বাঘায় অসময়ের ভাঙনে পদ্মার পাড় জুড়ে দিশেহারা মানুষের হাহাকার

রাজশাহী লীড

বাঘা  প্রতিনিধি: অসময়ে পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ। ঠিকানা হারানো মানুষগুলো ঘরবাড়ি গুটিয়ে ছুটছে আশ্রয়ের সন্ধানে। এলাকায় বসতি স্থাপনের জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার খাজানগর,দৌলতপুর পাবনার ইশ্বরদী উপজেলায় চলেও গেছেন। আবার কেউ এলাকায় বসতি স্থাপনের জায়গা খুঁজছেন। কিন্তু বর্তমানে জমিতে ফসল থাকায় লিজ নিয়ে ঘর তোলার জায়গাও পাচ্ছেননা। তারা আশ্রয় নিয়েছেন এলাকার নিকটবর্তী আতœীয়র বাড়িতে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে শতাধিক মানুষ। পদ্মার পাড় জুড়ে চলছে নিঃস্ব মানুষের হাহাকার। এসব দৃশ্য দেখা গেছে,বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাশখালি ও লক্ষীনগর ভাঙন কবলিত এলাকায়। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়ন।

শুক্রবার(০৩-১২-২০২১) সরেজমিন ভাঙন কবলিত গিয়ে জানা যায়, অর্ধশতাধিক মানুষের বাড়ি ভিটার জায়গা জমি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের স্বীকার ও হুমকিতে রয়েছে, আনোয়ার হোসেন,জলিল উদ্দীন, আফজাল হোসেন,এব্রাহিম হোসেন, আব্দুল আজিজ, সোলেমান হোসেন ও সাইদুর রহমান। তাদের মতো একই অবস্থা দিনার আলী খাঁ, আকমল হোসেন, লিটন আলী, আরিফুল ইসলাম, ফুলচান, ছনিয়া বেগম, নুর মোহাম্মদ, আব্বাস আলী, সুলতান আলী, সাহাজান আলী, হালিম উদ্দীন, জাফর আলী, বছির আলী, আলাল উদ্দীন, নিতাই চন্দ্র, ওছির প্রামানিক সহ অনেকের।

এবারে ভাঙনের স্বীকার নাসরিন বেগম বলেন, ভাঙনের আগে স্বামী আলী আকবর খাঁ কাজের সন্ধানে গেছেন ঢাকায় । অসময়ের ভাঙনে ছেলে মেয়ে নিয়ে বড্ড বিপদে পড়েছি। জন্ম ভ’মির প্রতি ভালোবাসায় এলাকা ছাড়তে পারছিনা। এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁছেন। কিন্তু পাচ্ছেননা। সরিয়ে আনা বাড়ির টিনের চালা তুলে আপাতত বসবাস করছেন। পদ্মার ভাঙনের মুখে রয়েছে ৭২ বয়োসার্ধ্ব রাজ আলী সরকাওে বসত ভিটা । স্ত্রী রসিয়া বেগম ক্যান্সারে আক্রান্ত। বাড়িঘর নিয়ে কথায় যাবেন এ চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মার পানি কমলেও ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। গত তিন মাস ধরেই পদ্মার ভাঙ্গন কম বেশি চলছে। এতে বিলীন হচ্ছে গাছপালাসহ ফসলি জমি, গ্রাম, সড়ক, ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত অক্টোবর মাসে ভাঙনের কবলে পড়লে কালিদাশখালি গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও পরিষদ সংলগ্ন চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক। এর আগে ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়ি ভিটার জায়গা হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। দীর্ঘদিনের ভাঙ্গনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রামটি। ইউনিয়নের ৩ ভাগের একভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে ।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাখালী গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, তার ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। নদী ভাঙনের কারণে ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। ২৬ ডিসেম্বর ইউনিয়নে নির্বাচন। এবারো প্রার্থী হয়েছেন। চলে যাওয়া ভোটারদের খুঁজে পাচ্ছি না।

চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে চকরাজাপুর  ইউনিয়ন। গত বছরের ভাঙনে বিদ্যালয়টি দুই কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এবছর ভাঙনের কবলে পড়েছে তার বিদ্যালয়টি। পদ্মার ভাঙনের জন্য নদী তলদেশ থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

লক্ষীনগর গ্রামের সলেমান খাঁ বলেন, বালু উত্তোল আর নদী ভাঙনের দৃম্য দেখিয়ে বললেন,একদিকে চলছে বালু উত্তোলন আরেকদিকে ভাঙছে পদ্মা।
স্থানীয়রা জানান, গত তিন দশকে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসত ভিটা,রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজার, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়,মসজিদসহ কবরস্থান। বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে স্বচ্ছল-কৃষি নির্ভর প্রায় হাজার হাজার পরিবার।

সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, নদী তার গতিতে নিয়মিত ভাঙছে। ইতোমধ্যে, তার বাড়িসহ ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ও কমিউিনিটি ক্লিনিক অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। শুনেছি উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত নদী শাসনের আওতায় আনার একটি প্রকল্প হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মার প্রান্ত নদী ভাঙনের হাত হতে রক্ষা পাবে। বাঁচবে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের লোকজন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের বিষয়ে অবগত আছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *