বাঘা প্রতিনিধি: বয়স-শ্রেণির সীমারেখা পেরিয়ে নবীণ-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা দিনভর মুখর করে তুললেন বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ। বহুদিন না দেখা কৈশোরের বন্ধুকে পেয়ে হাসি-ঠাট্টা,স্মৃতিচারণা আর গল্পগুজবের আড্ডায় কাটালেন সারাদিন। মাতলেন প্রাণের উচ্ছলতায়। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও মধ্যাহৃভোজ আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘এসো মিলি প্রাণের টানে,মিলবো হেসে ঐক্যতানে’ এই স্লোগান ছিল নবীণ-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের ঈদ পূর্ববর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে ছুটে এসেছিলেন দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাও ছিল বেশ উচ্ছ¡সিত।
শনিবার (৯জুলাই) ঈদের আগের দিন বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। সন্মাননা জানানো হয় শিক্ষক-কর্মচারিদের।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিঞার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন,সামজির আহমেদ,মোস্তাফিজুর রহমান, আতিকুল ইসলাম,রাসেল কবীর,মাহাবুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী, কবি হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায়‘পুনর্মিলনি-২০২২,মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়’ নামের একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হয়।
মিলন মেলার প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গল্পগুজবের সঙ্গে সেলফি-ছবি তুলে মুহূর্তটা স্মরণীয় করে রাখছেন। কাছাকাছি হতেই একে অন্যকে জড়িয়ে ভুলে যেতে চেয়েছেন প্রিয় বন্ধুর দীর্ঘদিনের না পাওয়া আলিঙ্গন সুখ। দীর্ঘদিনের অসাক্ষাতের পর দেখা হওয়ায় কেউ কেউ নিজের ছেলে মেয়েদের সাফল্যের বর্ণনা দিয়েছেন বন্ধুকে।
১৯৮২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ হাফিজুর রহমান। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘অনেক বছর হলো স্কুল ছেড়ে গিয়েছি। এই এলাকায় আসলেও স্কুলে আর আসা হয় না। তবে পুনর্মিলনি-২০২২ উপলক্ষে এসে খুব ভালো লাগছে। অনেক বন্ধুবান্ধবকে একসঙ্গে পেয়েছি। আরও একবার জমিয়ে আড্ডা দেওয়া হলো।’
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী চাপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক তানজিলা বেগম বলেন, ‘স্কুল ছেড়ে গিয়েছি ১৫ বছর আগে। এই স্কুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষক হতে পেরেছি। আমার ভালোবাসার ও আবেগের স্কুল প্রাঙ্গণে তারার যে মেলা বসেছে,তা দেখে খুবই ভালো লাগছে।’
পুনর্মিলনী-২০২২ উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক ও ডেপুটি কমিশনার, বাংলাদেশ কাষ্টমস আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ স্কুলটি বহু ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে আজ ৭৩ বছরে পা রেখেছে। এ স্কুল আমাদের বিরাট স্মৃতি।
পুনর্মিলনি উদ্যাপন কমিটির যুগ্ন আহবায়ক ও আড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, কত দুরন্তপনা যে করেছি, আজও চোখের সামনে ভাসে। এই স্মৃতিগুলো আজীবনের জমানো সুখ। এই আয়োজনটাও স্মৃতিতে অমলিন থাকবে।’
২০০৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাঃ মিনারুল ইসললাম তার অনুভূতির কথা জানিয়ে বলেন, ‘এই স্কুল থেকে অনেক বড় বড় মানুষ তৈরি হয়েছে। অনেকের নাম শুনেছি, কিন্তু দেখা হয়নি। ২০০৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী হেড অব মার্কেটিং,আকিজ গ্রুপ, আতিকুর রহমান বলেন, অনেকের দেখা পেয়েছি। তাদের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ভালো কিছু করতে হবে এ রকম একটা তাগিদ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থী নুসরাত তানজিদ গান গেয়ে গেয়ে বললেন, ‘পুরণো দিনের কথা সেকি ভোলা যায়, চোখের দেখা, প্রানের দেখা সেকি ভোলা যায়’। আবেগ,অনুভ’তি ব্যক্ত করে নুরুজ্জামান ভান্ডারি তার রচিত গানের মাঝে বলেন, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ শিক্ষা বিদ্যাপীঠ মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। এখান থেকে শিক্ষা লাভ করে কেউ ডাক্তার,কেউ ইঞ্জিনিয়ার,কেউ শিক্ষক,কেউ জজ ব্যারিষ্টার হয়েছেন। প্রয়াত ও জীবিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালোবাসা ও মাগফেরাত কামনা করেন তার গানের সুরে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান (১৯৬৯ ব্যাচ), ডক্টর জহুরুল ইসলাম, বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক-,শিক্ষক সাইফুল ইসলাম,উপসহকারি কৃষি অফিসার মুস্তাফিজুর হমান,শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ,চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অসিস কুমার সরকার,২০২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী যমজ দুই ভাই সাকলায়েন রাজন ও সাকলায়েন সাজন প্রমুখ।
স্মৃতিচারণ করে বক্তব্যকালে প্রতিষ্ঠাতার নাতি লিটন কবিরাজ বলেন,তার দাদা খয়েরুল্লাহ কবিরাজ স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেছেন। তার দান করা জমিতেই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন শমসের আলী। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন, প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল গনিসহ শিক্ষক-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন। ‘
আয়োজকরা জানান, প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠের পুনর্মিলনীর আয়োজনে ১৯৪৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সকল প্রাক্তন শিক্ষীর্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সদস্যভুক্ত হয়ে মিলন মেলায় অংশ নেয় প্রায় ৫শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
স্ব.বা/ম