যেভাবে চিকিৎসকের ৯৫ লাখ টাকা নিয়ে নিল তারা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: ডিবি, আয়কর ও ওয়ারেন্ট অফিসার ছাড়াও দুদক এবং হাইকোর্টের ভুয়া মামলার কাগজপত্র দেখিয়ে রাজশাহীর একজন নামকরা চিকিৎসকের কাছ থেকে  ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব  অভিযোগে রাজশাহীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আজিজুল হক ১৭ অক্টোবর রাতে রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

নগরীর তেরখাদিয়া স্টেডিয়াম এলাকার রুবেল সরকার ওরফে রাসেল সরকার (৩৩), লক্ষীপুর ঝাউতলা মিঠুর মোড় এলাকার তাফসিন আহমেদ (৩৩) ও তার ভাই ফয়সাল আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ প্রতারক তাফসিন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদকে গ্রেফতার করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার এসআই কাজল কুমার নন্দী আসামিদের আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছেন। মূল হোতা রুবেল সরকার এখনো পলাতক।

মামলার বাদী এজাহারে বলেছেন, আসামি তাফসিন ও ফয়সাল তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের বড়বোনের ছেলে। আত্মীয়তার সূত্রে তারা পরিবারে আসা-যাওয়া করতেন। প্রতারক চক্রের মূলহোতা রুবেল সরকার ওরফে রাসেল সরকার অপর দুই আসামি তাফসিন ও ফয়সালের বন্ধু ও প্রতারণা চক্রের সহযোগী। রুবেল সরকার নিজেকে কখনো ডিবি, কখনো দুদক কখনো আয়কর আবার কখনো ওয়ারেন্ট অফিসার পরিচয় দিতেন। আসামি তাফসিন ও ফয়সাল তাদের বন্ধু পরিচয় দেওয়া রুবেল সরকারকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর অফিসার বলে উল্লেখ করতেন।

এদিকে কিছুদিন আগে প্রতারকরা ডা. আজিজুল হকের কাছে হাইকোর্টের কথিত একটি আদেশের কপি হাজির করেন। ওই আদেশে রাসিকের ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ডা. আজিজুল হকের বিপুল অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য রিট মামলা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে ডা. আজিজুল হকের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য আবেদন হয়েছে- এমন একটি কপিও প্রতারকরা তাকে দেখান।

প্রতারকরা তাকে আরও বলেন, কাউন্সিলর মতির করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আপনার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য আয়কর বিভাগ ও দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে দুদক অভিযোগ পেয়ে আপনার সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করেছে।

এদিকে প্রতারকরা তাকে আরও বলেন- আপনি একজন সুপরিচিত চিকিৎসক। এ বিষয়গুলো জানাজানি হলে চিকিৎসক সমাজে আপনার মানসম্মান যাবে। অতএব তারাই বিষয়গুলো দেখবেন। সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। গত ১৫ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে প্রতারক চক্রটি তার কাছ থেকে তদবিরের কথা বলে মোট ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

তিনি তাদের হাইকোর্টের কথিত মামলার ফাইনাল আদেশের কপি আনতে বললে, তারা আজকাল বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। দুদক ও আয়কর বিভাগের অনুসন্ধানের বিষয়ে ফলাফল জানতে চাইলে প্রতারকরা তার কাছে আরও টাকা দাবি করেন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রতারকদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে ডা. আজিজুল হক বিশ্বস্ত লোক দিয়ে রাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কাউন্সিলর মতি তাকে জানিয়ে দেন তিনি কারও বিরুদ্ধে হাইকোর্টে কোনো রিট মামলা করেননি। কথিত কোনো মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।  অন্যদিকে দুদকে খোঁজ নিয়ে ডা. আজিজুল হক নিশ্চিত হন যে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ জমা দেননি। দুদক কোনো অনুসন্ধান অথবা তদন্ত কিছুই করছে না। এরপর তিনি নিশ্চিত হন যে তার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা হয়েছে।

অন্যদিকে তার কাছ থেকে নেওয়া টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সম্প্রতি তিন প্রতারকের মাঝে গণ্ডগোল শুরু হয়। এরই মধ্যে তিন প্রতারকের মোবাইল ফোনের ম্যাসেঞ্জারের কথোপকথনের রেকর্ড তিনি উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এসব কথোপকথন শুনে তিনি নিশ্চিত হন যে তার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা করে চক্রটি মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

রুবেল সরকার ওরফে রাসেল সরকার একটি বড় প্রতারক চক্রের হোতা। একপর্যায়ে তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তিনি প্রদত্ত টাকা ফেরত চাইলে তাকে হত্যার হুমকি এবং পরিবারের বড় ক্ষতি করা হবে বলে জানানো হয়। উদ্ধার করা প্রমাণপত্রসহ ডা. আজিজুল হক তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টের কথিত রিট মামলা ও দুদকের ভুয়া অভিযোগের কপি দেখিয়ে তিন প্রতারক ডা. আজিজুল হকের কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়েছে। দুই প্রতারককে মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টা পর গ্রেফতার করা হয়। চক্রের মূলহোতা কথিত ডিবি, আয়কর ও ওয়ারেন্ট অফিসার রুবেল সরকার ওরফে রাসেল সরকার পলাতক আছে। পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করি রুবেলকে দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *