কৃষি বৈচিত্র্যে ভরপুর বাঘা উপজেলা, চরের কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

রাজশাহী

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা (রাজশাহী): প্রধান অর্থকরি ফসল আম, হুলুদ. খেজুরগুড়,পাটসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদনে অন্যতম রাজশাহীর বাঘা উপজেলা। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সব গ্রামেই রয়েছে আমবাগান। আর এসব আমবাগানে আবাদ হচ্ছে গম,মসুর,মটর,ক্ষেসারি,ভ’ট্রাসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য। হুলুদ আবাদও হচ্ছে আমবাগনে। লেবুর চাষ ও ফুলের বাগানও গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ। শীতকালে খেজুর গাছ থেকে আয় হয় কোটি কোটি টাকা।

উপজেলার চরের কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এক সময়ের অনাবাদি চর এখন শস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। সকল ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে বাঘার চরে। সারি সারি কুল বাগান, আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বিভিন্ন আন্তঃফসল চাষ চরের কৃষিকে দিয়েছে বহুরূপিতা। উপজেলার উৎপাদিত আম গুণে-মানে সেরা সেই বিষয়টি তুলে ধরতে ম্যাংগো ব্রান্ডিং কম্পিটিশন আয়োজন করে, সুধীসমাজে সমাদৃত হয়েছে। বিগত দুইটি ফলদ বৃক্ষমেলায়, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তথ্যসহ সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ ১ম স্থান অর্জন করেছে।

কৃষি বৈচিত্র্যেময়তার কারণে কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমনের জন্য বেছে নেওয়া হয় বাঘা উপজেলাকে। রাজশাহী অঞ্চলের উপ পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লার নের্তৃত্বে রাজশাহী ,নওগা,নাটোর , চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার ৩০ জন কৃষক মঙ্গলবার (১৫-০৩-২০২২) থেকে দুইদিনের উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমনে অংশ নেন।

অন্যদিকে জলাবদ্ধ বিলের অনাবাদি প্রায় ২০০ বিঘা জমি আবাদের আওতায় আনার জন্য জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করেছেন কৃষি অফিসার। তিনি বলেন, যে উদ্যোগ নিয়েছি, এটিকে বলা হয় “ভূ-গর্ভাশায়ণ’’। উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও কোন-কোন এলাকায় এ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

তাঁর মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারে খরা প্রবণ এলাকায় বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে জমা রেখে শুষ্ক মৌসুমে এ পানি র্নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যাবে। বর্ষা মৌসুমে পানি ভূগর্ভে রিচার্জ করে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ এমনকি সুপেয় পানি হিসেবেও পান করা যাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই কৃষি বিভাগের কার্যক্রমকে কৃষকদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়াসহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ কাজ করছেন। খামার যান্ত্রিকীকরণে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ, মিনি গার্ডেন টিলার, ফুট পাম্প স্প্রেয়ার বিতরণ করেছেন। শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি, সাথী ও আন্তঃমিশ্র ফসল চাষ, কন্দাল ফসলের চাষ, ফুল চাষ, মসলা জাতীয় ফসলের চাষ, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাাইকো কম্পোস্ট এর ব্যবহার, তিল চাষ, ডাল ও তেল জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, মৌচাষ, নতুন ফসল পেরিলা, একানী, কিনোয়া,আমড়া,সজিনা চাষের সম্প্রসারণ করে কৃষকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ নানা ধরনের জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বাঘাতে নতুন নতুন ফসল অন্তর্ভুক্ত করা এবং এই উপজেলার ফসলের রপ্তানি বৃদ্ধি ও দেশের বিভিন্ন সুপারশপে উপজেলার আমসহ অন্যান্য ফল এর মার্কেটিং তৈরিতে সাহায্য করেছেন। টিমওয়ার্কের মাধ্যমে ফসলের মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সেবা করে যাচ্ছেন উপজেলার পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন ।

কৃষি অফিসার বলেন, উপজেলার কৃষকরা অনেক অগ্রগামী এবং নতুন ফসল চাষে যথেষ্ট আগ্রহী। তাই উপজেলার কৃষি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। রাজশাহীর অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বর্তমানে বাঘা উপজেলায় সার, প্রণোদনা, পুনর্বাসন তুলনামূলক বরাদ্দের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি ও কৃষিক্ষেত্রে সরকারের অর্জনসমূহসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছেন। উপজেলায় আরো কিছুদিন থাকা স্বম্ভব হলে উপজেলার কৃষি শুধু রাজশাহী নয় পুরো বাংলাদেশের কৃষির জন্য অনুকরণীয় হবে বলে আশা করছি।

উপজেলার পারশাওতা-বিনোদপুর গ্রামের কৃষক সাহাবুল ইসলাম জানান, সাড়ে ১৩ বিঘা জমিতে বারি-৩০,৩২ ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন। এর মধ্যে আমবাগান করা জমিতে আবাদ করেছেন সাড়ে ৭ বিঘা। ফাঁকা জমিতে ১৮/২০ মণ আর আমবাগানের জমিতে আবাদ কর গমের ফলন আশা করছেন ১৩/১৪ মণ। বিঘা প্রতি তার খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। চন্ডিপুর গ্রামের চাষি এনামুল হক বলেন, ১বিঘা জমিতে বীজ লেগেছে ২৫ কেজি। বারি ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন তিনি।বিঘা প্রতি ফলন আশা করছেন১৪/১৫ মণ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার গত বছরের তুলনায় এবার গমের অধিক ফলন আশা করছেন চাষিরা। আগের তুলনায় কৃষিকাজে ব্যাপক সফলতা এসেছে বলে জানান কৃষকরা।

উপজেলার গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হাওয়ায় দুলছে বাগানে আবাদ করা গমের শীষ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *