আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা:
প্রতি বছর ঈদুল আযহার ঈদের আগে কোরবানির জন্য রাজধানী ঢাকায় গরু নিয়ে যেতেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের গৃহস্তরা। নিজের বাড়ির গরুগুলো বিক্রির জন্য সাথে যেতেন তাদের ভাই, ভগ্নিপতিসহ অন্যান্য আতœীয়রাও। এদের একজন চকরাজাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন। এবার তার ৪টি গরুই দেশে বিক্রি করে দিয়েছেন। শুধু জাহাঙ্গীর হোসেনই নন, তার মতো চরাঞ্চলের অনেকেই ট্রাকে করে ঢাকায় গরু বিক্রির জন্য নিয়ে যেতেন। এবার না যাওয়ার কারণ হিসেবে মানিকের চরের খোশবর বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ,তাই লাভ কম হলেও দেশে বিক্রি করেছেন।
এবার বিশেষ করে ডেঙ্গু আতঙ্কে গৃহস্থরা গরুর দাম নিয়ে আশা-নিরাশায় রয়েছেন। উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের গৃহস্থদের বাড়িঘর কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠত। এই ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলো ছাড়াও আতারপাড়া, দিয়াড়কাদিরপুর, চৌমাদিয়া, কালিদাশখালি, নীচ পলাশিসহ ইউনিয়নের বারোটি গ্রাম গৃহস্থের এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি বাড়িতেই কমপক্ষে দু-তিনটি গরু পালন করা হয়। এসব গরু কোরবানি ঈদের জন্য বাছুর কিনে বড় করেন। সেই গরুগুলো রাজধানী ঢাকা বা অন্যান্য অঞ্চলে নিয়ে যান। কেউ কেউ ব্যাপারীদের কাছেও বিক্রি করেন। কিন্তু এবার তাদের এলাকায় গরুর ব্যাপারীদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কোরবানির ঈদ ঘিরে এ সময় বাড়িতে বাড়িতে গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যেত। কিন্তু এবার এখনো সে রকম হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (৬-৮-১৯) কথা হলে চরাঞ্চলের লক্ষীনগর গ্রামের ঝড়– ব্যাপারি জানান, ১০টি গরু নিয়ে যাবেন পুরান ঢাকার নয়াবাজার পশুর হাটে। ঢাকায় এসব গরুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন তিনি। আর গরু বিক্রির পর সুস্থ শরীরে নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসতে পারবেন কি না, সেই ভাবনায় কপালে ভাঁজ পড়েছে তার।
চরাঞ্চলের পলাশিফতেপুর গ্রামের গৃহস্থ শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের মতো পরিস্থিতি আগে কখনো কোরবানির ঈদের আগে হয়নি। ৫৫ কেজি ভুষির বস্তা ১ হাজার ৩০০ টাকা বেড়ে এখন হয়েছে ২ হাজার টাকা। গরুর খাবারের টাকা আসতো গাভির দুধ বিক্রি করে। গরু লালন পালনের খরচও বেড়েছে। এখন ঢাকায় ডেঙ্গুর কথা শোনা যাচ্ছে। তাই গরুর দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আর ডেঙ্গুজ্বরের আতঙ্কে আছি।
চকরাজাপুর গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘গত বছর কোরবানির ঈদের পরে ১লক্ষ আঠাশ হাজার টাকা দিয়ে চারটি বাছুর কিনেছিলাম। প্রায় এক বছর ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে ভুসি খাইয়ে এগুলারে বড় করছি। এ ছাড়া আরও অনেক খরচ হইসে গরুগুলারে পালতে। এলাকায় দেশীয় গরুর আমদানির কারণে স্থানীয় হাটে দামও কম। তাই রাজধানী ঢাকার সিটি হাটে গরুগুলো প্রায় আড়াই লক্ষ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা করছি। শেষ পর্যন্ত যে কী হবেক!’
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী আনার হোসেন জানান, এ বছর বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাটে প্রচুর গরু আসছে। এলাকার গৃহস্থরা তুলনামূলকভাবে একটু কম দামেই গরু বিক্রি করছেন। ফলে, স্থানীয় গৃহস্থদের গরু বিক্রি এখনো তেমন হচ্ছে না। এর সঙ্গে যদি ভারতীয় গরু সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে থাকে, তাহলে আরও সর্বনাশ।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশি গবাদি পশুতে কোরবানি ঈদের চাহিদা মিটবে। চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু বেশি থাকায় কৃষকেরা প্রত্যাশিত দাম পাবেন কি না জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, দাম নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই। গবাদি পশুর দাম নিয়ন্ত্রণ হয় মার্কেটে।
ডেঙ্গুজ্বরের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহিন রেজা বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী দেশের প্রায় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমার উপজেলায় ডেঙ্গুর প্রভাব পড়েনি। হাটগুলোতে কোরবানির পশু ওঠার আগে মশা মারার ওষুধ ছিটাতে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র ও ইজারাদারদের বলা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন,উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে আশা করছি ঈদের আগে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে। ইজারাদার মামুন হোসেন বলেন, হাটবাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে,স্বাস্থ্যসম্মত পশুর কেনাবেচা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।