কৃষকের আত্মহত্যা: ছুটে গেলেন সাংসদ ফারুক চৌধুরী শাস্তি দাবি করলেন বিএমডিএর কর্মকর্তাদের

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীতে এসেই সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী ছুটে গেলেন গোদাগাড়ী উপজেলার সেচের পানি না পেয়ে বহুল আলোচিত আত্মহত্যায় নিহতের শোকাহত দুই সাঁওতাল পরিবারের কাছে। দুই সাঁওতাল কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাদের পাশে থেকে পরিবারের সদস্যদের সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে বিএমডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে বিগত ২০২০ সালে অভিযোগ পেয়ে বিএমডিএকে ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করি, কিন্তু বিএমডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোন ধরনের গুরুত্ব দেন নি। পরে ২০২১ সালে পুনরায় অভিযোগ পেয়ে অপারেটর পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেও তারা পরিবর্তন করেনি। যদি আমার সুপারিশে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হত তাহলে আমার নির্বাচনী এলাকা গোদাগাড়ী উপজেলার দুই কৃষক কে পানি সেচ না পেয়ে আত্মহত্যা করতে হত না। কেন অপারেটর পরিবর্তন করা হল না, কার নির্দেশে দূর্নীতিবাজ সাখাওয়াতকে বহাল রাখা হল, এর দায় সম্পন্ন বিএমডিএর কর্মকর্তাদের। কারন সাংসদ ফারুক চৌধুরীর সাক্ষরিত দুই সালের দুটি অভিযোগ পত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিগত ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে কৃষকরা গোদাগাড়ী উপজেলার বিএমডিএ জোন ২ কাঁকনহাট সহকারী প্রকৌশলীর বরাবর অপারেটরের অনিয়ম তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই কপিতে রাজশাহী -১ (তানোর গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য লিখিত সুপারিশ করেন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে গ্রামের কৃষকরা কারিনা খাতুন নামের এক মহিলা কে অপারেটর নিয়োগের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী বিএমডিএ রাজশাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে সাংসদ নতুন অপারেটর নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন । এমন লিখিত কপিও পাওয়া গেছে।

সাংসদ আরো বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে আমি জোর সুপারিশ করলেও রহস্য জনক কারনে পরিবর্তন করা হয়নি অপারেটর সাখাওয়াত কে। দুই কৃষকের করুন মৃত্যুর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না বিএমডিএ।

স্হানীয় দের দাবি যদি সাংসদের সুপারিশে কাজ করত বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী তাহলে দুই কৃষক কে আত্মহত্যা করতে হত না। কেন সাংসদের সুপারিশ মানলেন না রাজশাহী বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী। কোন ক্ষমতায় তিনি সাংসদের সুপারিশ শুনলেন না। এজন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন ( বিএমডিএর) নির্বাহী প্রকৌশলী কে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারন তারা একজন সাংসদের সুপারিশ কে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য আত্মহত্যার মত মর্মান্তিক পদ বেছে নিতে হয়েছে দুই সাঁওতাল কৃষক কে।

এমপি ওমর ফারুক আরো বলেন, ‘গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরোনো। এ জন্য স্থানীয় কৃষকেরা অপারেটর পরিবর্তনের জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে বিএমডিএতে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তিনি দুটি অভিযোগপত্রেই সুপারিশ করে দিয়েছিলেন। তারপরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে গেল। তাই বিএমডিএ এর দায় এড়াতে পারে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার।’

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এই সাংসদ গতকাল রোববার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউপির নিমঘুটু গ্রামে গিয়ে প্রথমে আত্মহত্যা করা কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে রবি মারান্ডির মা দলিনা মুর্মু ও বড়ভাই সুশীল মারান্ডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁরা সবাই অভিযোগ করেন, গভীর নলকূপ থেকে সময়মতো পানি না দেওয়ায় রবি ও তাঁর চাচাতো ভাই অভিনাথ বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।

দুই কৃষকের আত্মহত্যা: সেচের পানি বিতরণে অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

সুশীল মারান্ডি সাংসদকে বলেন, আর কোনো কৃষক যেন পানির জন্য আত্মহত্যা না করে। তিনি এটাই চান। এ সময় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী আশ্বস্ত করেন, তিনি ক্ষুদ্র-জাতিসত্তার কৃষকদের পাশে আছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন। তাই আসতে পারেননি। দেশে এসেই এখানে এসেছেন।

 

সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী মৃত অভিনাথের দুই নাবালক ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমকেও সহায়তার আশ্বাস দেন।

চলতি বছরের গত ২৩ মার্চ কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। একদিনের ব্যবধানে দুজনেরই মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বিএমডিএর গভীর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। বিএমডিএ তাঁর নিয়োগ বাতিল করেছে।

স্হানীয়রা আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে যিনি আছেন তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।তিনি সাংসদের সুপারিশ মানলে দুই সাঁওতাল কৃষক কে সেচের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হত না। এরা গভীর নলকূপের অপারেটর পরিবর্তনে নামে ব্যাপক বানিজ্য করেন বলেও অহরহ অভিযোগ রয়েছে।

বিএমডিএর ০১৭১২- ১৪২৯১৭ মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান আমি পরিচালক, অপারেটর পরিবর্তন করেন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ তিনি ভালো বলতে পারবেন। তার মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি দেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদের ০১৭২৭-৭৮৭১২৪ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পর রিশিভ করলে জানতে চাওয়া হয় সাংসদ ফারুক চৌধুরী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে অপারেটর পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করলেও কেন করা হয় নি তিনি জানান বিষয়টি এমন না। সুপারিশের লিখিত কপি আছি, আপনি কেন মানেন নি প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে আছি এবিষয়ে পরে কথা বলছি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সাংসদের সাথে দুই ছিলেন দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুন উদীয়মান যুবলীগ নেতা বেলাল উদ্দিন সোহেলসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *