ধর্ষণচেষ্টার বিচার থাপ্পড়, জরিমানার টাকা মাতব্বরদের পকেটে!

রাজশাহী

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে ঘরে ঢুকে এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে খোদাবক্স (৪৪) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি তিন সন্তানের জনক।

বৃহস্পতিবার উপজেলার স্বরুপপুর নিচপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত খোদাবক্স গ্রামের মৃত বিশুর ছেলে। ঘটনার পর গ্রাম সালিশে তাকে তিনটি থাপ্পড় ও স্কুলছাত্রীর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন গ্রামের মাতব্বরা। জরিমানার সেই টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে না দিয়ে মাতব্বরদের পকেটে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুলছাত্রীর বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। তারা অনেক গরিব। গত ১০ জুন বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী খোদাবক্স তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশী এক নারী এগিয়ে আসলে পালিয়ে যান অভিযুক্ত।

পরে স্কুলছাত্রী তার ভাবিকে ঘটনাটি জানায়। বিষয়টি চাপা থাকলেও ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় জানাজানি হয়। অভিযুক্ত খোদাবক্সের  চাচাতো ভাই সেকেন্দার ওরফে সেকেন গ্রামের প্রধান মাতব্বর হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয় দেখিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।

বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ জুন রাতে গ্রাম্য সালিশে ঘটনার সত্যতা মিলে। এরপর খোদাবক্সের শাস্তি হিসেবে তিনটি থাপ্পড় ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন মাতব্বররা। জরিমানার টাকা ভবিষ্যতে স্কুলছাত্রীর ‘বিয়ের খরচের’ জন্য সেকেন্দার তার কাছে জমা রেখে দেন।

ছাত্রীর ভাবি যুগান্তরকে জানান, মাতব্বররা তাদের ইচ্ছেমতো বিচার করেছেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরও তিন সন্তানের জনক অভিযুক্ত খোদাবক্সকে তিনটি থাপ্পড় দেয়া হয় ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে আপসের চেষ্টা করা হয়। আর জরিমানার টাকাও মাতব্বরদের কাছেই আছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলেও গ্রামে থাকতে পাব না। এজন্য তাদের বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারছি না। আমাদের যে সম্মানহানি হয়েছে মাতব্বরা তো আর ফিরে দিতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে গ্রামের প্রধান মাতব্বর সেকেন্দার বলেন, গ্রামের লোকজনের সকলের যৌথ উদ্যোগে গ্রামের রাজ্জাকের বাড়ির খলিয়ানে সালিশ বৈঠক হয়। যেখানে রাজ্জাক, সেকিন মন্ডল, দুলাল ও মিঠুনসহ গ্রামের আরো মাতব্বর ও লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সালিশে উপস্থিত সবার সিদ্ধান্তে দোষী ব্যক্তির ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার ২০ হাজার টাকা আমার কাছে গচ্ছিত আছে। যখন ওই স্কুলছাত্রীর (ভিকটিমের) বিয়ে হবে সেই বিয়েতে জরিমানার সেই টাকা খরচ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গ্রামের আরেক মাতব্বর রাজ্জাক বলেন, বৈঠকে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম, এ ঘটনা তেমন কিছু বিষয় না। আমিসহ গ্রামের সকল মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে ঘটনাটি আপস করা হয়েছে।

মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *