নাটোরের ওয়ালিয়ায় পানি বন্দি ৫’শতাধিক মানুষ, ভোগান্তি চরমে!

রাজশাহী লীড
আল-আফতাব খান সুইট, নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া গ্রামটি লালপুর থানার উঁচু স্থান হিসেবে পরিচিত। ৯৮’র বন্যাতে যখন গোটা লালপুর পানির নিচে নিমজ্জিত তখনও ওয়ালিয়া গ্রাম বন্যা কবলিত হয়নি। অথচ বর্ষার পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় এই এলাকার ৪টি বৃহৎ মহল্লা (পূর্ব সাজি পাড়া, পূর্ব কারিগর পাড়া, আমিন পাড়া এবং পালপাড়া) সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। আজ প্রায় ২মাস যাবত এই এলাকার ৫’শতাধিক মানুষ পানি বন্দি জীবন যাবন করছে। এরই মধ্যে গত ৩/৪ দিনের ভারী বর্ষনে এখন মানুষের ঘরের মধ্যে পানি। দুঃখের বিষয় এলাকাটির চতুর্দিকে পাকা রাস্তা থাকলেও নেই বর্ষার পানি নিষ্কাষনের কোন সু-ব্যবস্থা। পানি উঠে গেছে মসজিদ সহ পাকা রাস্তায়।
এই এলাকার বর্ষার পানি আগে নিষ্কাষন হতো ওয়ালিয়া আমিন পাড়া গোরস্থান হয়ে ওয়ালিয়া আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল এর পাশ দিয়ে পল্লব চৌধুরীর জমির উপর দিয়ে ওয়ালিয়া মাঠ হয়ে খলিষা ডাঙ্গা নদীতে। কিন্ত গত ৩/৪ বছরে নতুন বাড়ীঘর নির্মান হওয়ায় এবং ওয়ালিয়া মাঠ,নাওদাঁড়া মাঠ ও ময়না মাঠের মধ্যে কার্লভাট গুলোতে পানির স্বাভাবিক গতিতে হয়েছে প্রতিবন্ধকতা, যার ফলে বর্ষার পানি নিষ্কাষন না হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিগত ৩/৪ বছর ধরে বর্ষার সময় এই এলাকার সাধারন মানুষ পানি বন্দি এক অসহনীয় ভোগান্তীর স্বীকার হয়।
দির্ঘ সময় জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় যেমন পানিবাহিত ও চর্মরোগের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি-বয়স্ক মানুষ, নারী-শিশুসহ গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগী নিয়েও এলাকার মানুষ অসহনীয় ভোগান্তির মধ্যে বসবাস করছে, সেইসাথে শিশুদের নিরাপত্বা নিয়েও চিন্তিত তারা, একটু অসাবধান হলেই ধটতে পারে বড় দূর্ঘটনা। ইতিমধ্যে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে, বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে পাসের এলাকা থেকে। চারিদিকে জলাবদ্ধতার কারনে বিভিন্ন এলাকাথেকে মলমুত্র ভেসে এসে ইতিমধ্যে পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী’র মধ্যে সাদ্দাম, আনিছ, সোহাগ, রফিকসহ অনেকই জানান-বাড়ীর স্বাভাবিক রান্না-বান্নার কাজ করতে হচ্ছে দূরের কোন পরিচিত জনের বাড়ীতে, রান্না করবে কোথায়? চুলাতো পানির নিচে! একই সাথে এই এলাকায় মুমুর্ষ রোগীর জন্য যেমন এ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ী সেবা পেতে ব্যহত হচ্ছে ঠিক তেমনি কেউ মারা গেলে, চারিদিকে জলাবদ্ধতার কারনে দাফন কার্য করতে চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তারা বলেন- বর্তমানে গ্যাস ব্যবহারের সুফল হিসাবে অনেকসময় বিছানার উপরে বসে কোন রকম খাবার তৈরী করে দিন পার করতে হচ্ছে। তারা আরও জানান- দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পানি নিষ্কাষন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং গ্রাম প্রধানদের সহযোগীতায় প্রতিবছর এ সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও ভুক্তভোগীরা চায় এর স্থায়ী সমাধান। এ বিষয়ে ৭নং ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জানান-এই এলাকার বর্ষার পানি প্রাকৃতিক ভাবে আমিন পাড়া গোরস্থান হয়ে আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন এর পাস দিয়ে ওয়ালিয়া মাঠ হয়ে খলিষাডাঙ্গা নদীতে চলে যেত, কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের নতুন ঘর-বাড়ীও বৃদ্ধি হচ্ছে, যার কারনে প্রাকৃতিক বহমান ধারায় প্রতিবন্ধকতার কারনেই এই জলাবদ্ধতা, সাধারন মানুষ কষ্টের মধ্যে বসবাস করছে, বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে নিরশন না হলে ভোগান্তী আরও বেড়ে যাবে তাই সরকারী প্রকল্পের মাধ্যমে এটার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এলাকার মানুষ স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষরসহ একটি লিখিত আবেদন জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যূতি জানান- আবেদন পেয়েছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকাটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *