তানোরে পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রতিবন্ধী মহিলাসহ বোনকে পেটালেন নৈশপ্রহরী

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে পাওনা টাকা চাওয়ায় উপজেলার কামারগাঁ শ্রীখন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খাইবর আলী নামের নৈশপ্রহরী এক প্রতিবন্ধী মহিলাসহ তার বড় বোনকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় প্রতিবন্ধী মহিলা খাতুন বেগম ও তার বোনেরা কোথাও বিচারের জন্য যেতে না পেরে, এক প্রকার বাধ্য হয়ে কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ দেন। কিন্তু কামারগাঁ ইউপির মেম্বার ও শ্রীখন্ডা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম রাজা ও ওই এলাকার শিমুল নামের ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার নেতৃত্বে গত শুক্রবার বিচার সালিশ বসে। তারা প্রতিবন্ধী ও তার বোনদের উপর ৩৫হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে ৫ শত টাকা জরিমানা করেন। এমন অমানবিক বিচার না মেনে উঠে আসেন অসহায় বিধবা বোনেরা। মুহূর্তের মধ্যে এমন সালিশ বিচারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুরে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির শ্রীখন্ডা মজুমদার পাড়ার মৃত সাজ্জাদ আলীর অসহায় মেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ খাতুন বিগত তিন বছর আগে শ্রীখন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী একই পাড়ার ঘর জামাই খাইবর আলী দুঃস্থ বা ভিজিডির কার্ড করে দেওয়ার জন্য ৮০০ টাকা নেয়। কিন্তু তুন বছর পেরিয়ে গেলেও এতদিনেও কোন কার্ড না পাওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে খাইবরের নিকট পাওনা টাকা চাইলেও তিনি কোন টাকা না দিয়ে উল্টো তাদের কেই গালিগালাজ করেন। এঅবস্হায় চলতি মাসের ৭ ফেব্রæয়ারি তারিখে পুনরায় খাতুন টাকা চায় নৈশপ্রহরীর কাছে।পরদিন খাইবরের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খাতুন কে বেধড়ক মারপিট করতে থাকেন, তার চিৎকারে বিধবার বড় বোন সমরত বেওয়া সেখানে যাওয়া মাত্রই তার নাকে আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় বোনকে উদ্ধার করে ইউপি সদস্য রাজার কাছে বিচার চাইতে আসেন। কিন্তু বিচার না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট ১৬ ফেব্রæয়ারি ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দেন।
গত শনিবার সরেজমিনে মজুমদার পাড়ায় খাতুনের বাড়ির কাছে যাওয়া মাত্রই পাড়ার অনেক মহিলারা উপস্থিত হন।
খাতুন জানান, চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেওয়ার অপরাধে আমি ও আমার বড় বোনকে ছিনতাই কারী সাজিয়ে সালিশ বিচার করেন গত শুক্রবারে। সালিশে আমাদেরকে কোন কথা বলতে দেয়নি সালিশ করা ব্যক্তিরা। উল্টো আমরা নাকি খাইবরের ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেছি। এই অপরাধে আমার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু আমরা সেই সালিশ না মেনে চলে আসি।
খাতুনের বিধবা বড় বোন সমরত জানান,গরীবের কোন বিচার নাই।আমরা মার খেলাম,নাক দিয়ে রক্ত বের করে দিল,আর সালিশে আমাদের ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।
খাতুনের ভাই জালাল জানান, কয়েক দিন ধরে মেম্বার রাজা বলছে যা হওয়ার হয়ে গেছে পাড়ায় বসে বিচার সালিশ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আমার অসহায় বোনদের ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে উল্টো জরিমানা করেন।
সালিশে থাকা এক ব্যক্তি জানান,মেম্বার রাজা নামধারী ওয়ার্ড নেতা শিমুলের নেতৃত্বে সালিশ বিচার হয়। কিন্তু তারা নৈশ প্রহরী খাইবরের জন্য এক তরফা বিচার করবেন ভাবতে পারিনি।
তবে মেম্বার শফিকুল ইসলাম রাজা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সামাজিক ভাবে সবাইকে নিয়ে সালিশ বিচার করা হয়েছে।
পাড়ার একাধিক বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারা জানান, খাতুন ধার দেনা করে খাইবরকে টাকা দিয়েছিল।টাকা ফেরৎ চাওয়ার অপরাধে তাদেরকেই মারপিট করল।খাইবর প্রচুর ঋনে পড়ে আছেন। প্রায় দিন তার বাড়িতে পাওনাদার ও কিস্তির লোকজন আসেন।সে বাজারেও যেতে পারেনা। টাকা দিতে না পারলে পরিস্কার করে বলে দিত। তাহলে আমরা প্রতিবেশিরা যার কাছ থেকে খাতুন ৮০০ টাকা নিয়েছিল আমরা সেটা পরিশোধ করতাম। তাই বলে মা বয়সী খাতুন ও তার বোন সমরত কে এভাবে মারপিট করবে, আর বিচারকরা উল্টো বিচার করবেন এটা কোন আইন বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এদিকে খাতুন বেগম প্রতিবন্ধী। তবে কি প্রতিবন্ধী জানতে চাইলে তারা সবাই নিরব হয়ে পড়েন। এক মহিলা জানান, না জানাই ভালো বলেও কান্না শুরু করেন।
কামারগাঁ ইউপির চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি ফরহাদ জানান, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা।

স্ব.বা/ রু

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *