বাঘার পদ্মায় ড্রেজারে বালু উত্তোলনের হিড়িক, মানা হচ্ছেনা নির্ধারিত সীমানাও  

রাজশাহী লীড
বাঘা  প্রতিনিধি:  পদ্মার চরাঞ্চলের বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ল²ীনগর এলাকার নদীর ঘাটে ভিড়ানো ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকা। এসব নৌকায় সেটিং রয়েছে বালু তোলার কাজে ব্যবহারযোগ্য বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। অনেকের কাছে এগুলো ড্রেজার মেশিন নামে পরিচিত। নৌকায় এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে পদ্মার তলদেশ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। বালু তোলার এই হিড়িক চলছে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ল²ীনগর এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, সকালের দিকে পদ্মার ঘাটে এসে ভিড়ে এ ধরনের আরো অনেক নৌকা। পদ্মা নদীর কাছে দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলা হলেও প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা নের্তৃস্থানীয় রাজনৈতিকদের কেউ কখনো এ বিষয়ে দেখভাল করতে আসেনি। পদ্মার নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ বালু তোলার ফলে বাড়িঘর ও নদীরপাড় হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনে বিনষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনজীবন মারাত্মক সংকটে পড়েছে । নির্ধারিত সীমানাও মানা হচ্ছেনা। অবৈধভাবে বোমা মেশিনে বালু তোলার পর  সেখান থেকে নৌকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর বাঁকে বাঁকে বোমা মেশিনে পাইপে করে বালু তোলার উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। পরিবেশ অভিজ্ঞদের মতে ড্রেজার কিংবা মেশিনে বালু তোলার শব্দের কারণে জনসাধারণের পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে, নদীর ঘাটে দেখা হয় চকরাজাপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারি মেম্বর ফাতেমা বেগমের সাথে। চরাঞ্চলের ভাষায় তিনি বলেন,কার কথা কি কমু। হেই (এই) কাজের সাথে অনেকেই জড়িত। নিজেও তো দেখবার পাচ্ছেন, বালু তোলার কারণে জেগে উঠা চর কিভাবে ভাঙতাছে। কেউ তো ফিরেও চায়না। কারো নাম কইয়া বিপদে পড়তে রাজি নয়। তবে কয়েকমাস ধরেই পদ্মার ভাঙ্গন কম বেশি চলছে বলে জানান তিনি। এতে, এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি ও আবাদি জমি-গাছপালা নদী গর্ভে গেছে। দীর্ঘদিনের ভাঙ্গনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রামটি। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৩ ভাগের একভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে।
নদীর তলদেশ থেকে বোমা ও ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখিয়ে লক্ষীনগর গ্রামের জামরুল ইসলাম ও পলাশিফতেপুর গ্রামের মোবারক সেখ বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন। স্থানীয় আব্দুস সালাম সেখ ও মিজানুর রহমান বলেন, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে নিদিষ্ট সীমানার বাইরে নদী পাড়ের কাছাকাছি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
তারা জানান,উপজেলার তিনটি বালুমহাল বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আাবেদন করেছিলেন পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম ফারুক। বালু মহাল তিনটি হলো- উপজেলার কিশোরপুর.চকরাজাপুর ও লক্ষীনগর। তার আবেদনে নানা রকম ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু কোন ফল হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ল²ীনগরসহ পলাশিফতেপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। প্রশাসনও তাদের কাছে অসহায়। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বেশকিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বালু তুলছেন।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,ছোট-বড় মিলে একটি নৌকায় বালু যায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ফুট। প্রতিফুট বালুর জন্য দিতে হয় ২টাকা হিসেবে। আর মাস্তানদের দিতে হয় প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০শ’টাকা।
বাঘা উপজেলার পদ্মার এপারে লক্ষীনগর,জোতাশি ও কালিদাশখালি গ্রাম। আর পদ্মার ওপারে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর,রাইটা ও চিলমারি গ্রাম। এ দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী লোকজনের সাথে বালু উত্তোলনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে, গোলাগুলিসহ অস্ত্রের মহড়াও চলেছে। গত আগষ্ট মাসে উপজেলার লক্ষীনগর এলকায় চাঁদাবাজি করতে এলে দৌলতপুর থানার, ফিলিপনগর ও ফারাকপুর গ্রামের ৩জনকে দেশীয় অস্ত্র ও গুলিসহ (পিস্তল, পাইপগান ও গাদা বন্দুকসহ তিন রাউন্ড গুলি) আটক করে পুলিশে দেয় জনতা। তাদের ব্যবহৃত স্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকাও আটক করা হয়। এর আগেও ড্রেজার মিশিনসহ ৪টি নৌকা আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চকরাজাপুর  ইউনিয়নের চের্য়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ইজারা নেওয়া হলেও বোমা মেশিন ব্যবহার, নদী তীরের কাছাকাছি বালু তোলা মানে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তবে ৬০ একর জলমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করে অন্যান্য স্থানে বালু তোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 উপজেলা ভ’মি অফিস সুত্রে জানা গেছে,১৪২৮ সনের জন্য চকরাজাপুর ও লক্ষীনগর বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার সাব্বির হোসেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সবকিছুই তো জানেন-বোঝেন। এ বিষয়ে পওে কথা বলছি বলে ফেংান কেটে দেন
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *