রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জয়

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুনসুর রহমান। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি ‘নৌকা’ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫১৯ ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত ‘হাতুড়ি’ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক এসএম আশরাফুল হক তোতা পেয়েছেন ৬ হাজার ৬১১ ভোট।

মঙ্গলবার রাতে এই ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজ।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে মঙ্গলবার পবায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা থেকে উপজেলার ৭৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। পরে গণনা শেষে রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আরও একজন প্রার্থী ছিলেন। তার নাম আফজাল হোসেন সুমন। ৭৯ কেন্দ্রে স্বতন্ত্র এই প্রার্থী ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮৪২ ভোট।

নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ‘তালা’ প্রতীকের প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান। তিনি পেয়েছেন ১৬ হাজার ১৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ‘বই’ প্রতীকের প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪৯৯ ভোট।

এছাড়া অপর তিন প্রার্থীর মধ্যে ‘মাইক’ প্রতীকের প্রার্থী এএফএম আহসান উদ্দিন ৬ হাজার ২৮৮, ‘উড়োজাহাজ’ প্রতীকের প্রার্থী রবিউল জামাল বাবলু ৩ হাজার ২৬৬ এবং ‘টিউবওয়েল’ প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর হোসেন ২ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়েছেন।

এদিকে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ‘কলস’ প্রতীকের প্রার্থী আরজিয়া বেগম। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৩১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি রিতা বিবি ‘ফুটবল’ প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ হাজার ৩৪২ ভোট। অপর প্রার্থী সুফিয়া বেগম ‘হাঁস’ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ২১১ ভোট।

এদিকে, ভোটগ্রহণ শেষ হতে না হতেই দুপুরে চেয়ারম্যান পদের হাতুড়ি প্রতীকের সমর্থক ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা।

যুবমৈত্রী জেলা সভাপতি মনির উদ্দীন পান্না অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র সকাল থেকেই নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের দখলে ছিল। তারা সেখানে বসে বসে চিহ্নিত করছে কারা হাতুড়ির ভোটার। যখনই হাতুড়ির কোন ভোটার ভোটকেন্দ্রে এসে উপস্থিত হচ্ছে তখনই তারা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে তাদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। তাই-ই নয় বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্যও চাপ দিয়েছে।

এভাবে ভোটগ্রহণ করায় এই পবা উপজেলা নির্বাচনকে কখনোই একটি সুষ্টু নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না বলেও দাবি করেন যুবমৈত্রীর এই নেতা।

নির্বাচনে হাতুড়ি প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক আশরাফুল হক তোতাও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, হাতুড়ি প্রতীকের ভোটারদের ভোট দিতে না দিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ভোটগ্রহণ করায় নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়েছে তা কখনোই বলা যাবে না। এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এর মাধ্যমে ভোট দেওয়ার যে গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল তা হরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন আশরাফুল হক তোতা।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপেই রাজশাহীর অন্য উপজেলাগুলোর সঙ্গে পবারও ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কথা বলে উচ্চ আদালতে করা এক রিটের কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে পঞ্চম ধাপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবারও রিট হয় উচ্চ আদালতে। তবে আদালত এবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষেই রায় দেন। ফলে এ উপজেলার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলো। অবশ্য এরও আগে ২০১৫ সালে একই কারণে তফসিল ঘোষণার পরও চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে দীর্ঘ দিন পর পবার ভোটাররা উপজেলা নির্বাচনের ভোট দিলেন।

পবায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৮ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের প্রতীকে ৪৪ হাজার ৬০০ জন ভোট দেন। এর মধ্যে বাতিল হয়ে গেছে ১ হাজার ৬২৮টি ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রতীকে মোট ভোট পড়ে ৪৪ হাজার ৫৩১ ভোট। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ১৪৮ ভোট। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রতীকে ভোট পড়ে ৪৪ হাজার ৫৩৮টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৬৬৭ ভোট। প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ভোটার ভোটকেন্দ্রেই যাননি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *