তাল সড়কে পিঠা উৎসব

রাজশাহী লীড

নিয়ামতপুর প্রতিনিধি : পথের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ, গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসেছে হরেক রকমের পিঠার স্টল।
পথের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসেছে হরেক রকমের পিঠার স্টল। সড়কের মাঝখানে উন্মুক্ত চলছে লোকগান আর নৃত্য। স্টলগুলোতে থরে থরে সাজানো কানমুচড়ী, ফুলঝড়ি, মুইঠা, পুলি, পাতা নকশীসহ হরেক রকমের পিঠা।

শুক্রবার ছুটির দিনে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনি এক জমজমাট পরিবেশ দেখা যায় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা তালতলী সড়কে। সারি সারি তালগাছের মনোরম সৌন্দর্যের সড়কটিকে পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে তাল পিঠা উৎসবের আয়োজন করে উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদ।

পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহর) আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। এছাড়া অনুষ্ঠানে হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারীয়া পেরেরা প্রমুখ।

আয়োজকরা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক সংঠন ও প্রতিষ্ঠান পিঠা উৎসবে অংশ নেয়। উৎসবের আয়োজন যেমন ব্যাপক তেমনি পিঠার সম্ভারও ছিল বৈচিত্রময়। প্রায় ৩০ ধরণের তাল পিঠা ছাড়াও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বানানো অর্ধশতাধিক রকমের পিঠা আসে উৎসবে। পাকান, পুলিসহ সচরাচর যেসব পিঠা দোকানে পাওয়া যায়, সেগুলি ছাড়াও ছিল হৃদয়হরণ, ঝিনুক পিঠা, তালের কেক, তালের ফুলঝড়ি, পাখির বাসা, তালের মাংস সিংড়াসহ বিচিত্র সব পিঠা। প্রতিটি পিঠার দাম ছিল ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

প্রতিটি স্টলে প্রায় ২০ থেকে ৩০ রকমের পিঠা দেখা যায়। বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা পিঠার পাশাপাশি অনেক স্টলে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরিও করা হয়।

পরিবার নিয়ে নওগাঁর সদর থেকে পিঠা উৎসব দেখতে আসেন সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, সারি সারি তালগাছের সড়কে আসলে এমনিতেই হৃদয়ে একটা প্রশান্তি অনুভব হয়। প্রায় প্রতি শুক্রবারেই পরিবার নিয়ে আমি এখানে আসি। আজকে আরও ভালো অনুভূতি হচ্ছে। এখানে একসঙ্গে অনেক রকমের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। আমার সাত বছর বয়সী মেয়ে অনেক পিঠাই আগে চিনতো না। এখানে এসে অনেক ধরণের পিঠা দেখে ও তার স্বাদ নিতে পেরে অনেক খুশি। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকায় আরও ভালো লাগছে।

পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই তালগাছগুলি আমি লাগিয়েছিলাম। আজকে সেই সব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। মানুষজন এই সড়ক দিয়ে যখন যায়, তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু প্রশান্তি পায়। আমি নিজেও এলাকায় আসলে তালগাছগুলি দেখতে আসি। একটা অন্য রকম প্রাশান্তি অনুভূত হয়।

মন্ত্রী আরও বলেন, সড়কটি পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাল পিঠা উৎসবের যে আয়োজন করেছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে মানুষ একটা নির্মল বিনোদন পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা অনেক ধরণের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এ প্রজন্ম।

উৎসবের অন্যতম আয়োজক হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবারের উৎসবে যে পরিমান মানুষের সাড়া পেয়েছি তাতে আমি অভিভূত । অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হরেক রকমের পিঠার সমাহার নিয়ে এখানে স্টল দিয়েছে। আগামীতে প্রতি বছর এখানে পিঠা উৎসবের আয়োজনের ইচ্ছে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *