বাঘায় আবারো পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই অসুস্থ পশু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ

রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় আবারো অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে জবাই করা সেই গবাদিপশুর মাংস ফ্রিজে রেখে বিক্রি করছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (১২-০৬-২০২০) বাঘা বাজারে শিরোল ও সাজেদুল নামের স্থানীয় দুই মাংস ব্যবসায়ী (কসাই) ওই মাংস বিক্রি করছিলেন। বিষয়টি জানাজানির পর সেই মাংস স্থানীয় বাঘা বাজারে বিক্রি না করে পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলায় বিক্রির কথা জানা গেছে। শুধু তারাই নয়, অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে কতিপয় মাংস ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে খাওয়ার অনুপোযোগী পশু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে,মাংস ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাড়িতে প্রায়ই জনের ফ্রিজ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তারা অসুস্থ পশু জবাই করে সেই মাংস ফ্রিজে রেখে বিক্রি করেন।তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই গরু-মহিষ জবাইয়ের কথা স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাপ্তাহিক বাঘার হাটে মাংস বিক্রির জন্য পেটে বাচ্চা থাকা একটি গাভী জবাই করেন উপজেলার বেলালের মোড় এলাকার অপর এক মাংস ব্যবসায়ী। সেই গাভীটি জবাই করার পর বাচ্চাটি মারা যায়। ঘটনা জানাজানির পর, কতিপয় ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে মাংস নিয়ে সটকে পড়েন মাংস ব্যবসায়ী (কসাই)। এর আগে মরা গরু জবাই করে মাংস বিক্রির সময় হাতে নাতে ধরা পড়েন গাওপাড়া এলাকার দুই মাংস ব্যবসায়ী। তাদের আটক করে মাংস ও মাংস বিক্রির সরঞ্জাম জব্দ করে পুলিশ। পাশর্^বর্তী লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া গ্রামের এক কসাইয়ের বাড়িতে গরুটি জবাই করে সেই মাংস বাঘা বাজারে বিক্রি করছিলেন তারা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যবসায় জড়িত অন্যরা পালিয়ে যায়।

এদিকে ডাক্তারি পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই উপজেলাসহ পৌর এলাকার প্রায় সব হাট-বাজারে প্রতিদিন গরু-মহিষ ও ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করেন মাংস ব্যবসায়ীরা। লোকচক্ষুর অন্তরালে জবাই করা অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন তারা। একই অবস্থা ছাগলের ক্ষেত্রেও। কিন্তু মাংস বিক্রয় ও পশু জবেহ করার নির্দিষ্ট বিধিমালা থাকলেও এর সামান্যতম প্রয়াগ নেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। স্থানীয় সরকারের ইউনিটগুলোর নিরব ভ‚মিকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা ও পৌরসভার অন্তর্গত বেশকিছু অসাধু মাংস ব্যাবসায়ী (কসাই)।

স্থানীয় আব্দুর রশিদ তুফান নামের একজন জানান, আরো অনেকেই এ ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। দেখ ভালের কেই না থাকায়, অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যেই অসুস্থ গবাদিপশু জবাই করে মাংস বিক্রি করে থাকেন। আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ। জামাল নামের এক ক্রেতা বলেন, গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই জবাই করা হয়। কিন্তু জবাইয়ের আগে পশু অসুস্থ্ নাকি সুস্থ ছিল আমরা তা অনেকেই জানি না।

ফ্রিজে রাখা মাংস বিক্রির কথা জানিয়ে, মাংস ব্যবসায়ী শিরোল বলেন, সেই মাংস অসুস্থ কিংবা মরা গরুর নয়। সেই মাংস বিক্রিতে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেয়। পরে মেয়র এসে ফ্রিজে রাখা মাংস বিক্রি করতে নিষেধ করেন। ওই মাংস স্থানীয় বাজারে বিক্রয় না করে লালপুরে বিক্রয় করেছেন বলে জানান তিনি। স্যানিটারি পরিদর্শক আব্দুল হান্নান জানান, তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার আইনের বিধিমতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাঘা পৌর মেয়র বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর মাংস মাটিতে পুতে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। পরে সেই মাংস কোথায় বিক্রি করেছেন, তা জানা নেই। তবে লোকবলের অভাবে নিয়মিত কসাইখানা পরিদর্শন করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও মাংসের মান নির্নয়ে ভবিষ্যতে অসাধু ব্যাবসায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মেয়র। উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহিন রেজা বলেন, আগামীতে কেউ এ ধরনের কাজ না করে এবং সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিবেন।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *