বাঘায় পদ্মার ভাঙনে ঠিকানা হারাচ্ছে লোকজন,ছুটছে আশ্রয়ের সন্ধানে

রাজশাহী

বাঘা প্রতিনিধি: পদ্মার অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি গুটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে,ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন। চরকালিদাশখালি গ্রামের রতন আলী তাদের একজন। তার স্ত্রী সালমা জানান, সম্বল বলতে ছিল বাড়ি ভিটার ১০ কাঠা জমিই। ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন আরেক জায়গায়।
শুধু তারাই নন,তাদের মতো ভাঙনে,ঠিকানা হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন অর্ধশতাধিক পরিবার। এসব পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রাম কিংবা নিকট আতœীয়দের কাছে। ওইসব মানুষের মতো ঠিকানা হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন দুই গ্রামের ফজল আলী, গনি হোসেন, ঝড়–, হাসেম, নজিম, বাবু, টিপু, অজিত, রহিম, কেরামত, তুজাম, আসলাম, আমজাদ, আসরাম, আয়নাল, নবীর, সুজা, মান্নান, নবু, কাংগাল, হালিম, নুরু, আনোয়ার, রাজ্জাক, সিকান, মেরালী, মুক্তা, অর্জন, শুকুর, রওশনায়ারা, জয়গন, রতন, তামসের, রফিকুল, বাবুল, জিন্না, মজের, মকুল, সাইদুল, জামান, সামাদ, সাহেরা, মিজানুর, লিটন, গুলবার, আওয়াল, নিলচাঁন, কামরুল, মজিবর, সাইদুল, মধু, জহুরুল, হেজাব, দিনুখা, বদরুল ও সামাদসহ প্রায় শতাধিক পরিবার। ঠিকানা হারিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়েও দুঃচিন্তা তাদের।
পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে এ ভাঙন শুরু হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর এলাকায়। প্রায় দুই কিলেমিটার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে শতাধিক একর জমিসহ গাছপালাও। ভাঙনের কবলে পড়ে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। হুমকিতে রয়েছে লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিন মঙ্গলবার(১৪-০৭-২০) কথা হলে ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর (৩ নম্বর কালিদাসখালী চর) শহিদুল ইসলাম বলেন, একদিকে ভাঙন আরেকদিকে পাহাড়ি ঢল। সব মিলে দিশে হারা হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের মানুষ। তার কথায়, সপ্তাহখানেক আগে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর সাথে শুরু হয়েছে ভাঙন। যে সমস্ত জমি নদী গর্ভে চলে গেছে, তার সিংহ ভাগ জমিতে ছিল আম, খেজুর গাছ ও বাড়িঘর। ভাঙনের কবলে তার নিজেরও ৪ বিঘা জমিসহ আম বাগান বিলিন হয়ে গেছে পদ্মায়।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এ বছর ৬৭ হাজার টাকায় যে আম বাগানের আম বিক্রি করেছিলাম, ৮ বিঘার সেই আম বাগান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাড়িটাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন দেখে মনে হচ্ছে, কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর গ্রামের কোন চিহ্ন থাকবে না। ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর ফজলুল হক বলেন, আমার ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুই ভাগ পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। বাঁকিটাও পদ্মায় বিলিনের আশঙ্কা। গত কয়েক বছরের ভাঙনে চকরাজাপুর গ্রাম এখন নদীর মধ্যে।
৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর আনোয়ার শিকদার বলেন,নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় আমার ওয়ার্ডের কোন চিহ্ন নেই। গত দুই বছরের ব্যবধানে ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার অন্যত্রে চলে গেছে। নিজের প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, বিগত কয়েক বছরে ভাঙ্গনে পদ্মায় গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বসত ভিটা, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্টান, বিজিবি ক্যাম্প,বাজার ও মসজিদ। নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ি গড়ে তুলে বসবাস করছে। প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ। ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

স্ব.বা/বা

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *