তানোরে ফের বন্ধ কৃষি জমিতে করা হচ্ছে পুকুর খনন 

কৃষি রাজশাহী লীড
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে কৃষি ফসলী  জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করে দিয়েছিলেন ইউএনও। সোমবার দুপুরের আগে ইউএনওর নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্ধ করে দেন পুকুর খনন এবং ভেকু ডাইভারদের সতর্ক করে দিয়ে বলে পুনরায় খনন হলে আইনগত ব্যবস্থা । কিন্তু সোমবার রাত থেকেই পুনরায় আবারো পুকুর খনন করছেন কেশরহাট এলাকার সাফিউল ও করিম। তানোর টু চৌবাড়িয়া রাস্তার কামারগাঁ ইউপির লবাতলা ব্রীজের উত্তর পশ্চিমে চারটির মত ভেকু মেশিন দিয়ে সবাই কে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে দাপটের সাথে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করছেন কেশরহাট এলাকার সাফিউল ও করিম। বন্ধের পর পুনরায় খনন করায় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশাসনের  এমন আচরণে কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র উত্তেজনা। ফলে কৃষি জমি রক্ষার্থে প্রশাসনের দৃড় পদক্ষেপ চান কৃষকরা।
স্হানীয়রা জানান, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির লবাতলা ব্রীজের উত্তর পশ্চিমে বিশাল কৃষি জমির মাঠ। সে সব জমিতে দু ফসলী আবার তিন ফসলী ধান চাষ হয়। তবে বোরো ধান বাম্পার চাষও হয় যেমন ফলনও হয় তেমন। বোরো রোপনের আগে সরিষা সহ নানা জাতের সবজিও চাষ হয়। সেই চাষের জমি ধ্বংস করে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকার পুকুর দস্যু ক্ষমতা সীন দলের প্রভাবশালী করিম ও সাফিউল জমি লীজ নিয়ে পুকুর খনন করছেন। কয়েক বছর আগে দুটি এর পর থেকে প্রতি বছর পুকুর খনন করছেন। আবার কোন দরিদ্র প্রান্তিক কৃষক শেষ সম্বল জমি দিতে না চাইলেও করিম সাফিউল বাহিনীর ভয়ে কিছুই বলতে পারছেনা। তারা টাকা দিয়ে ওই এলাকার বখাটে মাদক সেবিদের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড করছেন বলে একাধিক ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু কৃষক শ্রমিকরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে করিম ও সাফিউল বাহিনীর লোকজন লাঠি সোটা নিয়ে বসে থাকছেন। কেউ কোন কথা বললেই তাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। অথচ গত বার তারা পুকুর খননের সময় স্হানীয় কৃষকরা ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এবার তারাই বাহিনী হয়ে কাজ করছেন। শুধু তাই না হাতিশাইল মোড়ে টিনের ঘর করে থাকছেন। আর তাদেরকে সার্বক্ষণিক পাহারা দিয়ে রাখছেন স্হানীয়রা। প্রশাসন থেকে শুরু করে মিডিয়ার কর্মীরাও আসলে তাদের নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সোমবারের ঘটনায় এক প্রত্যাক্ষদর্শী বলেন, পুলিশের পিকআপ আসার আগেই পালিয়ে যায় মুল হোতারা। ভেকুর ডাইভাররা হাতিশাইল মোড়ে টিনের ঘরের ভিতর শুয়ে আছে। কিন্তু বাহিরে তালা মারা ছিল। পুলিশের লোকজন খুজতে খুজতে তিন জন হেলপারকে ধরে পিকআপে তুলে। আরো লোক কোথাই বললে তারা পুলিশ কে বলে টিনের ঘরে। যেয়ে দেখে তালা মারা ডেকেও খুলেনা। পুলিশ ডাকছে তারপরও খুলছে না। তাহলে বুঝতে হবে। তাদেরকে বের করেছে, কিন্তু তালা খুলতে পারেনি। সবাই কে গাড়ীতে তোলার পর অদৃশ্য ফোন আসে। তারপর নামিয়ে ছবি তুলে ভেকু মেশিন নিয়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। পুনরায় খনন করলে জেল। কিন্তু ভেকু মেশিন নিয়ে যাওয়া দুরে থাক, ওই রাত থেকেই শুরু হয় খনন। কৃষকরা প্রশাসন কে জানালেও রহস্য জনক কারনে নিরব ভূমিকায়।
গত সোমবার বিকেলের দিকে উপজেলায় আসেন সাংসদ ফারুক চৌধুরী। ওই সময় ছিলেন ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কামারগাঁ ইউপির চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উঠে আসে পুকুর খননের বিষয়াদি। সাংসদ প্রশাসন কে কঠোর নির্দেশ দেন কৃষি জমিতে কোনভাবেই পুকুর খনন করা যাবে না এবং রাস্তা নষ্ট করা যাবে না। যারাই এসব করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নিতে নির্দেশ দেন।
কারন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কৃষি জমিতে পুকুর না। অনেক জায়গার বিল পুকুরে রুপান্তর হয়েছে। আর এক টুকরো কৃষি জমি নষ্ট না। এজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের কথা বলেন তিনি।
ভূমি আইন থেকে শুরু করে সকল ধরনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সদ্য বোরো ধান উত্তোলন করা কৃষি জমিতে পুকুর খনন করছেন করিম ও সাফিউল গং।
অভিযোগ রয়েছে, মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন বিলের কৃষি জমিতে সাফিউল করিম গংরা একাধারে পুকুর খনন করছেন। এমন অবস্থা ওই উপজেলায় পুকুর খননের মত জমি নেই।
মুলত এজন্যই তারা কামারগাঁ ইউপির লবাতলা ব্রীজের উত্তর পশ্চিম দিকের কৃষি জমির বিলকে টার্গেট করেছেন। তারা পুরো বিলকে পুকুরে রুপান্তর করবেন। হবেও তাই, প্রতি বছর বাড়তে আছে পুকুর।
হাতিশাইল গ্রামের কৃষক জরিব বলেন, জীবন জীবিকার সম্বল জমি রয়েছে এখানে। তারা কেউ পুকুর খনন হোক সেটা চায়না। কারন জমি হারিয়ে গেলে বাঁচবে কিভাবে। এসব জমির ধান সারা বছরের রোজগার। সেটুকু কেড়ে নিলে দুঃশ্চিনায় মারা যাবে। অনেক কৃষক আছে দুবেলা জমিতেই পড়ে থাকে, তার সবকিছুই জমি। কিছু শ্রমিক জানান  এসব জমিতে কাজ করে আমাদের সংসার চলে। আমরা ছোট থেকেই কৃষি কাজ করে অভ্যাস্হ, পুকুর হয়ে গেলে কাজও থাকবেনা, বেঁচে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়বে। এই এলাকার অনেক মহিলাসহ চাষীরা গরু ছাগল পালন করে থাকে। আর এসব জমি থেকে ধান তোলার সাথে সাথেই পুরো মাঠে গরু ছাগল ঘাস খায়। পুকুর খনন হচ্ছে এজন্য অনেকে গরু ছাগল বিক্রি করে দিয়েছেন।
 তারা আরো জানান, এসব জমিতে পুকুর খনন হলে ৭/৮ টি গ্রাম পানি বন্ধি হয়ে পড়বে। সুতরাং দ্রুত পুকুর বন্ধ না হলে বিপদের শেষ থাকবে না। আর যেখানে প্রশাসন বন্ধ করল, আবার চালু হচ্ছে, এসব কি, প্রশাসন কি সাফিউল করিমের কাছে জিম্মি। আবার কামারগাঁ ইউপি
চেয়ারম্যানের ভুমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সাফিউল জানান, টাকা থাকলে সব কিছুই সম্ভব বলে দম্ভোক্তি প্রকাশ করেন।
ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, পুকুর খননের বিরুদ্ধে আমাদের কিছুই করনীয় নাই।
নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, শুনছি খনন করছে, মঙ্গলবার বাহিরে ছিলাম। যে কোন সময় অভিযান পরিচালনা করে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
স্ব.বা/বা
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *