চৌহালীর চার বিদ্যালয়ে ছাপরার নিচে পাঠদান

রাজশাহী

স্বদেশবাণী ডেস্ক :  সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলছে ছাপরার নিচে। এ বছর বর্ষার শুরুতে যমুনার ভাঙনে বিদ্যালয়গুলোর ভবন ও মাঠ বিলীন হয়ে গেছে। এ কারনে অস্থায়ী খোলা জায়গায় ছাপরা উঠিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

অস্থায়ী ও জায়গায় টয়লেটসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় দিন দিন শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমছে। চার বিদ্যালয়ে ৭শর মতো শিক্ষার্থী ছিল।

রোববার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উমারপুর ইউনিয়নের যমুনা নদীর মাঝে জেগে ওঠা বাউসা চরে বেশ কয়েকটি বসতি গড়ে উঠেছে। পতিত জমিতে চার-পাঁচটি খুঁটি পুঁতে কয়েকটি টিনের দুটি চালা দিয়ে ছাপরা নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেই বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালছে।

একই চিত্র দেখা যায় ওই চরের দক্ষিণে ইউসুব শাহী সলংগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিলঝলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উমারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এসব বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। চলছে নামমাত্র ক্লাস। কয়েকটি বেঞ্চ পেতে কয়েকজন কোমলমতি শিক্ষার্থী বই নিয়ে বসে আছে। চারদিকে খোলা হওয়ায় বাঁশের সঙ্গে বাঁধা পুরোনো দুটি ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে দৃষ্টি নেই কারও। উপরে টিনের ছাপরার ফাঁকা দিয়ে রোদ প্রবেশ করে ও বৃষ্টি পড়ে।

জানা যায়, বর্ষার শুরুতে বিদ্যালয় ৪টির ভিটামাটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় স্থানীয়দের সহায়তায় চেয়ার-টেবিল, বইসহ আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখেন শিক্ষকরা। করোনার পরে বিদ্যালয় চালুর ঘোষণা এলে কোনোমতে চরের জমিতে খুঁটি পুঁতে পুরাতন ঘরের টিন দিয়েই ছাপরা তৈরি করে পাঠদান চালু হয়। চারপাশ খোলা থাকায় ঘরে পশুরা প্রবেশ করে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয়নি টয়লেট। বসানো হয়নি খাবার পানির জন্য নলকূপ। এসব কারণে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেবা খাতুন ও হৃদয় হোসেন জানায়, খোলা মাঠে ছাপরার নিচে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। চারপাশ খোলা থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই বই-খাতা ভিজে যায়। টয়লেট ও টিউবওয়েল না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, রোদ ও প্রচণ্ড গরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দ্রুত নিশ্চিত না হলে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণে মনোযোগী হবে না। কমে যাবে উপস্থিতি।

বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলীম জানান, ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১১ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। এ বছরই দুই বার ভাঙনে নদীতে হারিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ভিটামাটি। যে কারণে বাধ্য হয়ে খোলা ছাপরায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি কিংবা রোদ উঠলে ছাত্রছাত্রী বাড়ি চলে যায়। এমনকি স্কুলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখার যায়গা নেই। করোনা পরবর্তী সময় চরম দুরবস্থার মধ্যে পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে হয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

ইউসুব শাহী সলংগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান, যমুনা নদীতে বিদ্যালয় ভবন বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছি। খোলা আকাশের নিচে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। অস্থায়ী ভাবে টিনের ছাপরা তুলে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও আলমিরা দুটি সংরক্ষণ করেছি। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে কোনোরকম পাঠদান চালু রেখেছি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় না। সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পড়াশোনায় আগ্রহ হারাচ্ছে তারা। দ্রুত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের পাশাপাশি অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানাই।

জানতে চাইলে চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, নদী ভাঙনে বিলীন ৪টি স্কুলেই ছাপরার নিচে পাঠদান চালু করা হয়েছে। নতুন ঘর চেয়ে এডুকেশন ইন ইমার্জেন্সিতে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুত নিরাপদ স্থানে বিদ্যালয় ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে। তখন এসব সমস্যা থাকবে না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *