ব্যাপারীরা না আসায় আমের বাজারে ধস

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনাভাইরাসের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে আমকেন্দ্রিক গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতবারের মতো এবারও চাঙাভাব নেই। এছাড়া ব্যবসার ধরনও বদলে গেছে। আগে এ অঞ্চলে ব্যাপারীরা এসে আম কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু করোনার কারণে তারা না আসায় আমের বাজারে ধস নেমেছে। বিকল্প হিসাবে বাগান মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিজেরাই কমিশনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আম পাঠাচ্ছেন। এতে তাদের আয় ও মুনাফার পরিমাণও কমে যাচ্ছে।

প্রতিবছর আমের মৌসুমে এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়ে ওঠে। বাগান মালিক ও চাষি থেকে আমপাড়া শ্রমিক, কুলি-মজুর, আড়তদার ও পরিবহণ শ্রমিকসহ কয়েক লাখ মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু গত বছর করোনার শুরুতে এ অঞ্চলের আম অর্থনীতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, আম হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বড় উৎস। এবার এ চারটি জেলায় আমের ফলন বেশ ভালো হলেও করোনায় আম চালানে গতি নেই। রাজশাহীসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন মাত্রার লকডাউন চলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য এলাকার ব্যাপারীরা আসতে পারছেন না। এর ওপর সংক্রমণের ভয়ে আমপাড়া শ্রমিক পেতেও সমস্যা হচ্ছে। মোকামগুলোতে চাষিরা আম আনলেও ব্যাপারীর অভাবে সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে কিছু আম বিক্রি হলেও দাম কম পাচ্ছেন তারা। প্রতিবছর এ সময়ে দৈনিক ৫০০ থেকে ৫৫০ ট্রাক করে আম চালান হতো। এবার এ সংখ্যা ৩০০ ট্রাকেরও কম। যদিও আমপাড়া, বেচা-বিক্রি ও পরিবহণ লকডাউনমুক্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চার জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৬ হাজার ২৮৭ হেক্টর আম বাগান থেকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ২৬২ মেট্রিন টন আম উৎপাদনের আশা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আম উৎপাদন ৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ আমের বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এবারও আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বাধিক সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। চাষিরা জানান, ফজলি আম বাজারে আসবে আরও দু-তিন সপ্তাহ পর। আর আশ্বিনা জাতের আম আসবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে।

রোববার দেশের সর্ববৃহৎ আমের মোকাম শিবগঞ্জের কানসাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন শিথিল হওয়ায় চাষিরা দলে দলে আম নিয়ে আড়তে আসছেন। এসব আম ক্যারেটে প্যাকিং হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। বিশ্বনাথপুর গ্রামের আমচাষি জয়েন উদ্দিন জানান, এবার আম চালান ও ব্যবসার ধরন বদলে গেছে। আগে ব্যাপারীরা মোকামে এসে আম কিনে চালান করতেন। কিন্তু গত বছর করোনা শুরু হওয়ায় ব্যাপারীরা আর আসছেন না। ফলে বাগান মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কমিশনে আম পাঠাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে। আম বিক্রির পর নির্দিষ্ট কমিশন রেখে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন আড়তদাররা। পরিবহণ খরচ বাগান মালিককে দিতে হচ্ছে। ফলে আম বিক্রি করে বাগান মালিক ও চাষিদের মুনাফা কম হচ্ছে।

কানসাট মোকামে খিরসাপাত ও ন্যাংড়া আম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে নওগাঁর সাপাহার মোকামে আমের দর রাজশাহীর বানেশ্বর ও শিবগঞ্জের কানসাটের চেয়ে কিছুটা কম বলে জানান সেখানকার আমচাষি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাপাহার ও পোরশা এলাকার বাগানগুলোর অধিকাংশ নতুন। এখানে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম বেশি। এসব আম জুনের শেষে বাজারে আসবে। তবে এখন যেসব দেশিজাতের আম বাজারে আসছে সেগুলোর দাম অনেক কম। বিক্রিও হচ্ছে কম। কারণ বাইরের ব্যাপারীরা নওগাঁয় আসছে না। ফলে বিপুল পরিমাণ আম নিয়ে বাগান মালিক ও চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। তবে নওগাঁর বাগান মালিক ও চাষিরা আশা করছেন জুনের শেষে আম্রপালি ও বারি আম উঠতে শুরু করলে আমের বাজার জমে উঠবে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কে জেড এম আব্দুল আউয়াল বলেন, সোমবার পর্যন্ত রাজশাহীতে ৩৫ ভাগ পাড়া শেষ হয়েছে। জাতভেদে আগস্ট পর্যন্ত আম আহরণ চলবে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮ ভাগ, নওগাঁয় ২১ ভাগ ও নাটোরে ২৯ ভাগ আম আহরণ হয়েছে। এসব জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার সবখানেই আমের ফলন ভালো হয়েছে। করোনার কারণে আম আহরণ ও চালানে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমের দামও কিছুটা কম। বাগান মালিক ও চাষিরা আমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তবে ফলন বেশি হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *