তানোরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছে নতুন চমক

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছে নতুন চমক বলে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের অভিমত ।গত শনিবারে বিকেলের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা থেকে এমন বার্তায় পাওয়া গেছে বলে একাধিক সিনিয়র নেতারা নিশ্চিত করেন।
জেলা নেতৃবৃন্দ আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে সকল দায়িত্ব পালন করবেন শরিফ খান এমন ঘোষণাও দেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম দুই নম্বর সদস।গত রোববারে ফেসবুকে শরিফ খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করায় অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দেখা  যায়।অবশ্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয় এক প্রকার বাধ্য হয়ে বলে নিশ্চিত করেন সিনিয়র নেতারা। কারন দলের সভাপতি সম্পাদক  শীর্ষ পদে থেকে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারনেই অন্যকে দায়িত্ব দিতে হচ্ছে  । ফলে নতুন কমিটির নতুন নেতৃত্ব এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে উপজেলার মুন্ডুমালা এবং তানোর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুন্ডুমালায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুসারী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  সাইদুর রহমান নৌকা প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন।নৌকা পান পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আমির হোসেন আমিন। তিনি প্যানেল মেয়র ছিলেন।এর আগেও তিনি পৌর সদরের কাউন্সিলর। ক্লিন ইমেজের পরিচ্ছন্ন ব্যাক্তি। কিন্তু নৌকা ফুটো করতে রাব্বানী মামুন, সাইদুর রহমান কে বিদ্রোহী প্রার্থী করে সকল ধরনের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ আছে এবং নৌকা পরাজিত হয়,সাইদুর রহমান সামান্য ভোটের ব্যবধানে মেয়র হন। অবশ্য এরও কারন আছে রাব্বানী পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় গত বছর করোনার লকডাউনে সাইদুরের মাধ্যমে সকল ধরনের খাবার দিতেই থাকেন পৌর এলাকায় ।শুধু সাইদুর রহমান কে মেয়র করবে এবং নৌকা প্রতীক এনে দিবে এবং তিনি নিবেন এমপি টিকিট এমন স্বপ্নই ছিল তাদের।  দলীয় প্রতীক পেয়েই গেছে এভরশায় ওই সময় প্রচুর  খাবার সামগ্রী দিয়েই ভোটারদের মনে জায়গা করে নেন সাইদুর।এত টাকা খরচ করব,আর মেয়র হব না তা হতে পারেনা। আর সাইদুরের ভোটে অনেক ক্ষতি হবে এজন্য সভাপতি সম্পাদক  একদিনও  নৌকার ভোট করতে আসেন নি।বরং ফুটো করতে যা যা করনীয় সবই করেছেন তারা এবং তাদের অনুসারীরা। ওই সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দিন রাত শ্রম দিয়েছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাংসদ প্রতিনিধি যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। কিন্তু তানোর পৌর নির্বাচনে রাব্বানী মামুন অনুসারী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমরুল হক নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর দাবিয়ে ভোট করেছিলেন রাব্বানী মামুনসহ অনুসারীরা। এখানেও নৌকার হয়ে ভোটের মাঠে প্রচুর ভুমিকা এবং অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করেন চেয়ারম্যান ময়না।
চলতি মাসের ১১ নভেম্বর  দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার সাতটি ইউপির  মধ্যে ছয়টির নির্বাচন।  ছয়টিতেই রাব্বানী  মামুন নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী দেন।তবে নৌকার বিজয় হয় চারটিতে।দুটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয় লাভ করলেও তারা রাব্বানী মামুন বিরোধী। অবশ্য রাব্বানী মামুন অনুসারী কেউ নৌকা প্রতীক পান নি।এমনকি প্রতিটি ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যানরা নৌকা পেলেও কামারগাঁ ইউপির চেয়ারম্যান নৌকা পাননি।কারন তিনি নামধারী রাব্বানী মামুনসহ সেভেন স্টারের অন্যতম অর্থ দাতা এবং গত উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদেরও জোগান দাতা ছিলেন।যার কারনেই পায়নি নৌকা প্রতীক বলে মনে করেন তৃনমুল।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে তানোর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী দেন সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাদের প্রার্থীদের প্রতীক ছিল মোটরসাইকেল। প্রতিটিতেই পরাজিত হয় মোটরসাইকেল। চরম কোনঠাসা হয়ে পড়ে রাব্বানী মামুনসহ তাদের অনুসারীরা। এক প্রকার রাজনীতির মাঠ থেকে গায়েব হয়ে রাজনীতি ছাড়ার বার্তা দিচ্ছেন।
অপরদিকে সাংসদ প্রতিনিধি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না প্রতিটি ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে দলের প্রবীণ নবীন তৃনমুল নেতাকর্মীদের আস্হাশীল নেতায় পরিনত হয়েছেন। যার কারনেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার জোর দাবি উঠেছে। এছাড়াও নৌকার প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে  তানোর পৌর  সাধারণ সম্পাদক  আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে তৃনমুলের আস্হার প্রতীক হয়েছেন।
নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি  আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, আব্দুল মতিন, আতাউর, ফজলে রাব্বি ফরহাদরা জানান, রাব্বানী মামুনের কোন অধিকার নেই আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার।তারা গত উপজেলা নির্বাচন থেকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে নিজেদেরকে কিসের আওয়ামী লীগ দাবি করেন।যারা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারাও মুশতাক মার্কা আমিলীগ।তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।আগামীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের কর্নধর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাংসদ প্রতিনিধি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না কে এবং সম্পাদক হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার কে করলে দলে কোন গাদ্দার থাকবেনা।কারন তাদের দ্বারাই আগামীতে সুসংগঠিত হবে দল।কোন ষড়যন্ত্র কারী থাকবেনা।
এসব বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান,বিগত জাতীয় নির্বাচন থেকে সভাপতি গোলাম রাব্বানী এমপির টিকিট না পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।এরপর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজের ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম কে ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।চলতি বছরের শুরুতে মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে রাব্বানীর একান্ত অনগত সাইদুরকে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে নৌকা ফুটো করতে মরিয়া হয়ে উঠে। চক্রান্তের মাধ্যমে নৌকা সামান্য ভোটে পরাজিত হয়। উল্টো চিত্র তানোর পৌর নির্বাচনে তাদের অনুসারী নৌকা প্রতীক পাওয়ার কারনে প্রায় দিন ভোটের মাঠে ছিল। আমি নিজেও নৌকার পক্ষে ভোট করেছি।কিন্তু গোল্লাপাড়া ফুটবল মাঠে নির্বাচনী জনসভায় আমাদের কে আহবান করা হয়নি।বিদ্রোহী মেয়র সাইদুর ও নৌকার মেয়র ইমরুলের বিজয়ে তাদের উচ্ছ্বাস ছিল কল্পনাতীত ।কিন্তু ইউপি নির্বাচনে রাব্বানী মামুন বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে শহরে থাকলেন।তারা একদিনও নৌকার জন্য ভোট করতে এলাকায় আসলনা।অবাক করার বিষয় রাব্বানী নিজের ভাই শরিফুল কে পুনরায় পাঁচন্দর ইউপিতে নৌকার বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোটে নামালেন।নৌকার বিরুদ্ধে নাকি তাদের পারিবারিক প্রতীক মোটরসাইকেল।মতের অমিল থাকতে পারে তাই বলে নৌকার বিরুদ্ধে,নৌকা ফুটো করতে মরিয়া হয়ে পদে থাকা যায় না। তাদের অন্তত নুন্যতম বিবেক থাকলে নৌকার বিরুদ্ধে যেতে পারতনা।গত শনিবার কার্যনির্বাহী কমিটির সভা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু তারা কোন সভা বা জাতীয় দিবস  কিংবা পনের আগষ্টের মত সভাও করতে চাইনা।বাধ্য হয়ে সহসভাপতি কে সভার সভাপতি করে সকল ধরনের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। কিন্ত এক নম্বর সহসভাপতিও এবার নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোট করেছেন।বাকিরা কেউ তাদের অনুসারী অনেকে মারা গেছেন।আর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফ খান উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নম্বর সদস্য। এজন্যই সভার সভাপতি করা হয়েছিল এবং উপজেলা কার্যনির্বাহী কমিটির বেশির ভাগই রাব্বানী মামুনের মাধ্যমে কাউন্সিল করবে না।তারা এমনিতেই পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে জেলা কমিটি।এখন জেলা কমিটি সম্মেলন পর্যন্ত একটি কমিটি করে দিবে,তাদের মাধ্যমেই হবে সম্মেলন। আর আমি যুবলীগের সভাপতি হিসেবে একজন বিদ্রোহী প্রার্থীসহ পাঁচ জনকে অব্যহতি দিয়ে জেলায় সুপারিশ করা,দ্রুতই তারা বহিষ্কার হবেন।তৃনমুল থেকে দাবি উঠেছে আপনাকে সভাপতি করার জন্য জানতে চাইলে তিনি জানান, দল যদি মনে করে আমাকে দায়িত্ব দিলে ভালো হবে তাহলে আমি প্রস্তুত। কিংবা অন্য কাউকে দিলেও নৌকার জন্য দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করে কাজ করছি করেই যাব।
অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি গোলাম রাব্বানীর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান আমি আর কি রাজনীতি করব।তারাই সব আমি কিছুই না।এভাবে কি অব্যাহতি দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে বলেন না।আপনি সরাসরি  নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এটা করতে পারেন কিনা প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন যেভাবে আমাকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে বলেই মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।তবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *