বাঘায় তরুণরা ঝুকেছে অনলাইনে আম বেচা কেনায়

রাজশাহী

বাঘা প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বাঘার আমের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে আম বেচা-কেনা। হাট-বাজারের পাশাপাশি বাড়িতে বসে বাঘার বাগানের সুস্বাদু আমের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন ক্রেতারাও। শুধু হাট-বাজারেই নয়, আমের ব্যবসার জন্য অনলাইনের ব্যবহার দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বাঘা উপজেলার অনেক তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করেছেন। এবছর গ্রুপ ভিত্তিক আম বেচা কেনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন একঝাঁক তরুণ। তাঁদের অধিকাংশই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তবে অন লাইনে আম বেচা-কেনায় গ্রাহকদের উপস্থিতি না থাকায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অর্ডার নেয়া আমের অধিকাংশ কাটুন চলে যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাহকের কাছে । এতে করে জমজমাট চলছে কুরিয়ার ব্যবসাও।

জানা যায়, গত বছর দেশে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর অনলাইনে আম ব্যবসা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন বেশ কিছু উদ্যোক্তা। সে বছর ভালো সাড়া পাওয়ায় এবার মৌসুম শুরুর আগে থেকেই বাঘার আমের গুণগান লিখে অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন । এতে তাদের যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে আম চাষিরা পাচ্ছেন ন্যায্য মূল্য।

এবারই প্রথম অনলাইনে আম ব্যবসা শুরু করেছেন এমন কয়েকজন নতুন উদ্যেক্তা জানান, নতুন ব্যবসা হলেও ভালো সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে অনলাইনে মার্কেটপ্লেস ও ফেসবুক পেজ দেখে আম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতাদের ফোন পাচ্ছেন। ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পাঠাচ্ছেন তাঁরা। তবে কুরিয়ার খরচ কম হলে তাঁদের সুবিধা হতো বলে মত তাঁদের।

রাজশাহী হিমসাগর ডট কম নামে ফেসবুক পেইজ খুলে ব্যবসা শুরু করেছেন চার তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের একজন উপজেলার দিঘা গ্রামের মেহেদী হাসান জানান, এবছর গ্রুপের মাধ্যমে গোপালভোগ ৭৫ মণ,লক্ষনভোগ ৭মণ আম বিক্রি করেছি এবং হিমসাগর ১৫ মণ আমের অর্ডার পেয়েছি। পেজের চাহিদায় ৬‘শ মণ বিক্রির আশা করছি।

আমোদপুর গ্রামের চার কিশোর উদ্যোক্তার একজন তানজিম হাসান স্বদেশ বলেন, “রাজশাহী ম্যাংগো প্রোডাক্টস ’’ নামে ফেসবুক পেইজ খুলে, চার বন্ধু মিলে গত বছর অনলাইনে আম ডেলিভারি দেয়া শুরু করি। এবারও অনলাইনে আম বিক্রি শুরু করেছেন। গতবার যারা আম নিয়েছেন তাঁদের দেখা দেখি আরো অনেকেই আমের অর্ডার দিচ্ছেন। তিনি বলেন, চেষ্টা করছি গ্রাহকদের কেমিক্যাল মুক্ত ভালো আম দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের সুনাম ধরে রাখতে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের ২‘শ মণ বিক্রির প্রত্যাশা রয়েছে।

বাজুবাঘা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা ডলার আহম্মেদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়,বাড়িতে অলস বসে ছিলাম। অন্যদের দেখাদেখি এবারই প্রথম কয়েকজন বন্ধু মিলে ফেসবুকে পেজ খুলে অনলাইনে আম ব্যবসা শুরু করেন। গুনগত মান দেখে এলাকার বাগান মালিকদের কাছে আম কিনে ১৫ মণ গোপালভোগ দিয়েছি। অর্ডার পেয়েছি ক্ষিরসাপাত ২০‘শ মণ লক্ষনভোগ ১৫০‘শ মণ ল্যাংড়া ৩০মণ ও আ¤্রপালী ২৫মণের। তিনি বলেন, চাহিদা দেখে মনে হচ্ছে প্রায় ৩০০‘শ মণ আম বিক্রি করতে পারবো।

তাদের মতো আরো অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এবার আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাগান থেকে আম কিনে, কার্টুন প্যাকিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহকের নিকটস্থ কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই হোম ডেলিভারি দায়িত্ব নিয়ে আম পৌছে দিচ্ছেন বাসায়।
অনলাইনের মাধ্যমে আম ক্রেতা জামাল উদ্দীন জানান, চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন। সময় সুযোগ আর করোনার কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হননা। যার ফলে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আম কিনেছেন। তার মতো অনলাইনে আম কিনেছেন,রিপন আহমেদ, রেশমা আহমেদ জলি, ব্যবসায়ী শাহাজানসহ অনেকেই। তারা জানান, বাজার দরের সাথে দামে কিছুটা তফাৎ হলেও ভালো আম পেয়েছেন।

কৃষি অফিসার সফিউল্লাহ সুলতান জানান, উপজেলায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার আম চাষ করা হয়েছে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১ লক্ষ মেট্রিক টন।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *