চুল কাটলেন শিক্ষক, অপমান সইতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রের আত্মহত্যাচেষ্টা

রাজশাহী

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিসিক বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন (২০)। এ নিয়ে শিক্ষক শাসন করলে অপমান সইতে না পেরে তিনি ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার দ্বারিয়াপুরের শাহ মুখদুম ছাত্রাবাসে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

তুহিন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি মাগুরা জেলায়।

এ বিষয়ে ছাত্ররা জানান, দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ফেসবুকে চুলকাটার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তুহিনকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।

তুহিন পরীক্ষা শেষে সে দ্বারিয়াপুরের শাহ মুখদুম ছাত্রাবাসের পঞ্চম তলার নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে মোট ৩৫টি ঘুমের বড়ি একসঙ্গে গুঁড়ো করে খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

বিষয়টি তার সহপাঠীরা টের পেয়ে তাকে সজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে ভর্তির পর তার চিকিৎসা চলছে।

এদিকে এ আত্মহত্যার চেষ্টার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ভিড় করেন। এ সময় তারা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষী ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী ও অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত থেকে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের বিভাগের ইয়ারচেঞ্জ ফাইনাল পরীক্ষায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ে পরীক্ষার জন্য হলে প্রবেশের সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন কাঁচি দিয়ে ১৪ পরীক্ষার্থীর মাথার সামনের অংশের বেশ কিছু চুল কেটে দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের সহকারী প্রক্টর রাজীব অধিকারী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুন।

এ সময় তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ না করে সেখানে নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই বিভাগের বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে লাঞ্ছিত পরীক্ষার্থী এবং তাদের সহপাঠীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার জন্য বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস ১-এর গেটে জড়ো হন।

এ সময় পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ও সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এ ঘটনার পর থেকে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবারও হুমকি-ধমকির আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে এ অপমান সইতে না পেরে শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন এ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার অবস্থা আশঙ্কজনক বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্যও তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, আমরা নাজমুলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তার উন্নত চিকিৎসা চলছে। আশা করি ওই ছাত্র ভালো হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মনোয়ার হোসেন সুজন বলেন, অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *