সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের অভিযোগে রাজশাহী মহানগর যুবলীগ নেতা মুকুল শেখ’কে কারণ দর্শানোর নোটিশ

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টারঃ জাল কাগজ তৈরি করে নিজ দলেরই এক নেতাকে ‘ছাত্রশিবিরের কর্মী’ হিসেবে অপপ্রচারের অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মুকুল শেখ নামের ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাবার পর নগর যুবলীগ তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সে ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এক নোটিশে ১০ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে মুকুল শেখকে নিজের সাফাই দাখিল করতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত হয়েছে। এরপর সেই তদন্ত প্রতিবেদন সংগঠনের ১০ সদস্যের একটি উচ্চপদস্থ কমিটি পর্যালোচনা শেষে সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখের শৃঙ্খলা পরিপন্থি তৎপরতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়।” তিনি জানান, আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তার দেয়া জবাবের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গেলো মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের দফতর সম্পাদক মাহামুদ হাসান খান ইতুর বিরুদ্ধে ছাত্রশিবিরকে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ আছে বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করার পাশাপাশি কয়েকটি চাঁদার রশিদের অনুলিপি সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত নেতা ইতু অভিযোগ অস্বীকার করে এসব রশিদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বিষয়টি নিয়ে ১২ আগস্ট নগর যুবলীগের সহসভাপতি আমিনুর রহমান খান রুবেলকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নগর যুবলীগ। প্রায় একমাস তদন্তের পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

ইতুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দাখিল করা সব নথিপত্র ‘জাল ও প্রতারণাপূর্বক সৃষ্ট’ বলে প্রমাণ পাবার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এগুলোর মধ্যে ‘সমর্থক বায়োডাটা’ বলে ছাত্রশিবিরের নামে একটি কাগজ সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ নিজে তদন্ত কমিটিকে দেন। সেই কাগজটিও জাল বলে প্রমাণিত হয়। মুকুল শেখ নিজে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য হলেও তার বিরুদ্ধে কমিটিকে অসহযোগিতা করার কথাও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর নগর যুবলীগ গঠন করে ১০ সদস্যের একটি উচ্চপদস্থ পর্যালোচনা কমিটি। সেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনটিকে যথাযথ হিসেবে মতামত দিয়ে মুকুল শেখের তৎপরতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের সিদ্ধান্তেই নগর যুবলীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়, সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে একই সংগঠনের দফতর সম্পাদকের রাজনৈতিক চরিত্র হনন ও তাকে বিতর্কিত করতে মুকুল শেখ নিজে অথবা অন্য কারো সহায়তায় জাল কাগজ তৈরি করেন। বিষয়টিকে ‘গর্হিত ও সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ বলে কমিটির সব সদস্য একমত হন। তদন্তের আগেও সংগঠনের সঙ্গে আলাপ ছাড়াই একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুকুল শেখ ‘অপপ্রচার’ চালান বলে উল্লেখ করে কমিটি এই আচরণকে ‘প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

নোটিশে যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ২২(ক) ধারা অনুযায়ী তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অথবা সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না, তার কারণ হিসেবে নিজের সাফাই দেয়ার জন্য মুকুল শেখকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়।

যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে নগর যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ দাবি করেন, তিনি কোনো জাল কাগজ তৈরি করেননি। তিনি বলেন, “আমি যা জেনেছি তা সংগঠনকে জানিয়েছি। এখন সেটাকে আমার অপরাধী হিসেবে যারা নিচ্ছেন, তারা কেন তা করছেন আমি জানি না। তাদের উদ্দেশ্য কী সেই প্রশ্ন আমারও।”

নগর যুবলীগ সভাপতি রমজান আলী বলেন, “বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই তদন্ত থেকে শুরু করে সব কাজ করেছি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় কেন্দ্রের নেতাদের পরামর্শ ও নির্দেশনাও নেয়া হয়েছে। ফলে এখানে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।” রমজান জানান, ১০ অক্টোবরের মধ্যে মুকুল শেখ জবাব না দিলে অথবা জবাব যথাযথ না হলে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুসারে শাস্তির সুপারিশ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *