পৌরসভার ভাগ্য আটকা পড়েছে মামলায়!

রাজশাহী
নাটাের প্রতিনিধিঃ বাগাতিপাড়া পৌরসভার একটানা ১৬ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনিই প্রশাসক, চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালের ২৬ জুলাই প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৬ সালে প্রথম নিবার্চনে চেয়ারম্যান পদে নিবার্চিত হন। এরপর ২০০৮ সালে পদবী পরিবর্তন হয়ে মেয়র হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পৌরসভার চেয়ারে তিনি অসীন রয়েছেন একটানা প্রায় ১৬ বছর ধরে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে প্রকাশিত গেজেটের বিরুদ্ধে মামলার কারণে ৯ বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না এ পৌরসভায়।
২০০৬ সালে নিবার্চনের পর ২০১১ সালে তার মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় মেয়র হিসেবে এখনও মোশাররফ হোসেনই দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নিবার্চন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় পৌরসভার উন্নয়নেও নেই কোন গতি। ফলে পৌরসভার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। পৌরবাসীদের অভিযোগ, দীঘদিনেও পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রনালী নিস্কানসহ কোন সুবিধা মিলছেনা।
উপজেলা সদরের মালঞ্চি বাজার কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান (হবি) অভিযোগের সুরে বলেন, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মালঞ্চি বাজারের কোন উন্নতি হয়নি। উপরুন্তু পশু বাজার অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে । ব্যবসায়ীদের কোন উন্নয়ন হয়নি। অথচ ২শ টাকার  ট্রেড লাইসেন্সের ফিস এখন ১৫শ টাকা গুনতে হয় ।
পৌর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায়, সাদেকুর রহমান ও মাহমুদ সুলতান জানান, ২০০৪ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা মোশাররফ হোসেন প্রথমে প্রশাসক, পরে চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রায় ১৬ বছরে পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। পানি নিস্কাশনের নেই কোন ড্রেন ও নেই সড়ক বাতি ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন নেই। তারা অভিযোগ করে বলেন, তিনি অফিসে আসেননা। মাসের ২৫ দিনই ঢাকায় থাকেন। মেয়র মোশাররফ নিজের লোকদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাদের দিয়ে মামলা করে নির্বাচন আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি ধরেই নিয়েছেন আজীবন চেয়ারম্যান থাকবেন তিনিই। আর কখনও বাগাতিপাড়া পৌরসভার নিবার্চন হবেনা এমনটাই মনে করছেন বর্তমান মেয়ের। তাই পৌরবাসীর প্রতি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ববোধের তোয়াক্কা না করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে পৌরসভা উন্নয়নের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। পৌরবাসী একটি পৌরসভা পেলেও চেয়ারম্যানের দুর্নীতির কারনে কোন সুফল পাচ্ছেননা। তারা প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করার মাধ্যমে নিবার্চনের ব্যবস্থা করার আবেদন জানান।
তবে মেয়র মোশাররফ হোসেন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বলেন, ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পাটির্র তৎকালীন সাংসদ আবু তালহা বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দাখিল করেন। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধ মামলা করেন। ২০১০ সালে হাইকোর্টে মামলাটি দাখিল করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। তবে মোশারফ হোসেন নিজেও পৌরসভার নিবার্চন অনুষ্ঠিত হোক এমনটাই প্রত্যাশা করেন।
নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম রাব্বী বলেন, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাগাতিপাড়া পৌরসভা ২০০৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে মেয়াদ শেষ হলেও মহামান্য হাইকোর্টে মামলার কারণে এই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। মামলাটি দায়ের করেন লক্ষণহাটি গ্রামের মৃত হামিদ মোল্লার ছেলে মাইনুল ইসলাম।
২০১০ সালের ১৪ জুন মহামান্য হাইকোর্টে ৩৮৪৩ নং রিট মামলাটি করলে হাইকোর্ট থেকে রুল নিশি জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সলিসিটর উইং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তবে হাইকোটের্র কার্যতালিকায় এখনও মামলাটি আসেনি। গোলাম রাব্বী জানান, সারাদেশে পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আলোকে নাটোর জেলার সব পৌরসভার তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী বাগাতিপাড়াসহ জেলার সব পৌরসভার তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে। বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচন হওয়ার উপযোগী এবং আইনকানুন ও বিধি মেনে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও জনৈক ব্যক্তি বাগাতিপাড়া পৌরসভাটি আইনগতভাবে চলবে কি চলবে না, তার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সেখানে নির্বাচন বন্ধ আছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ বাগাতিপাড়া পৌরসভার বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা রিটের আইনগত দিকসহ কী প্রতিকার চাওয়া হয়েছে, সেই বিষয়গুলোসহ বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে আমাদের মতামত পাঠিয়েছি।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *