প্রকল্পের টাকায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ!

রাজশাহী

স্বদেশবাণী ডেস্ক : পাবলিক প্লেসে নির্মাণের বদলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের টাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পাকা টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দরগারচর গ্রামের ধনাঢ্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানের বাড়িতে এ টয়লেট নির্মাণ করা হয়।

ইউনিসেফ জিওবি প্রজেক্ট (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন) প্রকল্পের সাবেক শাহজাপুর উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. হালিম ও হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মমিনের বিরুদ্ধে এ অনিয়ম দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক, শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দুর্নীতি দমন কমিশন, সিরাজগঞ্জ র্যা ব-১২, শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব ও শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডবাসীর পক্ষে মো. আমিনুল ইসলাম লিখিত এ অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী আমিনুল ইসলাম ও এলাকাবাসী জানান, শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দরগারচর এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ বাবদ লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) প্রকল্প থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মমিনকে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করা হয়।

তিনি ইউনিসেফ জিওবি প্রজেক্ট (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন) প্রকল্পের সাবেক শাহজাদপুর উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. হালিমের যোগসাজশে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সরকারি জায়গার পরিবর্তে ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই বাড়িতে উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে টয়লেট নির্মাণ করেন।

তারা আরও জানান, ইউনিসেফ জিওবি প্রজেক্ট (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন) প্রকল্পের সাবেক উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. হালিম সার্বক্ষণিক শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে থাকেন। এ কারণে তিনি শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে অধিকাংশ সরকারি প্রকল্পের কাজ তদারকি করেন। এরই সুবাদে এ কাজটি তিনি তদারকি করতে এসে ওই জায়গা নির্বাচন থেকে শুরু করে ইট, বালু, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করেন।

তারা বলেন, মো. হালিম এক সময় ইউনিসেফে চাকরি করতেন। এখন তিনি কোথাও চাকরি করেন না। এছাড়া তিনি শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদেও কোনো চাকরি করেন না। শুধু ইউএনওর সঙ্গে সখ্য গড়ে তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক চলাফেরা করেন। এ সুবাদে ইউএনওর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ ও সব ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজের তদারকি করেন।

এছাড়া শাহজাদপুর উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিনের সাথে সখ্য গড়ে এ বিভাগের অধীন প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের খাসজমিতে গুচ্ছগ্রাম সৃজন, সৃজিত ঘর বরাদ্দের নামে অর্থিক সুবিধা গ্রহণ, কর্মসৃজন প্রকল্প পরিদর্শনের নামে সুবিধা আদায়, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গোপনীয় ফাইলে হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন প্রকল্পের তদারকি করে থাকেন; যা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

তারপরও তিনি অজানা এক অদৃশ্য শক্তির বলে অহরহ এসব কাজ করে আসছেন। এর ফলে প্রতিনিয়ত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, দরগারচরের ধনাঢ্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানের টিন দিয়ে ঘেরা বাড়িতে সেপটিক ট্যাংকিসহ ২ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনাও হয়েছে মো. হালিমের ইশারায়। ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানের বাড়িতে নির্মাণাধীন টয়লেটের সঙ্গে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি-৩) ফলক এখনো লাগানো রয়েছে।

এছাড়া ইউনিসেফ জিওবি প্রজেক্ট (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন) প্রকল্পে কাজ করার সময় শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ, স্কুলব্যাগ বিতরণ ও স্যানিটারি সামগ্রী বিতরণেও তার নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধমূলক কাজ করে মো. হালিম গত ২ বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। অবৈধ উপার্জিত এ অর্থ যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য  তিনি তার বিশ্বস্ত ও নিকটাত্মীয়দের মাঝে গচ্ছিত রেখেছেন বলেও অভিযোগকারীরা জানান।

এছাড়া তিনি নিজেকে সরকারি কমিউনিকেশন ফর সি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের শাহজাদপুর উপজেলা কো-অর্ডিনেটর বলে দাবি করেন। অথচ এ প্রজেক্ট ২ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। তিনি এ প্রজেক্টে কখনই কর্মরত ছিলেন না বলে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ অফিস সূত্রে জানা গেছে। তারপরও নিজেকে বাঁচাতে তিনি এ মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।

ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এ বিষয়ে হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মমিনের সঙ্গে কথা বলেন; তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মমিন বলেন, ওই এলাকায় সরকারি জায়গা না থাকায় আব্দুল হান্নানের বাড়িতে টয়লেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারী ব্যক্তি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাচ্চু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই ইউপি সদস্য ভুল জায়গায় টয়লেটটি নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে সরকারি জায়গায় আরেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছি।

এ বিষয়ে ইউনিসেফ জিওবি প্রজেক্ট (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন) প্রকল্পের সাবেক শাহজাদপুর উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. হালিম বলেন, আমি ইউনিসেফের কোনো প্রজেক্টে ছিলাম না। ফলে ইউনিসেফের প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা।

তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমানে সরকারের কমিউনিকেশন ফর সি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে শাহজাদপুর উপজেলা কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত আছি। এ প্রকল্পের অধীন কাজগুলোই দেখাশোনা করি। এছাড়া অন্য কোনো প্রকল্পের কাজের অভিযোগ সঠিক নয়। এছাড়া এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থে ব্যবসায়ীর বাড়িতে নির্মিত পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ ধরনের প্রজেক্টে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শত্রুতাবশত অভিযোগে আমার নাম দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু প্রকল্পবহির্ভূত কাজ হয়েছে, সেহেতু বিষয়টি তদন্ত করে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *