোড়ে অবস্থিত রেডা’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের নিকট বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আল-আকসা প্রাঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, রেডার সভাপতি ও রহমান ডেভেলর্পাস এর ম্যানেজিং পাটনার তৌফিকুর রহমান লাবলু, রেডার সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফিরোজা ইঞ্জিনিয়ারিং কোঃ-এর সত্ত¡াধিকারী মেজবাহুল বারী সওদাগর, আদ-দ্বীন প্রোর্পাটিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন আলী, পারফেক্ট লিভিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এম সিহাব পারভেজ, সামস্ রিয়েল এস্টেট কোঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও ডেভলপার কবির হোসেন, শ্যামল ছায়া হাউজিং লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতারুল হুদা রুমেল, ড্রিম স্মিথ প্রোর্পাটিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম দস্তগীর, এ্যারিসটোক্রেট ডেভেলপার্স এর ম্যানেজিং পাটনার আবুল হাসিব আশিকুল হক, ক্রিষ্টাল হোল্ডিংস লি: এর চেয়ারম্যান আল মামুন, রাঙাপরি ডেভেলর্পাস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জল কবির, রিচ টাওন লি: মাকসুদুর রহমান, সবুজ প্রোপাটিজ এর সবুজ খান এবং রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এর সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদুর রহমান রিঙ্কুসহ বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আল-আকসা প্রাঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, আমরা রাজশাহীর এলাকাভুক্ত রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপার্স এ্যাসোসিয়েশন (রেডা) রাজশাহী এর সদস্যবৃন্দ বিগত কয়েক বছর ধরে মহানগরীর আবাসনখাত উন্নয়নে কাজ করে আসছি। বর্তমান উন্নয়ন বান্ধব সরকার হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান এর সহযোগীতায় এই উন্নয়নের অংশীদার হিসাবে গ্রীন সিটি ও ক্লীনসিটি খ্যাতে আবাসন খাত উন্নয়নে আমাদের অর্জন আশানুরুপ। তবে বর্তমানে করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা চরম দুঃসময় অতিবাহিত করছি। বর্তমানে আমাদের নির্মিত ফ্ল্যাটগুলো অবিক্রিত থাকায় এবং ইতিপূর্বে ক্রয়ের চুক্তিবদ্ধ সম্মানিত ক্রেতাগণ কর্তৃক কিস্তির টাকা প্রদান বন্ধ রাখায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ (প্রকৌশলী, ম্যানেজার, হিসাবরক্ষক, সুপারভাইজার, মিস্ত্রি, গার্ড ইত্যাদি) এর মাসিক বেতন ভাতাদি প্রদান করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তথাপিও এই দুর্যোগকালীন সময়ে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হয়নি। বরং তাদের প্রয়েজনীয় আর্থিক সহযোগীতা প্রদানসহ সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে আমরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে ১০ টন চাল, ৪০০ প্যাকেট নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ৫ হাজার মাস্ক প্রদান করেছি।

মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ২১১টি সহযোগী শিল্প এখন প্রায় অচল। আর ১৮ খাতে বিভক্ত পণ্যভিত্তিক উপখাত হলো ৪৫৮। এই উপখাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। বর্তমানে এই শিল্প একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্মাণ খাতে দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আবাসন শিল্পের ৩৫ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ ক্রেতাদের কিস্তির ওপর ভিত্তি করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। অধিকাংশ ডেভেলপারের সঙ্গে তফসিলি ব্যাংকের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সুযোগ-সুবিধা নেই। তারা নিজ নিজ বিনিয়োগ এবং ক্রেতার কিস্তির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। করোনার প্রভাবের কারণে ক্রেতারা কোনা কিস্তি দিচ্ছে না। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা না থাকার কারনে ডেভেলপাররা গভীর সংকটে পড়েছে। অফিস পরিচালনা, নির্মাণ কাজ এবং দৈনন্দিন জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে।

 

তিনি আরও বলেন, বর্তমান এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে (রেডা) সকল সদস্যভুক্ত সদস্যের প্রজেক্টের মেয়াদ অতিরিক্ত ১ বছর বৃদ্ধি করা হল। বর্ধিত এই সময় প্রজেক্টের মুল মেয়াদের সাথে যোগ হয়ে যাবে। অত্র সময় মেয়াদে জমির মালিক, ফ্ল্যাট ক্রেতা কোন প্রকার ভাড়া বা ক্ষতিপুরণ দাবী করতে পারবেন না। পরবর্তী সময়ে করোনার প্রভাবে দেশের অবস্থা বিবেচনা করে এই মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।

রেডা’র সাধারন সম্পাদক বলেন, করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে রাজশাহীর আবাসন শিল্পকে বাঁচাতে এ শিল্পের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী হিসাবে আমরা রেডার সদস্যবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিন্মে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় সহযোগীতা কামনা করছি।

এর মধ্যে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রনোদনা প্যাকেজ হতে রেডার বরাবর ২০০ কোটি টাকার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী প্রনোদন প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করছি।

রাজশাহীস্থ ব্যাংকগুলো অদ্যাবধী আবাসন খাতের বিনিয়োগকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সহায়তা প্রদান করেনি। বর্তমানে তাদেরকে এ শিল্পে সহজশর্তে দ্রæত ঋণ প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা আবশ্যক।

২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চাই।

 

নিশ্চিত করতে হবে ভয়মুক্ত পরিবেশ। এর পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়াগুলো সহজ করে জটিলতা দুর করতে হবে। অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে বাড়বে কর্মসংস্থান। গতি আসবে অর্থনীতিতে। ঘুরে দাড়াবে বাংলাদেশ। এয়াড়াও ফ্ল্যাট ও জমির রেজিষ্ট্রশন খরচ অর্ধেক করার আবেদন জানাচ্ছি।

 

প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রনোদনা চেয়ে মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর তথা সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে, আগামীর চ্যালেঞ্জ মোবাবেলায় এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আগামীর সংকট সহজে মোকাবেলা করতে এর সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ রাজশাহীর ২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রের হাত থেকে বাঁচাতে রেডার সদস্যদের দরকার প্রনোদনা, পলেসি এবং প্রেরনা। সর্বপরি করোনায় ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা যারা কাজ করছেন সাংবাদিক, ডাক্তার, পুলিশ প্রসাশন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চেম্বার অব কমার্সকে জানায় আন্তরিক ধন্যবাদ।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *