রাজশাহীতে বিধি-নিষেধ অমান্য করে বাড়ি নির্মাণ করছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার(নাজমুল হক): পুলিশের বিধি-নিষেধ অমান্য করে মহা-পুলিশ পরিদর্শকের পূর্ব অনুমতি ছাড়াই রাজশাহী মহানগরীতে বাড়ি নির্মাণ করছেন এসআই ও এএসআইসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এই দু’জন হলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রিজার্ভ অফিসে কর্মরত এএসআই শামসুজ্জামান ও সাবেক আরএমপির আরও এসআই আব্দুর রশীদ। তিনি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের আরও-ওয়ান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পুলিশের বিধি-নিষেধে রয়েছে, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি নিজ জেলার বাইরে বাড়ি নির্মাণ করতে চান তাহলে যথাযথভাবে পুলিশের আইজিপির কাছে অনুমতি নিতে হবে। কিন্ত দুই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের অনুমতি নেয়া হয়নি। তার আরডিএ থেকে প্ল্যান পাসও করেননি। এরমধ্যে এএসআই শামসুজ্জামান বলছেন, তিনি শাশুড়ির কাছ থেকে স্ত্রীর পাওয়া জমিতে বাড়ি করছেন আর অন্য এসআই আব্দুর রশিদও বাড়িটি স্ত্রীর নামে করছেন। এই দুই কর্মকর্তা পাশাপাশি বাড়ি নির্মাণ করছেন।

এএসআই শামসুজ্জামান: তিনি ২০০৬ সালে পুলিশ কন্সটেবল হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে এএসআই হিসেবে পদোন্নতি পান। গত ৮ বছর ধরে তিনি আরএমপিতে কর্মরত রয়েছেন। কয়েক বছর বিভিন্ন স্থানে ডিউটি করলেও ২০১৫ সাল থেকে তিনি রিজার্ভ অফিসে কর্মরত রয়েছেন। তিনি রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন পশ্চিম বালিয়া এলাকায় জনৈক ফজলু মিয়ার বাড়ির সামনে ২ দশমিক ৮ কাঠা জমির উপরে (হরিপুর মৌজায়) ৫ম তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন। জমিটি তার স্ত্রী জলি খাতুনের নামে কেনা হয়েছে। ৫ লাখ টাকা কাঠা জমির মূল্য হলেও সেখানে ২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সেই জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাড়িটি নির্মাণে কাজ শুরু হয়েছে। এক তলা নির্মাণ চলছে। একের পর এক তলা করে ৫ তলা পর্যন্ত বাড়িটি নির্মাণ করা হবে। বাড়ি নির্মাণ বিষয়ে এএসআই শামসুজ্জামান বলেন, জমিটি আমার শাশুড়ি, মামা শ্বশুর, খালাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে স্ত্রীর ভাগসহ কিনে নেয়া হয়েছে। জমিটি ৫ম তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ৫ম তলা পর্যন্ত উঠানো হবে। আমি কোনো অসাদুপায় অবলম্বন করিনা। নিজের আয় করা টাকা দিয়ে বাড়ি করছি।

এসআই আব্দুর রশীদ: এসআই (নিঃ) আব্দুর রশিদ, বিপি নং-৭৯৯৮০৫০৫৮২, নিজ জেলা লালমনিরহাট। তিনি চাকুরীতে কন্সটেবল পদে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালের ২৬ মে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন ২০০৩ সালের ১৬ মে। এএসআই পদে পদোন্নতি পান ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট। এসআই পদে পদোন্নতি পান ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর। তিনি ২০০৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আরএমপিতে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত আরএমপির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে আরো-টু হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তাকে রংপুর রেঞ্জে বদলি করে দেয়া হয়। তারপর থেকে তিনি গাইবান্ধা জেলায় কর্মরত রয়েছেন। তিনি তার স্ত্রীর নামে পশ্চিম বালিয়া এলাকায় তিন কাঠা জমি কিনেছেন। গত দেড় বছর আগে তিনি জমিটি ক্রয় করেন। বর্তমানে ওই এলাকায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা কাঠা জমি বিক্রি হলেও তিনি ২ লাখ টাকা কাঠা করে জমিটি রেজিস্ট্রি নেন। সেই জমির উপর তিনি বাড়ি নির্মাণ করছেন।

এ বিষয়ে এসআই আব্দুর রশীদ বলেন, জমিটি আমার স্ত্রীর নামে কেনা ছিল। সেই জমির উপর এখন ছোট করে একটি বাড়ি করছি। তবে কারো অনুমতি নেয়া হয়নি। দুই লাখ টাকা করে কাঠা জমিটি কেনা হয়েছে।

তবে প্রবিধানের (গ) এ রয়েছে, পুলিশ অফিসারদেরকে নিজ জেলা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইন্সপেক্টর জেনারেলের পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত স্ব-নামে বা স্ত্রী, পুত্র কন্যাদের, আত্মীয়-স্বজনের, আশ্রিত ব্যক্তি বা চাকরদের নামে বা বেনামীতে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় অথবা নিজের জেলা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে কোনো জমির বা কোনো অস্থাবর সম্পত্তির মালিক থাকলে তা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরণের অনুমতির জন্য দরখাস্ত করলে তাতে অনুরুপ জমি ববা স্থাবর সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণসহ ক্রয় বা বিক্রয়ের কারণ উল্লেখ করতে হবে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, নিজ কর্মরত এলাকায় যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বাড়ি নির্মাণ বা সম্পত্তি কিনতে চান তাহলে অনুমতি নিতে হবে।

 

স্ব:বা/না

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *