বাঘায় পুকুরে মিললো মরদেহ,পাড়ে ছিল মোটরসাইকেল

রাজশাহী

বাঘা প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘায় রাস্তার ধারের পুকুরের পাড়ে ছিল মালিক বিহীন একটি মোটরসাইকেল। রাস্তায় চলাচলকারি লোকজন তা দেখে মালিককে খুঁজতে থাকে। এর এক পর্যায়ে সেই মোটরসাইকেল মালিকের সন্ধান মেলে পুকুরে। বুধবার (০৮-০৯-২০২১) বাঘা উপজেলার হরিনা বিনিময় পাড়ার আলা উদ্দীনের পুকুর থেকে মোটরসাইকেল মালিক জুয়েল রানা(২৮)’র লাশ উদ্ধার করা হয়। তেথুলিয়া-হরিনা যাতায়াতের রাস্তার ধারের এই পুকুরের পাড়ে পড়ে ছিল জুয়েল রানার মোটরসাইকেল। নিহত জুয়েল চারঘাট উপজেলার মৃধা পান্না পাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে। পুকুরের পাড়ের আম গাছের নীচে তার মোটরসাইকেল পড়ে ছিল।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তায় চলাচলকারি লোকজন বুধবার সকাল আনুমানিক ৬ টায় পুকুরের পাড়ে মালিকবিহীন মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখে। মালিককে না পেয়ে তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য তুহিনকে জানায়। খবর পেয়ে সেখানে যায় পুলিশ, উপজেলা এবং রাজশাহীর সিভিল ডিফেন্স – ফায়ার সার্ভিসের দল। স্থানীয় লালচান ও শাহিনসহ অনেকেই জানান,তাদের নির্দেশে রেজাউল, আফজাল ও ওবায়দুল পুকুরে নেমে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে জিন্সের প্যান্ট ও ঘিয়া কালারের শার্ট পরিহিত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরে জুয়েল রানাকে সনাক্ত করেন স্থানীয়রা। এসময় ১টি স্মাট ও ১টি বার্টন মোবাইল ফোন, প্যান্টে রক্ষিত মানি ব্যাগে থাকা ১০০ শত টাকাসহ নিজের ভোটার আইডি কার্ড,বিভিন্ন জনের ভিজিডিং কার্ড পাওয়া গেছে। মোটরসাইকেলসহ উদ্ধার হওয়া এগুলো জব্দ করেছে পুলিশ।

রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ডুবুরি দলের টিম লিডার নুরুন্নবী জানান, তার সাথে কেই থাকতে পারে এমন ধারনা থেকে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পুকুরে অনুসন্ধান চালান। পরে কোন কিছু উদ্ধার করা যায়নি।

জুয়েল রানার স্ত্রী পপি বেগম জানান, মঙ্গলবার সারাদিন বাড়িতেই ছিল। কোনকিছু না বলে বুধবার ফজর নামাজের পর মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। তিনি বলেন, তার স্বামী পেশায় কাঠ মিস্ত্রী। জুয়েলের মা জয়গুন জানান, তার স্বামী মকবুল আরেকটি বিয়ে করে থাকেন আরেক জায়গায়। ছেলে কাঠ মিস্ত্রীর পাশাপাশি ক্ষেতে শ্রমিকের কাজও করতো। নিহত বড় ভাই জহুরুল ইসলাম বলেন, তার ভাই কবিরাজীও করতেন। ভোররাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথাও যাচ্ছিল, তা জানা ছিলনা। তবে পরিকল্পিত হত্যাও হতে পারে বলে ধারণা তার ।

ঘটনাস্থল এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন বলেন, বাড়িতে ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এই সময় সড়ক দিয়ে দ্রæত গতিতে একটি ও ধরিগতিতে আরেকটি মোটরসাইকেল যাবার শব্দ শুনতে পান। নামাজ শেষে কিছুক্ষণ পর জানতে পারি পুকুরের পাড়ে চালক বিহীন একটি মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে। উদ্ধারের পর নিহতের লাশ দেখেন।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা বলেন, পুকুর পাড়ের গাছের সাথে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পুকুরে পড়ে যেতে পারে। তাদের কথায় আম গাছের নীচে ও অনেকটু উপরে গাছের সাথে ধাক্কার যে চিহৃ দেখা গেছে, তাতে মোটরসাইকেলটি ভেঙে চুরমার হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ মিটার পশ্চিমে তাহাজের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার উত্তর পাশে আরেকটি মোটরসাইকেলের সামনের মারগার্ডের লাল রঙের ভাঙা তিনটি অংশ পাওয়া গেছে। তাইজুসহ অনেকেই বলেন, সেখানে আগেরদিন কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। ভোরে কোন দূর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারনা তাদের।

বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারন নির্ণয়ের জন্য লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মাথায় জখমের চিহৃ, নাক দিয়ে ফেনা ও কান দিয়ে রক্ত পড়তে দেখা গেছে। হত্যা না হয়ে দূর্ঘটনায় মৃত্যু হতে পারে বলে পুলিশের ধারনা।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *