“পাল্টে গেল লাশের পরিচয়” কান্না থামলো শরিফুলের,মরদেহ সনাক্তের বাড়িতে আহাজারি!

রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী): ট্রাকচাপায় মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেই ভ্যান নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শরিফুল ইসলাম (৩৮)। সেখানে মাথা বিহীন নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ওই নারির মরদেহ উদ্ধার করে শরিফুল ইসলামের ভ্যানেই থানায় নেয়। তখনও জানতে পারেননি,নিহত ওই নারি তার মা নয়। মায়ের কাছে থাকা মুঠোফোনে কল দিয়ে জানেন, তার মা জীবিত আছেন। ঘটনার ১০ ঘন্টা পরে, সাহাদুল ইসলাম নামের একজন পরিধেয় বস্ত্র ও শরীরের গঠন দেখে মরদেহ তার স্ত্রীর বলে সনাক্ত করেন। নিহত নারির নাম সমেনা বেগম। তার বাড়ি বাঘা উপজেলার গৌরাঙ্গপুর গ্রামে। সোমবার (৩১ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহীর বাঘা পৌর সদর বাজার এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিস্ট হয়ে নিহত হন সমেনা বেগম। বাঘা-লালপুর সড়ক দিয়ে ভ্যানযোগে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন সমেনা।

প্রত্যক্ষদর্শী বাঘা বাজারের ব্যবসায়ী, শুকুর আলী জানান, ট্রাকটি বালু নিয়ে পূর্ব দিকে যাচ্ছিল। সামনে থেকে আসা ভ্যানটি পশ্চিমে যাচ্ছিল। ভ্যানের ডানদিকে বসা ছিল ওই নারি। ট্যাকটি মুখোমুখি হয়ে পাশ কেটে যাওয়ার সময় ভ্যানে ধাক্কা লাগে। এসময় ওই নারি ছিটকে ,ট্রাকটির মাঝখানে পড়ে যায়। নারির মাথার উপর দিয়ে চলন্ত ট্রাকটির পেছনের চাকা চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সড়কে পড়ে থাকে মাথা বিহীন নিথর দেহ।
শরিফুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর থেকে বাঘা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। এখানে থেকেই ভ্যান চালান। তার পৈত্রিক বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা কানাগাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম সেকেন্দার আলী। সোমবার (৩১ মে) সকাল বেলায় দিনাজপুর থেকে ফোন করে তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মা ফাতেমা বেগম (৬০)। তার বাড়িতে আসা যাওয়ার সুবাদে এলাকার অনেকেই তার মাকে চিনতেন। সোমবার বিকেল ৪টায়, ঘটনার পর পরিচিতরা তাকে জানায়,ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে তার মা মারা গেছে। খবর পেয়েই ছুটে যান শরিফুল। তখন আর মাকে চেনার উপায় নেই। থানায় মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পর,পুলিশ তার লাশ ভ্যানে তুলে রাখতে বলে। মায়ের লাশ বলে তার নিজের ভ্যানে রাখেন।
কিছুক্ষণ পরে শরিফুলের মনে পড়ে, মায়ের কাছে মুঠোফোন ছিল। ফোনটি কোথায় থাকল? তিনি মায়ের নম্বরে রিং দেন। সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে মা কথা বলে ওঠেন। কাঁদতে কাঁদতে শরিফুল বলেন, মা তুমি কোথায়? মা বলেন, ‘আমি নাটোরের বনপাড়ায়-বাসের ভেতরে।’ শরিফুল বিরাট ধন্দে পড়েন। কাপড় দিয়ে ঢাকা যার লাশ ভ্যানে তুলে রেখেছেন তাহলে সেটি তার মা নয়? নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারেন না।
এর প্রায় দুই ঘণ্টা পরে সত্যিই মা ফাতেমা বেগম বাঘায় এসে পৌঁছান। মাকে পেয়েই শরিফুল ইসলাম জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। তখন তার মা জানেন না, ছেলে কাঁদছে কেন।

 

মাকে পাওয়ার পর, শরিফুল কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে পুলিশকে বলেন, এ লাশ তার মায়ের নয়। তার মা এসেছেন। তিনি মাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে দেখান। এবার তিনি ভ্যানখানা নেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকেন। একদিন ভ্যান না থাকলে তাকে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকেরা বুঝিয়ে বলার পরে পুলিশ জব্দ করা অন্য একটি ভ্যানে লাশ তুলে শরিফুলের ভ্যানটি ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়। রাত আটটার দিকে লাশ নামিয়ে শরিফুল মাকে সঙ্গে করে রক্তমাখা ভ্যান নিয়ে থানার বাইরে আসেন। রাস্তার ওপরে এসে ভ্যানের রক্ত ধুয়ে মাকে ভ্যানে তুলে নিয়ে বাসায় যান।

মঙ্গলবার রাত ১টায় সনাক্ত করা সমেনার সেই লাশ বাড়িতে নিয়ে যার পরিবার। পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, থানা থেকে মরদেহটি সনাক্তেন পর বাড়িতে নিয়ে দাফন কাজ সম্পূন্ন করা হয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমতঃ ট্রাকচাপায় মরদেহটি মায়ের বলে সনাক্ত করেন শরিফুল। তার মাকে জীবিত পাওয়ার পরে অজ্ঞাত পরিচয়ে থানায় রাখা হয়। রাত আনুমানিক ১টার দিকে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়। নিহতের স্বামী সাহাদুল ইসলাম মরদেহ তার স্ত্রীর বলে সনাক্ত করেন। নিহত সমেনা বেগমের বাড়ি বাঘা উপজেলার গৌরাঙ্গপুর গ্রামে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ না থাকায়,পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে.

 

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *