রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

রাজশাহী লীড শিক্ষা

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংগীত প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।সোমবার (২৪ আগস্ট) সংগীত প্রশিক্ষক রবিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের যৌন নিপীড়ন সেল এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগীত প্রশিক্ষক রকিবুল হাসান রবিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন এক নারী।

লিখিত ওই অভিযোগে তিনি জানান, ১০ বছর আগে শৈশবে তিনি একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হন।

অভিযোগে ওই নারী জানান, ২০১০ সালে তিনি শিশু সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন। রাজশাহীর বাইরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি রবিনের সঙ্গে যান। সেখানে বাবা-মা না থাকার সুযোগে তাকে ধর্ষণ করেন তিনি। পরে বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন রবিন।

ওই নারী বলেন, আমার ন্যায়-অন্যায় বোঝার জ্ঞান যেমন ছিল না, তেমনি নিজের কথা অকপটে বলার সাহসও ছিল না। কোন সামাজিক সমর্থন না পাওয়ার ভয়ে আমি চুপ করে ছিলাম। তবে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার মানসিক বিপর্যয়ের সাথে সাথে আমার পড়াশোনা, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এখনও সেই ঘটনার স্মৃতি আমাকে কঠোর যন্ত্রণা দেয়, অভিযোগে বলেন ওই নারী।

পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে যান তিনি। করোনা পরিস্থিতির সময় দেশে ফিরেছেন। এখানে এসে জানতে পারেন আরও অনেকেই রবিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অনেকেই হ্যাশট্যাগ মি টু এর আওতায় স্যোশাল মিডিয়ায় তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

এ মেয়েদের অভিজ্ঞতা শুনে আমার ট্রমা ফিরে এসেছে এবং আমি কথা বলার সাহস দেখানোর জন্য তৈরি হয়েছি- তিনি অভিযোগে লিখেছেন। এই জাতীয় ঘটনাগুলো সমাজ, সংস্কৃতি, পৃথিবীকে দূষিত করছে এবং মেয়েদের জন্য পরিবেশকে অনিরাপদ করে তুলছে বলেন এ নারী।

ভুক্তভোগীর অভিযোগে, বাবা-মাও যৌথভাবে সই করেছেন। তারা লিখেছেন যে তারা তাদের মেয়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তারা লিখেছেন, আমরা এজন্যেও উদ্বিগ্ন যে ধর্ষকের মতো একজন লোক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত, সে আরও ক্ষতি করতে পারে। আমরা তার দ্রুত বিচার চাই।

অভিযোগকারী ওই মেয়ের বাবা জানান, তারা তার মেয়ের শৈশবের এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তবে আমরা লক্ষ্য করেছিলাম যে সে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মহামারি চলাকালীন সে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে তার জীবনের এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার আমাদের জানায়। তার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা মনে করে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরেই আমরা জানতে পেরেছি। আমার মেয়ে যাতে বিচার পায় সেজন্য তাকে সাহায্য করছি।

অভিযোগকারী জানিয়েছেন, রবিনের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে বিবেচনা করছেন তিনি।

এদিকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির প্রধান প্রফেসর রেজিনা লাজ জানান, এখনো অভিযোগের কপি তার কাছে পৌঁছায়নি, অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওই সংগীত প্রশিক্ষক রকিবুল হাসান রবিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির অভিযোগ বিবেচনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। রাবি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি সাধারণত তদন্ত করে অভিযোগগুলির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সূত্র: সময় টিভি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *