রাজশাহীতে পশু বেচাকেনা কম, ব্যাপারী বেশি

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে পশুর হাট বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার গবাদি পশুর দাম একটু চড়া হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ কম লক্ষ্য করা গেছে। পশুর দাম চড়াও হওয়ায় ব্যাপারী বেশি হলেও বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অনেকেই পশু ও ক্রেতা বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ভাবছেন।

বুধবার (৬ জুলাই) উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুরহাট ঘুরে দেখা গেছে, হাঁক-ডাকে জমে উঠেছে হাট প্রাঙ্গন। ছোট-বড় ও মাঝারি ধরবেনর পশুর সমাহারে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হাটে পশুর সরবরাহ প্রচুর তবে অন্য বছরগুলোর চেয়ে ক্রেতা কম বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, গতবছরের তুলনায় ভালো দামে গরু-মহিষ বিক্রির প্রত্যাশা রয়েছে। তবে ক্রেতা কম। দামও বলছে কম। সামনের কয়েকদিন ক্রেতা সমাগম বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা।

রাজশাহী সিটি হাটে কোরবানির পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে এমন চিত্র দেখা গেছে।

তানোরের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন ৫টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি গ্রাম থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। তার ৪ মণের গরুর দাম ক্রেতারা বলছেন ৯০ হাজার এবং ৫ মণের গরুর দাম বলছে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এই ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে, তার কেনা দামের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা কম দাম হাঁকছেন ক্রেতারা।

এ হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছিলেন বাগমারার সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে এসে হাটে বিক্রি করেন। বাগমারা উপজেলার হাটমাধনগর, মীরপুর, বাঁধের হাটসহ কয়েকটি হাটে পশু হাতে দেখলেই ইজারা দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। করোনার ঝুঁকি বাড়ছে, সচেতনতা বৃদ্ধির কোন লক্ষণ নেই।

তিনি আরো বলেন, ইজারাদার ঈদের হাট জমজমাট থাকলে প্রতিটা গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। এবারও সেই প্রত্যাশা নিয়ে গরু কিনেছেন। হাটে বিক্রেতা প্রচুর। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। এখন হাট জমজমাটভাব থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি জমেনি।

সোহরাব হোসেন নামের এক গরুর ব্যাপারী জানান, গতবছর গরুর দাম বেশি ছিল। এ বছর গরু বেশি, ব্যাপারী বেশি। চিন্তার বিষয় কৃষকরা দাম পাবে কিনা।

দারুশা থেকে আসা ফরিদপুর রহমান নামের এক ক্রেতা জানান, ৫ মণ ওজনের একটি গরু কিনতে তারা এসেছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। হাটের শুরুর দিকে তারা প্রতিবার আসেন। কারণ প্রত্যাশিত দামের মধ্যে শেষের দিকে হাটে গরু পাওয়া যায় না। এবার গরুর দাম চড়া। মহিষেও স্বস্তি নাই। হাট-ঘুরে পছন্দ মতো গরু কিনবেন।

রাজশাহী সিটি হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ফারুক হোসেন ডাবলু জানান, হাটে পশুর আমদানি ভালো আছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন। করোনার কারণে গতবার বাইরে থেকে ব্যাপারিরা সেভাবে আসতে পারেন নি। এবার সবাই আসছেন। হাক-ডাক দিচ্ছেন। বেচা-বিক্রি শুরুও হয়েছে। কিন্তু যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। আজ থেকে প্রতিদিন হাট হবে। হয়তো এ কদিন বেশ জমজমাট কেনাবেচা হবে।

জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। রাজশাহী জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২ টি। ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারির কাছে আছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫ টি ভেড়া ও ৩ হাজার ২১১টি মহিষ। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি আছে রাজশাহীর ৯ উপজেলায়।

গত বছর রাজশাহীতে কোরবানির জন্য ৩ লাখ ৮২ হাজার পশু পালন করা হয়েছিল। আর কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার পশু। হিসাব অনুযায়ী গত বছরের প্রায় ৭৩ হাজার কোরবানির পশু অবিক্রিত রয়েছে। সেই পশুর একটি বড় অংশ এবারের কোরবানির পশুর সংখ্যায় যোগ হয়েছে। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এবারও পশু অবিক্রিত থাকার শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বুধবারের হাট পর্যবেক্ষণে করে আমরা বলতে পারি, পশুর সরবরাহ বেশি। ক্রেতারা আসছেন। বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। ঈদের দুইদিন আগে থেকে কেনা-বেচা পুরোপুরি জমে উঠবে। চাহিদার তুলনায় গবাদি পশুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় গতবারের মতো এবারও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশু অবিক্রিত থাকতে পারে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *