প্রতিবন্ধী স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভবঘুরে জয়নাল, সরকারি ঘরের দাবি

রাজশাহী

স্বদেশবাণী ডেস্ক: নিজেদের এক শতক জায়গা নেই। নেই ঘরবাড়ি। রাতে বাজারের মধ্যে ঘুমান। সকাল হলেই ভ্যান নিয়ে প্রতিবন্ধী স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হন। এটাই নিত্যদিনের কাজ জয়নাল হোসেনের। সারাদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে যেটুকু ভিক্ষা পান তাই দিয়ে তিন বছর বয়সী প্রতিবন্ধী একমাত্র মেয়ের দুধ কেনা ও খাবার খেতেই সব শেষ হয়।

রাত-বিরাতে প্রকৃতির ডাক যেন সাড়া না দেয় সেই ভয়ে প্রতিবন্ধী স্ত্রী নেহারা খাতুন রাতে কোনো খাবার খান না। এভাবেই রাস্তার ধারে কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছেন এক সময়ের ভ্যানচালক পাবনার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের গোড়লী গ্রামের জয়নাল হোসেন।

বৃহস্পতিবার রাতে চাটমোহর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত মাছ বাজারের মেঝেতে একটা ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে আছে জয়নাল হোসেনের তিন বছর বয়সী প্রতিবন্ধী সন্তান ইতি খাতুন ও স্ত্রী নেহারা খাতুন। মশার কামড় থেকে স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচাতে মশারি টাঙাচ্ছেন জয়নাল হোসেন। বয়স বেশি না হলেও একমাত্র সন্তান ইতি খাতুন, স্ত্রী নেহারা খাতুন প্রতিবন্ধী হওয়ায় এবং সংসারে অভাবের কারণে বার্ধক্যের ছাপ চোখে মুখে স্পষ্ট জয়নাল হোসেনের।

ভিক্ষাবৃত্তি শেষে সন্ধ্যায় ফিরে পরিত্যক্ত ওই মাছ বাজারের পাশেই অস্থায়ী এক চুলায় রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করে পরিবারটি। তবে তার স্ত্রী রাতে খাবার খান না প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার ভয়ে। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী অসহায় এ পরিবারটিকে ওই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বললেও নিরুপায় জয়নাল হোসেন। প্রতিবন্ধী স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে সরকারি একটি ঘরের জন্য বারবার ধরনা দিয়েও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।

জয়নাল হোসেন যুগান্তরকে জানান, উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের গোড়লী গ্রামে জন্ম তার। বাবা মৃত শাহ প্রামাণিকের একমাত্র ছেলে তিনি। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর নিজেদের আড়াই বিঘা সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়। এরপর একই উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধরইল মৎস্যজীবীপাড়ার হানেফ আলীর মেয়ে নেহারাকে বিয়ে করেন তিনি। ঠাঁই হয় শ্বশুরবাড়ির একটি ছাপড়া ঘরে। বিয়ের কিছুদিন পর অজানা রোগে আক্রান্ত হন স্ত্রী নেহারা খাতুন। এর মধ্যে জন্ম হয় একমাত্র কন্যাসন্তানের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, একমাত্র কন্যাসন্তান ইতি খাতুনও জন্মপ্রতিবন্ধী।

টিনের ভাঙ্গাচোরা ছাপড়া ঘরে ঝড়-বৃষ্টিতে প্রতিবন্ধী-স্ত্রী সন্তান ভিজে যায়। সেই ছাপড়া ঘরটি বিলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। একসময় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও স্ত্রী পঙ্গু হয়ে পড়ায় তাদের দেখভাল করার কেউ না থাকায় জয়নাল হোসেন এখন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পথে পথে ভিক্ষা করেন।

ভিক্ষা করতে লজ্জা লাগলেও বাধ্য হয়ে তাই করতে হয়। প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ টাকা উপার্জন করলেও একমাত্র সন্তান ইতির দুধ কিনতে এবং সংসার খরচেই শেষ হয়ে যায়! স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে বারবার ধরনা দিয়েছেন একটি সরকারি ঘরের আশায়। তবে নেহারা খাতুনের একটি ভাতার কার্ড ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

নেহারা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ভিক্ষা করে মেয়ের দুধ কেনা ও খাবার খেতেই চলে যায়। স্বামী ভিক্ষা করতে লজ্জা পায়, কাজ করে খেতে চায়। কিন্তু আমাদের কোনো ঘর নেই। কার কাছে রেখে আসবে আমাদের? তাই বাধ্য হয়ে স্বামী এখন ভিক্ষুক হয়েছে! সরকার এত মানুষকে ঘর দিয়েছে, অথচ বারবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও আমাদের মতো অসহায় একটা ঘর পেলাম না। আর কত কষ্ট করলে ঘর পাব আমরা?

এ ব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমার ইউনিয়নের ৭ জনের ঘরের তালিকা পাঠিয়েছি। এ তালিকায় নাম আছে কিনা জানা নেই। যদি না থাকে তবে খুব দ্রুত তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *