বাঘায় সরকারি অনুদান পেতে টাকা গুনতে হচ্ছে হত দরিদ্রদের !

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘা বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা। বাঘা উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরে এসে উপস্থিত হন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ আমিন আলী। তার অভিযোগ,বাঘা পৌর সভার ৫নং ওয়াড কাউন্সিলর এর কাছে তিনি কয়েক দফা ঘুরার পরেও তার নামে বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড জুটেনি। তাই তিনি উপজেলা সমাজ সেবায় এসেছেন।

এই অভিযোগ শুধু আমিন আলীর নয়, এবার শত-শত হতদরিদ্র ও এলাকার সুধীজনরা এই ধরণের অভিযোগ তুলেছেন বাঘার সাত ইউনিয়ন ও দুই পৌর এলাকার স্থানীয় রাজনীতিবিদ, চেয়ারম্যান-মেম্বর ও পৌর কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। তাঁরা বলছেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়তে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচী বাস্তবায়ন করছেন বর্তমান সরকার। হত দরিদ্রদের-ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মাতৃত্বকালিন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সর্বশেষ ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার কর্মচসুচী বাস্তবায়ন করছেন। তবে এসব কার্ড ও অনুদান পেতে স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং মেম্বর-চেয়ারম্যানদের দিতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। সম্প্রতি এ নিয়ে বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়নে বিক্ষোব কর্মসুচী পালন করেছেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ।

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, বর্তমান সরকার দেশের অর্থ সামাজিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন। সে লক্ষে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে-৫ হাজার ৪৬০ জন বয়স্ক মানুষ,২ হাজার ৭৫৪ জন স্বামী পরিত্যক্তা (বিধবা) এবং ১ হাজার ৪২১ জন অসচ্ছল প্রতিবন্ধী’র অনুকুলে ৬ কোটি ১২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন।

অপর দিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে- ইউনিয়ন পর্যায় বাৎসরিক ৬ হাজার টাকা হিসাবে ৯১২ জন দরিদ্র মাতার জন্য ৫৫ লক্ষ টাকা মাতৃতকাল ভাতা এবং কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা হিসাবে দুই পৌর এলাকায় ৮৭৫ জনের অনুকুলে ৫২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ভিজিডি সহায়তা ২০৬৩ জন সুবিধা ভোগীর জন্য মাসে ৩০ কেজি চাল হিসাবে বাৎসরিক বরাদ্দ এসছে ৭৪৩ মে:টন চাল ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,এইসব সরকারি অনুদান পেতে হলে স্থানীয় মেম্বর, কাউন্সিলর এবং সরকারি দলের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় নেতাদের দারস্থ হতে হয়। এ দিক থেকে যারা টাকার পরিমান বাড়াতে পারে কেবল তাদের নামে কার্ড হয়। আর বঞ্চিত হয় প্রকৃত দুস্থরা। লোকজন জানান, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ঘোষিত ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রী প্রকল্পেও এ ধরনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার আমোদপুর গ্রামের হত দরিদ্র হামিদুল ও বাবুল ইসলাম জানান, তারা সরকারি দল করার পরেও গত দশ বছরে কোন সুযোগ-সুবিধা পাইনি। এদিক থেকে খেনোয়ারা বেগম জানান, তিনি দুই হাজার টাকার বিনিময়ে বিধবা ভাতার একটি কাড পেয়েছেন। অনুরুপ কথা বলেন বারখাদিয়া গ্রামের বিধবা আমেনা বেগম। অপর এক নারী রশিদা বেগম জানান, তিনি নিজ ওয়াডে এক আ’লীগ নেতাকে ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় তার নামে সরকারি অনুদান (শিশু মাতা) কাড হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল হাসান বলেন,আমি কোন দুর্ণীতি করিনা। বর্তমানে কার্ড তৈরীর বিষয়ে অনিয়ম করছে সরকারি দলের লোকজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচী প্রকল্পে লোকমুখে কখনো-কখনো কিছু অনিয়মের কথা শুনতে পাই। তবে আমার কাছে কেও কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *