বাঘায় এক সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে  জাল,ভুয়া  বিএড সনদে চাকরির অভিযোগ 

রাজশাহী লীড
বাঘা প্রতিনিধি: ২০১৭ সালে বিএড সনদ দাখিল করে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরিতে যোগদান করেছেন হাবিবুর রহমান।  উক্ত পদে এমপিও ভ’ক্ত হয়ে বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ উত্তোলন করছেন তিনি। কিন্তু রয়েল ইউনিভারসিটি অফ ঢাকা নামীয় বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রী অর্জনের সনদটি সঠিক নয়। ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে  তার বিএড ডিগ্রী অর্জনের সনদটি জাল/ভুয়া বলে জানা গেছে।
 রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক  মোঃ হাবিবুর রহমান(ইনডেক্স নম্বর-১০২৪২৯৩) এর বিএড সনদ যাচাইয়ের জন্য রয়েল ইউনিভারসিটি অফ ঢাকাকে পত্র দেওয়া হলে ইউনিভারসিটি কর্তৃপক্ষ ১২-২-২০২১ তারিখের স্বারক নং- ২২২২১/ঝ-জ-৬১/ঝখ-১২ পত্রে হাবিবুর রহমানের বিএড সনদটি ঋধশব মর্মে উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করেছেন। যার স্বারক নম্বর ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩১.০১২.২০.৩০৬ তারিখ ২৭-৫-২০২১ ইং। এর আলোকে  গত ১৩ সেপ্টেম্বর’২১ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর শিক্ষা কর্মকর্তা,মাধ্যমিক -১ এর চন্দ্র শেখর হালদার,  তার স্বাক্ষরিত পত্রে  (স্বারক নম্বর-৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩১.০১২..২০/১২০৯)পত্রে সহকারি প্রধান শিক্ষক  মোঃ হাবিবুর রহমানের জাল/ভ’য়া সনদের বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য বলেছেন। কারণ দর্শানো  সেই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এধরনের কার্যাবলি প্রচলিত আইন বিরোধী এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের(স্কুল ও করেজ) জনকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর অনুচ্ছেদ১৮/১(ঙ) ধারা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায়, জাল/ভ’য়া  বিএড সনদ দাখিল করে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও এমপিও ভ’ক্ত হওয়ায় জনকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর আলোকে তার বিরুদ্ধে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবেনা মর্মে কারণ ব্যখ্যার জবাব চেয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে পত্র দেওয়া হয়েছে।  সদয় অবগতি  ও কার্যার্থে  পত্র দেওয়া হয়েছে,উপ পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল, রাজশাহী,জেলা শিক্ষা াফিসার,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (বাঘা), সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক, কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (বাঘা,রাজশাহী) পিএ টু মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ,ঢাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঘা উপজেলার কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক  হাবিবুর রহমান কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিএড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। তবে তার ‘সনদ’ রয়েছে। তিনি সেই জাল নিবন্ধন সনদের বলে চাকরি করছেন এবং এমপিওভুক্তও হয়েছেন। বেতন-ভাতাদি তুলেও ভোগ করছেন।  রয়েল ইউনিভারসিটি অফ ঢাকা নামীয় বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রী অর্জনের সনদ দাখিল করে ২০১৭ সালে  কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন হাবিবুর রহমান। এর আগে একই উপজেলার দিঘা নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রথমে আ্যমেরিকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিএড সনদ দাখিল করে তিনি বিএড স্কেল পান। কিন্তু সেই বিশ^বিদ্যালয়ের বিএড কোর্সের (মঞ্জুরি কমিশনের) অনুমোদন না থাকায়,পরে রয়েল ইউনিভারসিটি অফ ঢাকা নামীয় বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রী অর্জনের সনদ দাখিল করে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিও করান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ওই পদে চাহিত যোগ্যতা ছিল ¯œাতকসহ বিএড ডিগ্রী।  চাহিত যোগ্যতা মোতাবেক অনেকেই আবেদন করলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কামরুজ্জামান, সনদ যাচাই বাছাইয়ের নিয়ম উপেক্ষা করে, বেআইনি প্রক্রিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে তাহাকেই নিয়োগ দিয়েছেন। তার সনদ জাল/ভুয়া বিষয়ে অবহিত হবার পরেও হাবিবুর রহমানকে এখনও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে বহাল রাখা হয়েছে। জাল সনদ সৃজন ও সঠিক দাবি করে ব্যবহারের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নগদ টাকায় ‘রফা করে’ পার পেয়ে যাচ্ছেন।
সহকারি এক শিক্ষক এ,এইচ,এম জামান জানান, বিষয়টি নিয়ে মহা পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগে ২০০৫ সালে আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় ও রয়েল ইউনিভারসিটি অফ ঢাকা নামীয় বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রী অর্জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও একজন এ্যাডভোকেটের মাধ্যমে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান ও নিয়োগপ্রাপ্ত  সহকারি প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের নিকট লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কাশেম ওবায়েদ বলেন,আমার যোগদানের আগে তার নিয়োগ হয়েছে। সুতরাং বিষয়টি আমার জানা নেই। সদয় অবগতি  ও কার্যার্থে  দেওয়া পত্র তিনি পাননি। পেলে বিষয়টি খুতিয়ে দেখবো।
 জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন বলেন, সদয় অবগতি  ও কার্যার্থে  দেওয়া পত্র পেয়েছেন। সেই মতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলেছেন।
কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে সনদ যাচাই করে ওই সহকারি প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার সনদ সঠিক আছে মর্মে কারণ দর্শানো হয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, সব কিছু নিয়ম মাফিক করা হয়েছে মর্মে কারণ দর্শানো হয়েছে।
 এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা(মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক (ডিডি) (ভারপ্রাপ্ত)অধ্যাপক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরি জানিয়েছেন, আবেদন জমা দেওয়ার সময় দেখভালের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের। এমপিও ভ’ক্তির নীতিমালার বাইরে যদি কেউ কোনো জাল /ভুয়া সনদ জমা দিয়ে থাকেন, তার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানই দায়ী থাকবেন। তবে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *