স্টাফ রিপোর্টার: টেন্ডারের কার্যাদেশ পেয়েও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠিকমতো মালামাল সরবরাহ করেনি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের টেন্ডারে এসব ঠিকাদার কম দর দিয়েছিল।
মেডিকেল কর্তৃপক্ষ এসব ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিলেও তাদের অনেকেই চুক্তি করেনি। কেউ কেউ আংশিক মালামাল দিয়েছে। কেউ একটিও দেয়নি। ফলে এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এসব জরুরি চিকিৎসা উপকরণ ও সহায়ক সামগ্রী সময়মতো সরবরাহ না পাওয়ায় রোগীর স্বজনদের এসব সামগ্রী বাজার থেকে কিনে জোগান দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ-রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দর দিয়েছিল। ফলে তারাই টেন্ডার পেয়েছিল। কিন্তু এত কম দরে মালামাল দেওয়া সম্ভব কিনা, তখনকার প্রশাসন তা একবারও ভেবে দেখেনি। তাদের কার্যাদেশ পাঠানো হয়েছিল। যদিও অনেকেই চুক্তি করেনি। এরই মধ্যে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে এসব সামগ্রী কিনতে না পারলে বরাদ্দের টাকা ফেরত দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
জানা গেছে, গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর গজ ব্যান্ডেজসহ বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহে কয়েকটি গ্রুপের টেন্ডার ডাকেন রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টেন্ডারের সি-গ্রুপের অধীন ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ছয়টি এমএসআর (মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিক্যাল রি-এজেন্ট) পণ্য সরবরাহের টেন্ডার পায় রাজশাহীর জানে আলম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মালিক জানে আলম খান জনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। চুক্তি করার জন্য গত বছর ৩০ ডিসেম্বর তাকে চিঠি পাঠানো হয়। তবে ছয় মাসেও সাড়া দেননি জনি। এর মধ্যে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
টেন্ডার পেয়েও পণ্য সরবরাহ করেননি কেন, জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম খান জনি বলেন, করোনার কারণে বাজারে মালামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চিঠি দিয়ে আইটেমগুলোর দাম বাড়ানোর অনুরোধ করা হলেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে টেন্ডারের এমএসআর-ডি কেমিকেল রি-এজেন্ট গ্রুপের চারটি আইটেম সরবরাহের টেন্ডার পায় এনএইচ ট্রেডার্স নামের ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানও মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েও চুক্তি করেনি। সরবরাহ দেয়নি মালামালও। একই সঙ্গে বিভিন্ন গ্রুপের কাজ পায় পাবনার আরজেডএস, ঢাকার পল্লবীর আইয়ান ট্রেড ইন্টান্যাশনাল ও নাটোরের মেসার্স এমদাদুল হক। তারা টেন্ডার পেয়েও মালামাল সরবরাহ করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেন্ডার পেয়েও পণ্য ও মালামাল সরবরাহ না করায় এই পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জানে আলম ট্রেডার্সের বিডি হিসাবে জমা করা তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকার পে-অর্ডার ও এনএইচ ট্রেডার্সের পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার টাকার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২৪ মে রাজশাহী মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী চিঠি দিয়ে তাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আগে এই হাসপাতালে অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো।’