নাটোর স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটি বাতিলের দাবী পদবঞ্চিতদের

রাজশাহী
আল-আফতাব খান সুইট, নাটোর প্রতিনিধিঃ নাটোর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঘোষিত কমিটিকে অগনতান্ত্রিক ও অবৈধ উল্লেখ করে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যেমে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বিলুপ্ত কমিটির নেতা কর্মিরা। শনিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে শহরের কান্দিভিটুয়াস্থ আওয়ামীলীগের অস্থায়ি কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
নতুন কমিটির ৪ জন সহ-সভাপতি, এএইচএম হাসিবুল ইসলাম বুলেট, বুলবুল আহমেদ, মলয় কুমার রায় ও জাহিদ হাসান মিন্টু সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ঘোষিত কমিটির প্রতি অনাস্থা জানান।
সংগঠনের বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ সেলিম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, সংগঠনটির কেন্দ্রিয় নেতাদের প্রভাবিত করে রাতের অন্ধকারে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ পন্থায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তারা দাবী করেন, গত ১৯ জুলাই রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির তালিকা প্রকাশিত হতে দেখা যায়। অথচ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনিবার্হী সংসদের সভাপতি নির্মল কুমার গুহ এবং সাধারন সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ২০ জুলাই কমিটি স্বাক্ষর করেছেন। নবগঠিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে যাকে  সভাপতি করা হয়েছে তিনি শহরের চিহ্নিত রাজাকার আব্দুল হামিদ সোনা মিয়ার ছেলে ইসতিয়াক আহম্মেদ ডলার। এছাড়া সাধারন সম্পাদক সফিউল আযম স্বপনের বড় ভাই সাগর মাদক ব্যবসায়ী। স্বপনের ছত্রছায়ায় তিনি চলেন। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় কমিটি ঘরে বসে রাজাকার পুত্র ইশতিয়াক আহমেদ ডলারকে সভাপতি ও সফিউল আযম স্বপনকে সম্পাদক করে নতুন এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। শফিউল আযম স্বপনকে কোন দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এছাড়া কমিটিতে অন্য যাদের রাখা হয়েছে তারা অতীতে দলের কোন কর্মসূচীতেও অংশগ্রহণ করেননি। তবুও কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ তাদের দ্বারা গঠিত কমিটিই অনুমোদন করেছেন। তাদের ভুল তথ্য দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি করা হয়েছে। ঘোষিত এই কমিটিকে পকেট কমিটি এবং গঠনতন্ত্র ও আদর্শবিরোধী এবং অবৈধ বলে দাবি করে ঘোষিত এই কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে বাতিলের দাবি জানান তারা।
আরিফুর রহমান সরকার বলেন, দলের ভেতরের একটি তৎপর গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পিছিয়ে দিচ্ছে। এতে করে প্রকারান্তরে তারা বিএনপি জামাতকে সুযোগ করে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘরে বসে রাজাকার পুত্র ইশতিয়াক আহমেদ ডলারকে সভাপতি ও সফিউল আযম স্বপনকে সম্পাদক করে নতুন এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এরা কখনই স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে জড়িত ছিলেননা।  তিনি বলেন তারা বাবা মরহুম রফিক সরকার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধুর পালার্মেন্টের একজন সদস্য ও  সংবিধান প্রনেতাদের একজন। তার সন্তান হয়েও তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা। রাতের অন্ধকারে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের গঠনতন্ত্রের ১৫ (ক) ধারার বিধানের পরিপন্থি ও অবৈধ।
নেতৃবৃন্দ দাবী করেন ,যারা রাতদিন পরিশ্রম করে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে জেলায়  শক্তিশালী করেছে , যারা বিএনপি জামায়াতের নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছে, জেল খেটেছে। বছরের পর বছর দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে তাদের অবমূল্যয়ান করা হয়েছে। পদবঞ্ছিত নেতাকমীদের দাবী অবিলম্বে দ্রুত এই কমিটি বাতিল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি নবগঠিত কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষনা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ দপ্তর সম্পাদক দীলিপ কুমার দাস, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস, জেলা যুবলীগ সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া, জেলা  ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলমসহ বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নতুন ঘোষিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ডলার বলেন, পদ পদবী না পেয়ে বিলুপ্ত কমিটির কেউ কেউ কেন্দ্র অনুমোদিত কমিটির বিরোধীতা করছেন। আমি ১৯৯৯-২০০০সালে নাটোর এনএস সরকারী কলেজ সংসদের ছাত্র লীগ থেকে ভিপি নিবার্চিত হই। এছাড়া ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। সে সময়ে কেউ তার বাবার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেননি। বাাবা মৃত্যু বরণ করায় এই মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বর্তমান রাজনীতিতে হাইব্রীডরা আওয়ামীলীগে পদ পদবী পাওয়ায় তারা প্রকৃত আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের কলংকিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তার পিতার বিরুদ্ধো আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
সফিউল আযম স্বপনও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন,তিনি নাটোর জেলা পরিষদের একজন নিবার্চিত সদস্য। তার সুনাম ক্ষুন্ন করতে এসব মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আগামীতে এসব মিত্যাচারের জবাব দিবেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি ঘোষনার পর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। ইতিমধ্যে এই নতুন কমিটি অবৈধ পহ্নায় গঠন করার প্রতিবাদ জানিয়ে বেশ কয়েকজন সামাজিক গণমাধ্যমে স্টেটাস দিয়ে স্বোচ্ছাসেবক লীগের সদস্যসহ বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দিয়েছেন।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *